কয়েক হাজার কর্মীর মালয়েশিয়া যাওয়া অনিশ্চিত

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা
প্রকাশ : ৩১ মে ২০২৪, ০৮: ১৩

উড়োজাহাজের টিকিট-সংকটে বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে কয়েক হাজার শ্রমিকের মালয়েশিয়ায় যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ভিসা ও অনুমোদন পেলেও তাঁরা উড়োজাহাজের টিকিট পাচ্ছেন না। অথচ মালয়েশিয়ার গত মার্চের ঘোষণা অনুযায়ী, ৩১ মে অর্থাৎ আজ শুক্রবারের পর আর কোনো নতুন বিদেশি শ্রমিক দেশটিতে ঢুকতে পারবেন না।

সময়সীমার কারণে হঠাৎ চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এয়ারলাইনস সংস্থাগুলো আসন সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনা করেছে। এরপরও টিকিট-সংকট কাটছে না। ২৫-৩০ হাজার টাকার টিকিট এখন লাখ টাকায়ও মিলছে না।

বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্রমবাজার মালয়েশিয়া। দেশটিতে বর্তমানে প্রায় ১৫ লাখ বাংলাদেশি কর্মী আছেন। গত বছর সেখানে গেছেন ৩ লাখ ৫১ হাজার ৬৮৩ জন কর্মী। এ বছরের এপ্রিল পর্যন্ত গেছেন ৪৪ হাজার ৭২৭ জন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ভিসা হওয়ার পর কর্মী ভিসায় মালয়েশিয়ায় যেতে বাংলাদেশ জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) থেকে ছাড়পত্র নিতে হয়। বিএমইটি গত দেড় বছরে মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য প্রায় সাড়ে চার লাখ কর্মীকে ছাড়পত্র দিয়েছে। চলতি মাসে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার ইস্যুতে তৎপরতা বাড়াতে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে বিএমইটিকে দেওয়া নির্দেশনায় বলা হয়েছে, মালয়েশিয়াগামী কর্মীদের বহির্গমন ছাড়পত্রের নথি দ্রুত জমা দিতে হবে। প্রতিদিন অন্তত ৩ থেকে ৪ হাজার মালয়েশিয়াগামী কর্মীর ছাড়পত্র দিচ্ছে বিএমইটি। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়ও বিএমইটিতে মালয়েশিয়ায় যেতে ছাড়পত্র নিতে ভিড় দেখা গেছে। 
কত কর্মী এখনো ছাড়পত্রের অপেক্ষায় আছেন—জানতে চাইলে গতকাল বিএমইটির অতিরিক্ত মহাপরিচালক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে। মন্ত্রণালয় থেকে বিএমইটিতে ফাইল এলে সেগুলোর ছাড়পত্র দেওয়া হয়। বিএমইটিতে মালয়েশিয়ায় অভিবাসনপ্রত্যাশী কোনো কর্মীর ছাড়পত্রের আবেদন পড়েনি। তিনি বলেন, ৩১ মের পর যেহেতু আর মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করা যাবে না, সে কারণে ছাড়পত্র নেওয়ার চাপ বেশি।

বিকেলে বিএমইটির সামনে কথা হয় মালয়েশিয়ায় অভিবাসনপ্রত্যাশী ইউনুস মিয়ার সঙ্গে। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহেই ভিসা হয়েছে। এরপরও তিনি যেতে পারেননি। আরও কিছুদিন সময় বাড়ানো হবে—এমন আশা দেখিয়ে এপ্রিলে তাঁর টিকিট করেনি এজেন্সি। সময় বাড়লে টিকিটের দাম কমবে বলা হলেও এখন বাড়তি দাম দিয়েও টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না।

জানা গেছে, সাধারণ সময়ে ঢাকা থেকে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে যেতে উড়োজাহাজের টিকিটের দাম ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। গত মাসেও মালয়েশিয়াগামী একমুখী টিকিটের দাম ৪০ হাজার টাকার মধ্যে ছিল। কিন্তু চলতি মাসে তা ৬৫ থেকে ৭০ হাজার টাকায় উঠেছে।

ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্সিজ অব বাংলাদেশের (আটাব) সভাপতি আবদুস সালাম আরেফ বলেন, শেষ সময়ে মালয়েশিয়ায় কী পরিমাণ কর্মী যাবেন, তা আগে থেকে জানানো হলে এয়ারলাইনসগুলো প্রস্তুতি নিতে পারত। এখন চাহিদা বাড়ায় বেশি দামে টিকিট কিনতে বাধ্য হচ্ছেন কর্মীরা।

৩১ মের সময়সীমার কারণে হঠাৎ চাহিদা বেড়েছে মালয়েশিয়াগামী উড়োজাহাজের টিকিটের। গত ফেব্রুয়ারি ও মার্চে দেশটিতে যান যথাক্রমে ৬ হাজার ১১৫ এবং ৬ হাজার ৩৮৩ জন নতুন কর্মী। সেখানে এপ্রিলেই গেছেন নতুন ১৭ হাজার ৮৭৭ জন। চলতি মাসে এ সংখ্যা আরও বেড়েছে।

অবশ্য চাহিদা বাড়ায় ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে উড়োজাহাজে আসন সক্ষমতাও বাড়িয়েছে দেশি-বিদেশি এয়ারলাইনসগুলো। নিয়মিত ফ্লাইটের পাশাপাশি এরই মধ্যে চারটি বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনা করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। বেসরকারি ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসও এ রুটে বড় উড়োজাহাজ দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা করে আসন সক্ষমতা দ্বিগুণ করেছে। অতিরিক্ত দুটি ফ্লাইট পরিচালনা করেছে বাজেট ক্যারিয়ার এয়ার এশিয়াও। এরপরও ৩১ মে পর্যন্ত মালয়েশিয়া যাওয়ার টিকিট-সংকট তৈরি হয়েছে। ট্রাভেল এজেন্সিগুলো ঘুরে একটা-দুটি টিকিট পেলেও দাম চাওয়া হচ্ছে লাখ টাকার বেশি।

গতকাল মতিঝিলের বেশ কয়েকটি ট্রাভেল এজেন্সিতে গিয়ে দেখা যায়, মালয়েশিয়াগামী কোনো উড়োজাহাজের আসন ফাঁকা নেই। সব এয়ারলাইনসেরই ৩১ মে পর্যন্ত সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে।

প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, নতুন সময়সীমা ঘোষণার পর মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে সময় বাড়ানোর জন্য মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দেওয়া হয়। শ্রমবাজার চালু রাখতে বৈঠকে বসারও প্রস্তাব দেয় মন্ত্রণালয়। তবে তাতে সাড়া মেলেনি। ফলে ভিসা পাওয়া কর্মীদের আজ শুক্রবারের মধ্যেই মালয়েশিয়ায় ঢুকতে হবে।

ঢাকায় নিযুক্ত মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার হাসনা মোহাম্মদ হাসিম ২৯ মে এক মতবিনিময় সভায় বলেন, জাতীয় নিরাপত্তা ও সীমান্ত সুরক্ষার জন্য মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ করা হয়েছে। ভবিষ্যতে চাকরি নিশ্চিত করে চাহিদার ভিত্তিতে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার আবারও খুলে দেওয়া হবে। তিনি বলেন, মালয়েশিয়ায় অনেক অবৈধ শ্রমিক রয়েছেন। তাঁরা জরিমানা দিয়ে নিজ দেশে ফিরতে পারেন। অনিয়মের মাধ্যমে শ্রমিক পাঠানোর সঙ্গে জড়িত সিন্ডিকেট ভাঙতে বাংলাদেশ সরকারের সহায়তায় কাজ করছে মালয়েশিয়ায়। 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরাসরি সমুদ্রপথে বাণিজ্য সম্পর্কের ঐতিহাসিক যুগে বাংলাদেশ–পাকিস্তান, শঙ্কায় ভারত

দ্রুত বেতন-ভাতা পাবে এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান

দেশে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট চালুর উদ্যোগ, সুযোগ পেতে পারে ইলন মাস্কের স্টারলিংক

গাজীপুরে বেতন পেলেন ৫ কারখানার সাড়ে ৩ হাজার শ্রমিক, কাজে যোগ দেবে কাল

মালামালের সঙ্গে শিশুকেও তুলে নিয়ে গেল দুর্বৃত্তরা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত