ব্রহ্মপুত্র গিলে খাচ্ছে বসতভিটা

ফুলছড়ি (গাইবান্ধা) ও কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৩ জুলাই ২০২২, ১৩: ৪৫

‘অনেক আগেই জমিজমা নদীত গেছে। কামলা-কিষান দিয়ে ছোলগুলাক কোনোমতে পালতেছি। এখন বাড়িঘর ভাঙতে ধরছে। হামার বাড়ি-ভিটা ভাঙি গেলে কোনটে যামো, আল্লাই জানে।’

ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে নতুন করে ভাঙন দেখে উদ্বিগ্ন কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার দক্ষিণ উড়িয়া গ্রামের রেজাউল মিয়া।

উপজেলা ত্রাণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবারের বন্যায় ফুলছড়িতে ৫৬০টি পরিবার নদীভাঙনের শিকার হয়ে বসতভিটা হারিয়েছে। প্রথম দফার বন্যায় ভাঙনের পর আবার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ভাঙন দেখা দিয়েছে।

ফজলুপুর ইউনিয়নের কাউয়াবাঁধা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতল ভবনটি গত শুক্রবার বিকেলে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এ ছাড়া প্রতিদিনই বসতভিটাসহ ফসলি জমি নদীর পেটে চলে যাচ্ছে।

ফজলুপুর ইউনিয়নের খাটিয়ামারী, কাউয়াবাঁধা, ফুলছড়ি ইউনিয়নের পিপুলিয়া, বাগবাড়ী, দেলুয়াবাড়ী, উড়িয়া ইউনিয়নের বানিয়াপাড়া, মধ্য উড়িয়া ও দক্ষিণ উড়িয়া গ্রামে ভাঙনের আঘাত সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে।

দক্ষিণ উড়িয়া গ্রামের ২৬টি পরিবার নদীতে বসতভিটা হারিয়েছে। হুমকির মুখে রয়েছে শত শত পরিবার। বসতভিটা হারানো মানুষগুলো উড়িয়া বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধসহ উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। ভাঙনের তীব্রতা বৃদ্ধি পেলে গুনভরি দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয়সহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা হুমকির মুখে পড়বে।

যোগাযোগ করা হলে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হান বলেন, ভাঙনকবলিত এলাকাগুলো সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে স্থায়ী ব্যবস্থা না হলেও আপাতত অস্থায়ীভাবে জিও ব্যাগ ফেলার ব্যবস্থা করা হবে।
কুড়িগ্রামে ভাঙন: সদর উপজেলার রলাকাটার চরে ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে গত এক মাসে অন্তত ৩৫টি পরিবার বসতভিটা হারিয়েছে। স্থানান্তরিত হওয়ার সুযোগ না থাকায় অনেকে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে আছেন। কয়েকটি পরিবার স্থানীয় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।

রলাকাটার চরের বাসিন্দা জায়েদা বেগম বলেন, ‘বাড়িঘর সউগ গ্যাছে বাবা। মাইয়া দুইটারে নিয়া মাইনষের বাড়িত আছি। ঘর তুলমু সেই জায়গাও নাই। খুব কষ্টে আছি। আমাগো দেখার কেউ নাই।’

জায়েদার মতো ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে বসতভিটা হারিয়েছেন ওই গ্রামের শমসের আলী, হানিফ, খলিলুরসহ অনেকে। নদীতে ভিটা হারানো মানুষের অভিযোগ, খাদ্যসহায়তা ছাড়া তাঁদের পুনর্বাসনে এখন পর্যন্ত কোনো সাহায্য জোটেনি।

এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বন্যা শুরু হইছে থাকি ভাঙন চলতাছে। রলাকাটার চরে ত্রিশের ওপরে পরিবার ভিটা হারাইছে। গোয়াইলপুরির চরে অন্তত ১৫ ভিটা ব্রহ্মপুত্রের প্যাটে গেছে। আমার নিজের বাড়িও সরান লাগবে। এতোগুলা পরিবার ক্যামনে বাড়িঘর করব জানি না। সরকারি কোনো সাহায্য-সহযোগিতাও মেলে নাই।’

জেলা প্রশাসনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখার তথ্যমতে, সাম্প্রতিক বন্যায় জেলার দেড় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ে। তাঁদের দুই দফায় সরকারিভাবে ৫০৩ মেট্রিক টন চাল দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সাড়ে ৪২ লাখ টাকা উপবরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তবে নদীভাঙনে বাস্তুহারা পরিবারের সংখ্যা নিয়ে কোনো প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত