বেড়িবাঁধ কেটে তোলা হচ্ছে লোনাপানি

আবুল কাসেম, সাতক্ষীরা
প্রকাশ : ১১ জানুয়ারি ২০২৪, ০৯: ৩১

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার উপকূলীয় এলাকার বিভিন্ন চিংড়ির ঘেরে লোনাপানি তোলা হচ্ছে বেড়িবাঁধ কেটে। বেড়িবাঁধের এপাশ-ওপাশ পাইপ ঢুকিয়ে নদী থেকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় আনা হয় এসব পানি। কিন্তু অনেক স্থানে জোয়ারের তোড়ে বাঁধ ভেঙে লোনাপানি ঢুকে পড়ছে লোকালয়ে। এতে ব্যাহত হচ্ছে কৃষিকাজ।

সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র বলেছে, উপকূলের ছয়টি ইউনিয়নে আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ কমপক্ষে ১০ হাজার হেক্টর। সরেজমিনে দেখা গেছে, শ্যামনগরের উপকূলীয় এলাকায় নদী থেকে ঘেরে লোনাপানি ঢোকানোর ব্যবস্থা রয়েছে কমপক্ষে ২০টি জায়গায়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ভেটখালী, কৈখালী, রমজাননগর, বুড়িগোয়ালিনী, মুন্সিগঞ্জ, গাবুরা ও পদ্মপুকুর এলাকা। সুন্দরবঘেঁষা মাদার, কালিন্দী ও খোলপেটুয়া নদীর বেড়িবাঁধের ভেতর পাইপ ঢুকিয়ে লোনাপানি ঢোকানো হচ্ছে প্রতিনিয়ত। নদী থেকে পাইপের মাধ্যমে ঘেরে পানি আনার ওই প্রক্রিয়াকে স্থানীয় বলেন ‘বাক্সকল’। এই প্রক্রিয়ায় পানির প্রবাহ ঠিক রাখার জন্য নদীর পাশে পাইপের মুখে বসানো হয় বিশেষ পাটাতন। এর মাধ্যমে পানির প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লোনাপানির প্রভাবে কমপক্ষে ১০ হাজার হেক্টর জমির আবাদ ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। রাস্তা কেটে পাইপ ঢোকানোয় সড়কগুলোও বেহাল হয়ে পড়েছে। মিঠাপানির পুকুর ভরে যাচ্ছে লোনাপানিতে। সংকট দেখা দিয়েছে সুপেয় পানিরও। শুধু তা-ই নয়, সুন্দরবনসংলগ্ন মাদার নদের ভেটখালী পয়েন্টের বেড়িবাঁধের ভেতর পাইপ দিয়ে লোনাপানির প্রবাহে প্লাবিত হচ্ছে পারিবারিক কবরস্থান, ঘরবাড়িসহ অন্যান্য স্থাপনা।

কৈখালী এলাকার কৃষিজীবী সেলিম সরদার বলেন, তিনি পাঁচ বিঘা জমিতে আমন (রোপা আমন) ধান লাগিয়েছিলেন। কিন্তু লোনাপানিতে ফলন ভালো হয়নি। পাঁচ বিঘা জমিতে ১০ মণ ধানও পাবেন কি না, সন্দেহ তাঁর।

বেড়িবাঁধে পাইপ ঢুকিয়ে ঘেরে পানি আনাবেড়িবাঁধে পাইপ ঢুকিয়ে ঘেরে পানি আনার সঙ্গে জড়িতরা এলাকায় প্রভাবশালী হওয়ায় তাঁদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস করে না।

স্থানীয় সূত্র বলেছে, ভেটখালী থেকে কৈখালী পর্যন্ত কমপক্ষে পাঁচটি স্থানে বাক্সকল বসানোর সঙ্গে স্থানীয় আরাব আলী, আব্দুর রহমান ও রেজাউল ইসলাম জড়িত। অভিযোগের বিষয়ে জানতে ভেটখালী এলাকায় বসানো বাক্সকলের মালিক আরাব আলীর মোবাইল ফোনে কল করা হয়। কিন্তু সাংবাদিক পরিচয় দিতেই তিনি ‘ব্যস্ত আছি’ বলে লাইন কেটে দেন।

কৈখালী এলাকার দুটি বাক্সকলের মালিক রেজাউল ইসলাম বলেন, বাক্সকলের ভালো-মন্দ দুটি দিকই আছে। এলাকায় ঘের করতে গেলে লোনাপানি লাগবে। সে ক্ষেত্রে পাইপ দিয়ে পানি তোলা ছাড়া বিকল্প কিছু নেই।

তবে বাঁধ কেটে ঘেরে পানি নেওয়ার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সালাউদ্দীন। তিনি বলেন, ‘বাঁধ কেটে ঘেরে লোনাপানি ঢোকানোর অপসংস্কৃতি গেড়ে বসেছে শ্যামনগরে। এতে বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এগুলো রুখতে প্রথমত দরকার স্থানীয় জনসচেতনতা। ইতিমধ্যে জড়িতদের মৌখিকভাবে নিষেধ করা হয়েছে। এতে কাজ না হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত