আশ্রয়ণের ঘরে নতুন স্বপ্ন

বারহাট্টা (উপজেলা) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ৩১ মে ২০২২, ০৮: ১৩
আপডেট : ৩১ মে ২০২২, ১৩: ৪২

নেত্রকোনার বারহাট্টায় প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পাল্টে দিচ্ছে ১০০ পরিবারের জীবনমান। উপহারের ঘর অনেকেরই জীবন পরিবর্তনের প্রধান ভূমিকা রাখছে। মাথা গোঁজার নিজস্ব ঠিকানার সঙ্গে পর্যাপ্ত পানি, বিদ্যুৎ ও উন্নত যোগাযোগব্যবস্থা পেয়ে এখন সবাই কিছু না কিছু করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী। এর মধ্য দিয়ে দুঃখের জীবনে সুখের নতুন গল্প রচনা করছেন একসময়ের গৃহহীন-ভূমিহীন মানুষগুলো।

প্রথম দিকে যাঁরা ঘর পেয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে একটা দুশ্চিন্তা ছিল কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নিয়ে। কিন্তু দিনে দিনে তাঁদের সেই শঙ্কা কেটে গেছে। এখন তাঁরা সবজি চাষ, হাঁস-মুরগি পালন, জমানো টাকা দিয়ে গরু-ছাগল কিনে লালন পালন করছেন। উপজেলা থেকে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেদের জীবন চালানোর মতো ভিত্তি তৈরি করছেন তাঁরা।

বারহাট্টা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর নিজস্ব তহবিল থেকে আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে দেশের গৃহহীন ও ভূমিহীন মানুষের জন্য ২ শতাংশ করে জমি দিয়েছেন। সেই সঙ্গে জমিতে তুলে দিয়েছেন সেমি পাকা ঘর। ২০২০ সালে মুজিববর্ষে বারহাট্টা উপজেলায় এই প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়। প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপে উপজেলার সাতটি ইউনিয়নে ১০০ ঘর নির্মাণ করে অসহায় এসব মানুষের মধ্যে হস্তান্তর করা হয়েছে। স্বপ্নের মতো পাওয়া সেই ঘরে বসবাস করে অনেকেই তাঁদের জীবন পরিবর্তনের গল্প আবার নতুন করে শুরু করেছেন।

সিংধা ইউনিয়নের জীবনপুর গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্পে গিয়ে কথা হয় ৫৫ বছর বয়সী মো. মুজিবুর রহমানের সঙ্গে। তিনি জানান, বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর অন্যের বাড়িতে দিনমজুর হিসেবে আশ্রিত ছিলেন। কোনো জমি-বাড়ি ছিল না। তাই বিয়ে পর্যন্ত করতে পারেননি তিনি। এটা তাঁর দুঃখ। মুজিববর্ষে দুই শতাংশ সরকারি জমির ওপর আধা পাকা ঘর পেয়ে এখন আর অন্যের বাড়িতে আশ্রিত হয়ে থাকতে হয় না তাঁকে। ঘর পাওয়ার পর উপার্জনের জমানো টাকা দিয়ে বাড়ির আঙিনায় করেছেন শিম এবং লাউ চাষ। ইতিমধ্যে দুটি গরু কিনেছেন। এখন আর তাঁকে দিনমজুর হিসেবে কাজ করতে হয় না। তিনি এখন অনেক খুশি। মুখে হাসি দিয়ে বললেন, ‘বিয়ে করার জন্য মেয়ে দেখছি।’

বারহাট্টা সদর ইউনিয়নের গড়মা আশ্রয়ণ প্রকল্পে কথা হয় ৪২ বছর বয়সী শংকর চন্দ্র পালের সঙ্গে। এক ছেলে ও এক মেয়ের বাবা তিনি। ছেলেটি শারীরিক প্রতিবন্ধী। আগে থাকতেন ভাড়া বাসায়। আশ্রয়হীন দিনমজুর বাবার পক্ষে একই সঙ্গে বাসা ভাড়া ও ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার খরচ বহন করা কষ্টকর ছিল তাঁর পক্ষে। তবে এখন ঘর পেয়েছেন তিনি। ছেলেকে দেওয়া হয়েছে প্রতিবন্ধী ভাতা। বাসা ভাড়ার টাকা জমিয়ে ছাগল কিনে তিনি এখন স্বাবলম্বী। স্ত্রী দেবী রানী ঘরের পেছনে করেছেন নানা ধরনের সবজির চাষ। শংকর চন্দ্র পাল বলেন, ‘সন্তানদের পড়াশোনার খরচসহ আমার পরিবারের জীবনমান এখন উন্নতির দিকে।’

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা লতিবুর রহমান বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিনা মূল্যে বিভিন্ন উচ্চ ফলনশীল সবজির বীজ বিতরণ করা হয়েছে। দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের সহায়তা।

লতিবুর রহমান আরও বলেন, ‘আমি আশাবাদী এই মানুষগুলো নিজেদের স্থায়ী বাসস্থানে বসবাসের পাশাপাশি সৃজনশীল কর্মের মাধ্যমে নিজেদের জীবনের ফেলে আসা দুঃখের গল্পকে সুখের গল্পে পরিবর্তন করতে পারবেন। অনেকেই বিভিন্ন সৃজনশীল কাজের মাধ্যমে নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর পাশাপাশি আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর উপহারই এসব মানুষের জীবনের বড় অনুপ্রেরণা। আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য ঘরের বাসিন্দাদের বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। জীবনে ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে তাঁদের সার্বিক সহযোগিতা দেওয়া ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত