রাশেদ নিজাম ও রবিউল ইসলাম, অভয়নগর (যশোর) থেকে
‘ধুমোয় দমডা আইটকে যায়, চোক-টোক জ্বইলে যায়। শ্বাসের কষ্ট অয়।’ সাংবাদিক দেখে অনেকখানি সাহস নিয়ে এ কথা বলেন যশোরের অভয়নগর উপজেলার সিদ্ধিপাশা ইউনিয়নের পলি দাস (৩৮)। তাঁর বাড়ির অবস্থান যদিও খুলনা জেলার ফুলতলার কাছে। পলির সঙ্গে যখন কথা হয় তখন তাঁর বাড়ি ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন। দুই ছেলের মা হাতের কাজ করতে করতেই কষ্টের কথা তুলে ধরে বলেন, ‘বিয়ে হয়ি যখন আসিলাম তখন এগুলো ছেল না। সাত-আট বছর ধরি ঘরে থাকা কষ্ট হয়ি যাচ্ছে, পোলাপানের বেশি কষ্ট হই।’
আলোচনার বিষয় ওই এলাকায় গড়ে ওঠা কাঠকয়লার অবৈধ চুল্লি, যাতে কাঠ পুড়িয়ে কয়লা বানানো হয়। পলিদের বাসার দুই পাশেই এমন কয়েকটি চুল্লির অবস্থান। একটির মালিক সিদ্ধিপাশা ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য জিয়া মোল্লা। আরেকটি তাঁর ছোট ভাই নুরু মোল্লার।
সড়ক, নৌপথ ও রেল যোগাযোগব্যবস্থার কারণে ব্যবসায়িক কেন্দ্র হয়ে উঠেছে যশোরের অভয়নগর। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বেশি লাভের আশায় তৎপর হয়ে উঠেছেন কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। তাঁদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন স্থানীয় অনেক জনপ্রতিনিধিও। ভৈরব নদ ঘেঁষে গড়ে উঠেছে এসব চুল্লি।
গত মঙ্গলবার পুরো সিদ্ধিপাশা ঘুরে দেখা গেল মোট ১০৮টি চুল্লির অবস্থান। সবচেয়ে বেশি, ১৪টি চুল্লি স্থাপন করেছেন আমতলার কবির শেখ। সরকার অবৈধ ঘোষণার পরও কেন কাঠ পুড়িয়ে কয়লা করছেন, তা জানতে চাইলে কবির শেখ ফোনে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে মামলা কইরে দেন, নইলে ভেইঙ্গে দ্যান।’
এক চুল্লিতে একবারেই পোড়ে ১২০ মণ কাঠ: পলি দাসের বাড়িলাগোয়া কয়েকটি চুল্লিতে দেদার কাঠ পোড়াচ্ছিলেন শ্রমিকেরা। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, একেকটি চুল্লিতে প্রতিবার প্রায় ১২০ মণ কাঠ পোড়ানো হয়। সে হিসাবে শুধু জিয়া মোল্লার মালিকানায় থাকা ১১টি চুল্লিতে প্রতিদিন ১ হাজার ৩১০ মণ কয়লা বানানো হয়। সামনেই প্রচুর গাছ কেটে ফেলে রাখা। কাঠের আরও দুটি চালান বোঝাই ট্রলার দেখা যায় নদীতে, কাঠ নামানোর অপেক্ষায়।
কয়েকজন শ্রমিক জানান, মূলত ব্যাটারির সিসা গলানো, বড় হোটেলে কাবাব তৈরি, ইটভাটাসহ বিভিন্ন কাজে যেখানে এসব কাঠকয়লা ব্যবহার হয়। ১১ চুল্লির মালিক ইউপি সদস্য জিয়া মোল্লা চিকিৎসার জন্য ভারতে গেছেন। ম্যানেজার তৌকির সপ্তাহে শ্রমিকদের পারিশ্রমিকের টাকা বুঝিয়ে দেন।
জিয়ার স্ত্রীও ফোনে জানালেন, তাঁর স্বামী ভারতে গেছেন। মোবাইল ফোন রেখে গেছেন বাসায়। ম্যানেজার তৌকির বলেন, তিনি খুলনার শিরোমনি এলাকায় জিয়া মেম্বারের ব্যাটারি ফ্যাক্টরি দেখাশোনা করেন। চুল্লির বিষয়ে কিছু জানেন না।
‘রাস্তায় হাঁটলি নিশ্বাস নিতি কষ্ট হয়’
ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কাশেম অবশ্য নিজের বিরোধী অবস্থান তুলে ধরলেন। তিনি বলেন, এলাকার মানুষ চুল্লির ধোঁয়ায় সমস্যায় পড়ছে, পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। এ নিয়ে তিনি প্রশাসনকে বারবার জানিয়েছেন বলে জানান। এর আগে উচ্ছেদের সময়ও তিনি সর্বাত্মক সহায়তা করেছেন। নিজ এলাকার মেম্বারের আবারও চুল্লি তৈরির বিষয়ে তিনি প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
সোনাতলা বাজারে চায়ের দোকানে কথা হয় দুধ ব্যবসায়ী জাকির মোল্লার সঙ্গে। ক্ষোভ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নালিশ করার জায়গা নেই। সহ্য করি নিতে হচ্ছে। রাস্তায় হাঁটলি নিশ্বাস নিতি কষ্ট হয়। আপনাকে বরজ থেকে দুটো পান আনি দেখাতে পারলে বুইঝতেন, ধুমে ওগুলোতে কালি পরি গেইছে।’
ভেঙে দেওয়ার পর আবার চালু
সবচেয়ে বড় চুল্লির মালিক রকসেদ সরদারের দাবি, দুই মাস আগে উপজেলা প্রশাসন চুল্লি ভেঙে দিয়েছিল। তখন যে কাঠগুলো ছিল, তা দিয়ে কয়লা বানাতে আবারও চুল্লি তৈরি করেছেন। কয়েক দিন পরে নিজেই ভেঙে দেবেন। এতে যে পরিবেশ ও মানুষের ক্ষতি হয়, তা জানেন কি না জানতে চাইলে রকসেদ সরদার বলেন, ‘আগে তো ক্ষতি হতো না। ইদানীং খুব হচ্ছে।’
পরিবেশ অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক মো. ইকবাল হোসেন (উপসচিব) জানান, কাঠ পোড়ালে কার্বন ডাই-অক্সাইড তৈরি হয়। ফ্লাই অ্যাশ তৈরি হয়, যা মানুষের শ্বাসকষ্ট তৈরি করে। পরিবেশেও মারাত্মক প্রভাব ফেলে। এমনকি যারা কাজ করেন, তাঁদেরও দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক সমস্যা হবে। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘যশোরের উপপরিচালককে নিয়ে কিছুদিন আগেও ওখানে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছে। দ্রুতই আবারও সব কাঠকয়লার চুল্লি উচ্ছেদ করব।’
নওয়াপাড়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মেজবাহ উদ্দীন বলেন, দুই মাসের ভেতরে ওই এলাকায় ১০৪টি চুল্লি তাঁরা ভেঙে দিয়েছিলেন। নতুন করে তৈরি করার খবর জেনেছেন। দ্রুতই ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।
‘ধুমোয় দমডা আইটকে যায়, চোক-টোক জ্বইলে যায়। শ্বাসের কষ্ট অয়।’ সাংবাদিক দেখে অনেকখানি সাহস নিয়ে এ কথা বলেন যশোরের অভয়নগর উপজেলার সিদ্ধিপাশা ইউনিয়নের পলি দাস (৩৮)। তাঁর বাড়ির অবস্থান যদিও খুলনা জেলার ফুলতলার কাছে। পলির সঙ্গে যখন কথা হয় তখন তাঁর বাড়ি ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন। দুই ছেলের মা হাতের কাজ করতে করতেই কষ্টের কথা তুলে ধরে বলেন, ‘বিয়ে হয়ি যখন আসিলাম তখন এগুলো ছেল না। সাত-আট বছর ধরি ঘরে থাকা কষ্ট হয়ি যাচ্ছে, পোলাপানের বেশি কষ্ট হই।’
আলোচনার বিষয় ওই এলাকায় গড়ে ওঠা কাঠকয়লার অবৈধ চুল্লি, যাতে কাঠ পুড়িয়ে কয়লা বানানো হয়। পলিদের বাসার দুই পাশেই এমন কয়েকটি চুল্লির অবস্থান। একটির মালিক সিদ্ধিপাশা ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য জিয়া মোল্লা। আরেকটি তাঁর ছোট ভাই নুরু মোল্লার।
সড়ক, নৌপথ ও রেল যোগাযোগব্যবস্থার কারণে ব্যবসায়িক কেন্দ্র হয়ে উঠেছে যশোরের অভয়নগর। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বেশি লাভের আশায় তৎপর হয়ে উঠেছেন কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। তাঁদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন স্থানীয় অনেক জনপ্রতিনিধিও। ভৈরব নদ ঘেঁষে গড়ে উঠেছে এসব চুল্লি।
গত মঙ্গলবার পুরো সিদ্ধিপাশা ঘুরে দেখা গেল মোট ১০৮টি চুল্লির অবস্থান। সবচেয়ে বেশি, ১৪টি চুল্লি স্থাপন করেছেন আমতলার কবির শেখ। সরকার অবৈধ ঘোষণার পরও কেন কাঠ পুড়িয়ে কয়লা করছেন, তা জানতে চাইলে কবির শেখ ফোনে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে মামলা কইরে দেন, নইলে ভেইঙ্গে দ্যান।’
এক চুল্লিতে একবারেই পোড়ে ১২০ মণ কাঠ: পলি দাসের বাড়িলাগোয়া কয়েকটি চুল্লিতে দেদার কাঠ পোড়াচ্ছিলেন শ্রমিকেরা। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, একেকটি চুল্লিতে প্রতিবার প্রায় ১২০ মণ কাঠ পোড়ানো হয়। সে হিসাবে শুধু জিয়া মোল্লার মালিকানায় থাকা ১১টি চুল্লিতে প্রতিদিন ১ হাজার ৩১০ মণ কয়লা বানানো হয়। সামনেই প্রচুর গাছ কেটে ফেলে রাখা। কাঠের আরও দুটি চালান বোঝাই ট্রলার দেখা যায় নদীতে, কাঠ নামানোর অপেক্ষায়।
কয়েকজন শ্রমিক জানান, মূলত ব্যাটারির সিসা গলানো, বড় হোটেলে কাবাব তৈরি, ইটভাটাসহ বিভিন্ন কাজে যেখানে এসব কাঠকয়লা ব্যবহার হয়। ১১ চুল্লির মালিক ইউপি সদস্য জিয়া মোল্লা চিকিৎসার জন্য ভারতে গেছেন। ম্যানেজার তৌকির সপ্তাহে শ্রমিকদের পারিশ্রমিকের টাকা বুঝিয়ে দেন।
জিয়ার স্ত্রীও ফোনে জানালেন, তাঁর স্বামী ভারতে গেছেন। মোবাইল ফোন রেখে গেছেন বাসায়। ম্যানেজার তৌকির বলেন, তিনি খুলনার শিরোমনি এলাকায় জিয়া মেম্বারের ব্যাটারি ফ্যাক্টরি দেখাশোনা করেন। চুল্লির বিষয়ে কিছু জানেন না।
‘রাস্তায় হাঁটলি নিশ্বাস নিতি কষ্ট হয়’
ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কাশেম অবশ্য নিজের বিরোধী অবস্থান তুলে ধরলেন। তিনি বলেন, এলাকার মানুষ চুল্লির ধোঁয়ায় সমস্যায় পড়ছে, পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। এ নিয়ে তিনি প্রশাসনকে বারবার জানিয়েছেন বলে জানান। এর আগে উচ্ছেদের সময়ও তিনি সর্বাত্মক সহায়তা করেছেন। নিজ এলাকার মেম্বারের আবারও চুল্লি তৈরির বিষয়ে তিনি প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
সোনাতলা বাজারে চায়ের দোকানে কথা হয় দুধ ব্যবসায়ী জাকির মোল্লার সঙ্গে। ক্ষোভ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নালিশ করার জায়গা নেই। সহ্য করি নিতে হচ্ছে। রাস্তায় হাঁটলি নিশ্বাস নিতি কষ্ট হয়। আপনাকে বরজ থেকে দুটো পান আনি দেখাতে পারলে বুইঝতেন, ধুমে ওগুলোতে কালি পরি গেইছে।’
ভেঙে দেওয়ার পর আবার চালু
সবচেয়ে বড় চুল্লির মালিক রকসেদ সরদারের দাবি, দুই মাস আগে উপজেলা প্রশাসন চুল্লি ভেঙে দিয়েছিল। তখন যে কাঠগুলো ছিল, তা দিয়ে কয়লা বানাতে আবারও চুল্লি তৈরি করেছেন। কয়েক দিন পরে নিজেই ভেঙে দেবেন। এতে যে পরিবেশ ও মানুষের ক্ষতি হয়, তা জানেন কি না জানতে চাইলে রকসেদ সরদার বলেন, ‘আগে তো ক্ষতি হতো না। ইদানীং খুব হচ্ছে।’
পরিবেশ অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক মো. ইকবাল হোসেন (উপসচিব) জানান, কাঠ পোড়ালে কার্বন ডাই-অক্সাইড তৈরি হয়। ফ্লাই অ্যাশ তৈরি হয়, যা মানুষের শ্বাসকষ্ট তৈরি করে। পরিবেশেও মারাত্মক প্রভাব ফেলে। এমনকি যারা কাজ করেন, তাঁদেরও দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক সমস্যা হবে। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘যশোরের উপপরিচালককে নিয়ে কিছুদিন আগেও ওখানে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছে। দ্রুতই আবারও সব কাঠকয়লার চুল্লি উচ্ছেদ করব।’
নওয়াপাড়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মেজবাহ উদ্দীন বলেন, দুই মাসের ভেতরে ওই এলাকায় ১০৪টি চুল্লি তাঁরা ভেঙে দিয়েছিলেন। নতুন করে তৈরি করার খবর জেনেছেন। দ্রুতই ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৩ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৩ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৩ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৩ দিন আগে