নমুনা আর বাস্তবের ফারাক

রাশেদুজ্জামান, মেহেরপুর
প্রকাশ : ১৮ মে ২০২২, ০৭: ২৮
আপডেট : ১৮ মে ২০২২, ১৭: ০৮

স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার গ্রাম পুলিশ সদস্যদের জন্য কেনা হয়েছিল বাইসাইকেল। গতকাল মঙ্গলবার ছিল তা বিতরণের কথা। কিন্তু সেগুলো নিম্নমানের দাবি করে তিন ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশ সদস্যরা না নিয়েই ফিরে যান। কর্তৃপক্ষ বলছে, সাইকেল নিম্নমানের হলে ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জেলা শহরের অফিসার্স ক্লাবে এ সাইকেল বিতরণের কথা ছিল। সে অনুযায়ী সাইকেল নিতে সকাল থেকে জড়ো হন মুজিবনগর উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশ সদস্যরা। সেখানে শুধু দারিয়াপুর ইউনিয়নের আট গ্রাম পুলিশ সাইকেল নেন। বাকি তিনটি ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশ সদস্যরা সাইকেল না নিয়ে চলে যান। তাঁদের অভিযোগ, সাইকেলের গায়ে হিরো জেট লেখা থাকলে অন্যান্য যন্ত্রাংশগুলো ভিন্ন ভিন্ন কোম্পানির।

স্থানীয় সরকার বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গ্রাম পুলিশের বাইসাইকেল, পোশাক, নারীদের শাড়ি, জুতা, বেল্ট, মাথার ক্যাপসহ বিভিন্ন উপকরণ সরবরাহের লক্ষ্যে ৩৮ লাখ ৪৩ হাজার ৭৫০ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর মধ্যে ১৭৫টি সাইকেলের ব্যয় ধরা হয় ১৮ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ টাকা। প্রতিটি সাইকেলের মূল্য ধরা হয় সাড়ে ১০ হাজার টাকা। কাজটি পায় ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ঝুমা এন্টারপ্রাইজ। কাজ পাওয়ার আগে নমুনা হিসেবে একটি বাইসাইকেল দেওয়া হয়। সেখানে লেখা রয়েছে হিরো জেট কোম্পানির নাম।

মুজিবনগর উপজেলার বাগোয়ান ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সাইকেলে নিতে এসে দেখি অতি নিম্নমানের। বাড়িতে চড়ে যাওয়া যাবে কি না সংশয় আছে। আমাদের দেওয়ার কথা ছিল হিরো জেট সাইকেল। কিন্তু সাইকেলে হ্যান্ডেল, টায়ার থেকে শুরু করে এক একটি যন্ত্রাংশ এক এক কোম্পানির। এ জন্য আমি এ সাইকেল নিইনি।’

একই কথা জানালেন আরেক গ্রাম পুলিশ সদস্য নূরে আলম। তিনি বলেন, ‘জরুরি কাজে এসব সাইকেল আমাদের দিচ্ছে সরকার। যা হওয়া দরকার উন্নতমানের। অথচ সাইকেল নিতে এসে দেখি সাইকেলগুলো নিম্নমানের। হিরো জেট সাইকেল হলে সব যন্ত্রাংশেই হিরো নাম লেখা থাকবে। অথচ একটি একটি যন্ত্রাংশে এক একটি কোম্পানির হয় কি করে, এ সাইকেল নিয়ে গিয়ে আমরা কত দিন চালাতে পারব?’

এদিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, ঠিকাদারের সরবরাহের আগের দেওয়া সাইকেলের অবস্থা একই। সাইকেল হিরো জেট লেখা থাকলেও এক একটি যন্ত্রাংশ এক এক কোম্পানির।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সাইকেল দোকানের মালিক বলেন, ‘আমরা হিরো জেট নামে যে সাইকেল বিক্রি করে থাকি তার পুরো জায়গায় হিরো জেট লেখা থাকে। অরিজিনাল হলে অন্যান্য যন্ত্রাংশে অন্য কোম্পানির হওয়া সুযোগ নেই। বিশেষ করে হিরো জেট সাইকেলের টায়ারে লেখা থাকবে র‍্যালসন। আর রিম, হ্যান্ডেল থেকে শুরু করে সমস্ত জায়গায় লেখা থাকবে হিরো জেট।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ঝুমা এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপক খাইরল ইসলাম বলেন, ‘আমরাতো আগেই হিরো জেট সাইকেলের একটি নমুনা কর্তৃপক্ষকে সরবরাহ করেছি। সেই মোতাবেক এ সাইকেলগুলো সরবরাহ করছি। এখানে কোনো দুই নম্বরির আশ্রয় নিইনি।’ তবে এক এক যন্ত্রাংশ এক এক কোম্পানির কেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এ কোম্পানির সাইকেল এমনই হয়।’

স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এ দরপত্রের একটি কমিটি রয়েছে। এ কমিটিতে গ্রাম পুলিশের একজন সদস্যও রয়েছেন। তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তিনটি কোম্পানির সাইকেল সরবরাহ করে। এর মধ্যে থেকে হিরো জেট সাইকেলটি কমিটির পছন্দ হয়। সে মোতাবেক কাজটি দেওয়া হয়েছিল ঝুমা এন্টারপ্রাইজকে। স্যাম্পলের সঙ্গে সরবরাহকৃত সাইকেলর মিল না থাকলে অথবা নিম্নমানের হলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত