Ajker Patrika

থামছেই না তামাক চাষ

মাইনউদ্দিন শাহেদ, কক্সবাজার
আপডেট : ১৫ মার্চ ২০২২, ১৪: ৪৪
থামছেই না তামাক চাষ

কক্সবাজার ও বান্দরবানের পাঁচ উপজেলায় প্রবাহিত মাতামুহুরী ও বাঁকখালী নদীর দুই তীরের উর্বর জমিতে থামছেই না তামাক চাষ। কৃষকেরা তামাক কোম্পানিগুলোর নানা প্রলোভনে পড়ে প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে তামাক চাষে জড়িয়ে পড়ছে। স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর জেনেও অনেকেই তামাক চাষ ছাড়তে পারছে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে পরিবেশবাদীদের অভিযোগ—তামাকে অতিরিক্ত কীটনাশক ও সার প্রয়োগের ফলে নদীদূষণ বেড়েছে। এতে ধ্বংস হচ্ছে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য। পাশাপাশি তামাক পোড়ানোর জন্য সংরক্ষিত বন ও ভিটেবাড়ির গাছ কেটে উজাড় করা হচ্ছে।

জানা গেছে, বর্ষায় নদীর দুকূল উপচে ঢলের পানিতে পলি জমে। আর সেই উর্বর জমির বেশির ভাগই তামাকের দখলে চলে গেছে। অথচ নদীর আশপাশের কম উর্বর জমিতে বাদাম, ভুট্টা, সরিষা, শাকসবজি ও বোরোর আবাদ হয়েছে।

মাতামুহুরি ও বাঁকখালী নদীর কক্সবাজারের চকরিয়া ও রামু এবং বান্দরবানের লামা, আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় কী পরিমাণ জমিতে তামাক চাষ হচ্ছে, তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেই। সংশ্লিষ্টদের মতে, নদীতীরের জমির বেশির ভাগই সরকারি খাস ও সংরক্ষিত বনভূমি।

কক্সবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আশীষ কুমার জানিয়েছেন, চলতি মৌসুমে চকরিয়া ও রামু উপজেলায় ২ হাজার ৯৪ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়েছে। মাতামুহুরী ও বাঁকখালী নদীসহ আশপাশের ছড়া ও খালের দুই তীর এবং সংরক্ষিত বনভূমিতে তামাক চাষ হলেও এসবের হিসাব কৃষি বিভাগে নেই।

কক্সবাজার কৃষি অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. এখলাছ উদ্দিন জানান, তামাক চাষে নিরুৎসাহিত করতে কৃষকদের মাঝে সচেতনতা বাড়ানো ও এর ক্ষতির দিকগুলো তুলে ধরা হচ্ছে। তারপরও তামাক চাষ রোধ করা যাচ্ছে না।

চাষিদের দেওয়া তথ্যমতে, যে জমি রবিশস্যের জন্য প্রতি কানি (৪০ শতক) ১০ হাজার টাকা খাজনা বা লাগিয়ত পান জমির মালিকেরা, সে জমি ২০-২৫ হাজার টাকায় তামাকের জন্য লাগিয়ত করা হচ্ছে। এতে কৃষকদের বাধ্য হয়ে তামাক চাষই করতে হয়।

মানিকপুর-সুরাজপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিমুল হক জানান, পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি জেনেও কৃষকেরা তামাক কোম্পানিগুলোর ঋণসহায়তা ও লোভনীয় উদ্যোগের ফলে তামাক চাষ ছাড়তে পারছে না।

রামুর গর্জনিয়া এলাকার একটি বিদ্যালয়ের শিক্ষক নুরুল হক বলেন, কৃষকেরা তামাক চাষে লাভের চেয়ে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে। কয়দিন পর তামাক পোড়ানোর গন্ধে বাতাস ভারী হয়ে উঠবে।

দীর্ঘদিন ধরে তামাকের আগ্রাসন বন্ধে কাজ করছে উন্নয়ন বিকল্পের নীতিনির্ধারণী গবেষণা (উবিনীগ)। পরিবেশবাদী এই সংগঠনের কক্সবাজারের সমন্বয়ক জয়নাল আবেদীন খান জানান, তামাকের কারণে নদীদূষণ যেমন বেড়েছে, তেমনি এ অঞ্চলের সমৃদ্ধ বন উজাড় হয়ে পরিবেশের বিপর্যয় ঘটেছে; যা বিগত দুই দশকের পরিবেশ-প্রকৃতি তুলনা করলে সহজেই অনুমেয়।

কক্সবাজারের পরিবেশবাদী সংগঠন ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটির (ইয়েস) প্রধান নির্বাহী ইব্রাহীম খলিল মামুন বলেন, এ বছর বাঁকখালী নদীর ৭০ কিলোমিটার এলাকায় তামাক চাষ হয়েছে; যা গত বছর ছিল ৫০ কিলোমিটার এলাকায়। এভাবে তামাক চাষ বাড়লে খাদ্যোৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ এই এলাকায় খাদ্য ঘাটতি দেখা দেবে বলে মনে করেননি তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন ক্যালিফোর্নিয়ার পরিবহন বিশেষজ্ঞ

‘তল্লাশির’ জন্য উসকানি দিয়েছে গুলশানের ওই বাসার সাবেক কেয়ারটেকার: প্রেস উইং

প্রধান উপদেষ্টার আরও দুই বিশেষ সহকারী নিয়োগ

খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা মাসুদ আহমেদের সব পদ স্থগিত

টিআইএন নেওয়ার পরে কিন্তু ঘুমাইতে পারবেন না: এনবিআর চেয়ারম্যান

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত