শাইখ সিরাজ
‘হৃদয়ে মাটি ও মানুষ’ টিমের একজন ক্যামেরাম্যান রাসেল শাহ। দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে আমার সঙ্গে কাজ করছে। ওর বাড়ি সুনামগঞ্জের ধর্মপাশায়। কয়েক দিন ধরেই দেখছি খুব মনমরা। ঘন ঘন বাড়ির খোঁজখবর নিচ্ছে। বুঝতে পারছি বন্যা পরিস্থিতির অবনতির কারণে বাড়ির লোকজনকে নিয়ে সে দুশ্চিন্তায় আছে। সিলেট-সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে আমিও উদ্বিগ্ন। চ্যানেল আইয়ের জেলা প্রতিনিধিদের কাছ থেকে প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে চাইছি। কিন্তু খুব একটা ভালো খবর পাচ্ছি না। প্রচণ্ড বৃষ্টিতে বন্যার পানি ক্রমেই বাড়ছে। সুনামগঞ্জ ও সিলেট বন্যার কারণে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এর মাঝে আমাদের সুনামগঞ্জ প্রতিনিধিকে ফোনেও পেলাম না। সুনামগঞ্জে দুই দিন ধরে বিদ্যুৎ না থাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে, কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। বলা চলে যোগাযোগহীন এক ভয়াবহ সময় অতিক্রম করতে হচ্ছে ওই অঞ্চলের মানুষদের।
চ্যানেল আইয়ের সিলেট প্রতিনিধি সাকী জানালেন, সেখানকার বন্যার ভয়াবহতা বাড়ছেই। ঢলের পানির পাশাপাশি চলছে অবিরাম বর্ষণ। লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে আছে। ডুবে গেছে সড়ক ও রেলপথ। সাবস্টেশনগুলোতে পানি ওঠায় সিলেটে সাময়িকভাবে বন্ধ আছে বিদ্যুৎ সরবরাহ। হাসপাতাল, সড়ক, বাসাবাড়ি—সবখানেই পানি। বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে রেলস্টেশনে। ফলে বন্ধ রয়েছে ট্রেন চলাচল। স্টেশনে গিয়ে আটকা পড়েছেন অনেক যাত্রী। ঢাকা-সিলেট রুটে ট্রেন চলছে ফেঞ্চুগঞ্জের মাইজগাঁও স্টেশন পর্যন্ত। ওসমানী বিমানবন্দরের রানওয়ে জলমগ্ন। বন্ধ রয়েছে বিমানের ওঠানামা। লন্ডনের ফ্লাইটের শিডিউল পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে।
খবরে দেখলাম ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, মেঘালয় রাজ্যের চেরাপুঞ্জিতে গত শুক্রবার ২৪ ঘণ্টায় ৯৭২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। সাধারণত জুন মাসে যে পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়, সে বিবেচনায় এটি গত ১২২ বছরের মধ্যে তৃতীয় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের ঘটনা। মেঘালয় ছাড়াও আসামে এবং আমাদের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে কয়েক দিন ধরেই ভারী বৃষ্টিপাতের ঘটনা ঘটেছে। মেঘালয়ের বৃষ্টির পানির ঢলে সিলেট-সুনামগঞ্জে অকস্মাৎ এই বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। সুনামগঞ্জের ৯০ শতাংশ এবং সিলেটের ৮০ শতাংশ এলাকা পানির নিচে ডুবে গেছে। খবর পাচ্ছি আসামের বৃষ্টির পানি ঢল আকারে ব্রহ্মপুত্র নদ দিয়ে ঢুকছে বাংলাদেশে। ফলে দেশের উত্তরাঞ্চলের নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। বাড়তে শুরু করেছে বন্যার তীব্রতা। এটি সিলেটে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা। এমন বন্যা পরিস্থিতি নাকি সিলেটবাসী দেখেনি কোনো দিন। বন্যায় সিলেট ও সুনামগঞ্জের প্রায় ৪০ লাখ মানুষ পানিবন্দী। মানুষ আশ্রয়ের খোঁজে দিশেহারা। যেকোনো দুর্যোগে সবচেয়ে বিপদে থাকেন শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিরা। এখানেও হয়েছে তা-ই। ভীষণ কষ্টে আছেন তাঁরা। সিলেট ও সুনামগঞ্জে মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে জায়গা পেলেও গবাদিপশু নিয়ে বিপদে আছেন সেখানকার অনেক মানুষ। যাঁরা কোরবানি ঘিরে গরু মোটাতাজাকরণ করছিলেন কিছুটা লাভের আশায়, তাঁদের লাভ দূরে থাক, আসল রক্ষা করা নিয়েই আছেন সংকটে।
বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্রের তথ্যমতে, আগামী দু-তিন দিনের মধ্যে উত্তরাঞ্চল ও দেশের মধ্যাঞ্চলের আরও ১৭টি জেলা বন্যায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা আছে। সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও কুড়িগ্রাম জেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে।
বন্যা আমাদের কাছে নতুন নয়। প্রতিবছরই দেশের কোনো না কোনো অঞ্চল বন্যায় তলিয়ে যায়। তবে দীর্ঘদিন আমরা প্রলয়ংকরী বন্যার মুখোমুখি হইনি। মনে পড়ে, ১৯৭০ সালের মহাপ্রলয়ংকরী বন্যা ও জলোচ্ছ্বাসে পাঁচ লাখ মানুষ মারা গিয়েছিল। ওই বন্যায় প্লাবিত হয়েছিল উপকূলের ১৬ হাজার বর্গমাইল এলাকা। খাদ্যশস্য নষ্ট হয় ১২ লাখ ৯৮ হাজার টন। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২, ১৯৭৩ ও ১৯৭৪ সালে বন্যায় বিপুল ক্ষতি হয়। ১৯৮৭ সালে জুলাই-আগস্ট মাসে বন্যায় বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটে। প্রায় ৫৭ হাজার ৩০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যা সমগ্র দেশের ৪০ শতাংশের অধিক এলাকা। তারপর ১৯৮৮ সালের বন্যা ছিল স্মরণকালের ভয়ংকর এক বন্যা। এই বন্যায় দেশের প্রায় ৬০ শতাংশ এলাকা ডুবে যায়। এরপর ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ মুখোমুখি হয় বড় এক বন্যার। এতে ৬৮ শতাংশ এলাকার ১ লাখ ২৫০ বর্গকিলোমিটার এলাকা প্লাবিত হয়। এরপর ২০০০, ২০০৪ সালে বন্যায় বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়। ২০০৭ সালের বন্যাও ছিল ১৯৯৮ সালের বন্যার মতো দীর্ঘস্থায়ী ও সর্বব্যাপী। সেপ্টেম্বর মাসের এ বন্যায় দেশের মোট আয়তনের ৬২ হাজার ৩০০ বর্গকিলোমিটার, অর্থাৎ ৪২ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়। ২০১৭ সালের বন্যাতেও বন্যাপ্রবণ এলাকাগুলো প্লাবিত হয়, ফসলের ক্ষয়ক্ষতি ঘটে। কয়েক দিন আগে বাংলাদেশের শত বছরের বদ্বীপ পরিকল্পনা বিষয়ে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলমের সাক্ষাৎকার নিতে গিয়েছিলাম। তিনি বলছিলেন, বাংলাদেশের বন্যার মূল কারণ নদীগুলোর নাব্যতা হারানো। বদ্বীপ অঞ্চল হওয়ায় বাংলাদেশের আশীর্বাদ যেমন পানি, বড় সমস্যাগুলো পানি থেকেই। তাই পানিকে নিয়ন্ত্রণ করা গেলে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আমরা জানি না, আমাদের নদীগুলো দিয়ে কোন সময়ে ঠিক কতটুকু পানি প্রবাহিত হবে। বাংলাদেশের প্রধান তিনটি নদী পদ্মা, মেঘনা, যমুনা শাসন করছে প্রতিবেশী দেশ ভারত ও চীন। সারা বছর আমাদের নদীগুলোতে পানি থাকে না। বর্ষায় বাঁধ খুলে দিয়ে পানি ছেড়ে দেওয়ায় অকস্মাৎ বন্যায় তলিয়ে যাচ্ছে এ অঞ্চলের কৃষিজমি, বাড়িঘর। তাই নদীর পানি বিষয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে দ্রুত বন্ধুত্বপূর্ণ চুক্তিতে আসা উচিত। সমুদ্র উত্থিত বদ্বীপ ও নদীমাতৃক দেশ হওয়ায় বন্যার সঙ্গেই আমাদের বসবাস। ফলে বন্যা প্রতিরোধে আমাদের স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
সুনামগঞ্জ-সিলেটের বন্যার কারণ হিসেবে অনেকেই বলছেন হাওরাঞ্চলে অপরিকল্পিত রাস্তাঘাট বা স্থাপনা নির্মাণকে। বিষয়টিকে তলিয়ে দেখতে হবে। পানিপ্রবাহের প্রাকৃতিক গতিপথ রুদ্ধ হলে, পানি বিকল্প পথ খুঁজে নেয়। তাই পরিকল্পিত উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালিত না হলে, সে উন্নয়ন টিকবে না। বন্যার পানিতে ধুয়ে যাবে।
নদীর গতিপথ পরিষ্কারের জন্য উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নদীর গতিপথে জমে থাকা পলি অপসারণ করা জরুরি। এতে নদীর পানি ধারণক্ষমতা বাড়বে। ভরাট হয়ে যাওয়া বিলগুলোকে খননের মাধ্যমে ফিরিয়ে আনতে হবে। অবকাঠামো নির্মাণেও সতর্ক থাকতে হবে, নদীর ওপর রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট এমনভাবে তৈরি করতে হবে যাতে সেগুলো নদীর গতিপথে বাধা সৃষ্টি করতে না পারে। আমরা অবশ্য কম-বেশি সবাই জানি কী করে বন্যা প্রতিরোধ বা প্রতিকার সম্ভব। কিন্তু সেগুলো আমরা খুব একটা মানি না। যে যার মতো নদীকে ব্যবহার করছি। ইচ্ছেমতো নদী থেকে বালু তুলে নিচ্ছি। ফলে নদীর বিরূপ রূপও আমাদের দেখতে হচ্ছে।
পৃথিবীর অনেক দেশই বন্যাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে। নেদারল্যান্ডস বন্যা নিয়ন্ত্রণ করেছে বাঁধ নির্মাণসহ নানা কৌশলে। কোথাও তৈরি করেছে প্রাকৃতিক রিজার্ভার। এতে বৃষ্টির পানি যেমন সংরক্ষণ করা যায়, তৈরি হয় না জলাবদ্ধতাও। আবার চীন বন্যার হাত থেকে রক্ষা পেতে অনেকগুলো স্পঞ্জ সিটি তৈরি করেছে; অর্থাৎ বন্যার পানিকে তারা বিভিন্ন উপায়ে নিয়ন্ত্রণ করে সেই পানি তারা ব্যবহার করছে উৎপাদনকাজে। এ ব্যবস্থাপনায় মূলত শহরকে বন্যার হাত থেকে রক্ষা করা যায়। সিলেট, সুনামগঞ্জের মতো শহরগুলোকে বন্যার হাত থেকে বাঁচাতে এ ধরনের কোনো ব্যবস্থাপনা উপযোগী কি না, কর্তৃপক্ষ তা যাচাই করে দেখতে পারে।
তবে এই মুহূর্তে সবার আগে এগিয়ে আসা উচিত বানভাসি মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতেও ঢুকে গেছে বন্যার পানি। মানুষ যাতায়াতের জন্য কোনো বাহন পাচ্ছে না। নৌকা বা ট্রলার ভাড়া আকাশচুম্বী। কেউ কেউ বলছেন, ২০০ টাকা ভাড়ার ট্রলার হাজার টাকাতেও পাচ্ছেন না। কোনো কোনো অঞ্চলের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে। অথচ এই বিপৎসংকুল মুহূর্তে মানুষের পাশে দাঁড়ানোই ছিল মানুষের কাজ। যা হোক, বন্যায় আক্রান্ত মানুষের পাশে সরকারি সহায়তা অতিদ্রুত পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে হবে। ব্যবস্থা নিতে হবে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের উন্নয়নে। তাঁরা যেন সব সময় ভাবতে জানেন, সারা দেশ তাঁদের পাশে আছে।
‘হৃদয়ে মাটি ও মানুষ’ টিমের একজন ক্যামেরাম্যান রাসেল শাহ। দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে আমার সঙ্গে কাজ করছে। ওর বাড়ি সুনামগঞ্জের ধর্মপাশায়। কয়েক দিন ধরেই দেখছি খুব মনমরা। ঘন ঘন বাড়ির খোঁজখবর নিচ্ছে। বুঝতে পারছি বন্যা পরিস্থিতির অবনতির কারণে বাড়ির লোকজনকে নিয়ে সে দুশ্চিন্তায় আছে। সিলেট-সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে আমিও উদ্বিগ্ন। চ্যানেল আইয়ের জেলা প্রতিনিধিদের কাছ থেকে প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে চাইছি। কিন্তু খুব একটা ভালো খবর পাচ্ছি না। প্রচণ্ড বৃষ্টিতে বন্যার পানি ক্রমেই বাড়ছে। সুনামগঞ্জ ও সিলেট বন্যার কারণে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এর মাঝে আমাদের সুনামগঞ্জ প্রতিনিধিকে ফোনেও পেলাম না। সুনামগঞ্জে দুই দিন ধরে বিদ্যুৎ না থাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে, কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। বলা চলে যোগাযোগহীন এক ভয়াবহ সময় অতিক্রম করতে হচ্ছে ওই অঞ্চলের মানুষদের।
চ্যানেল আইয়ের সিলেট প্রতিনিধি সাকী জানালেন, সেখানকার বন্যার ভয়াবহতা বাড়ছেই। ঢলের পানির পাশাপাশি চলছে অবিরাম বর্ষণ। লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে আছে। ডুবে গেছে সড়ক ও রেলপথ। সাবস্টেশনগুলোতে পানি ওঠায় সিলেটে সাময়িকভাবে বন্ধ আছে বিদ্যুৎ সরবরাহ। হাসপাতাল, সড়ক, বাসাবাড়ি—সবখানেই পানি। বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে রেলস্টেশনে। ফলে বন্ধ রয়েছে ট্রেন চলাচল। স্টেশনে গিয়ে আটকা পড়েছেন অনেক যাত্রী। ঢাকা-সিলেট রুটে ট্রেন চলছে ফেঞ্চুগঞ্জের মাইজগাঁও স্টেশন পর্যন্ত। ওসমানী বিমানবন্দরের রানওয়ে জলমগ্ন। বন্ধ রয়েছে বিমানের ওঠানামা। লন্ডনের ফ্লাইটের শিডিউল পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে।
খবরে দেখলাম ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, মেঘালয় রাজ্যের চেরাপুঞ্জিতে গত শুক্রবার ২৪ ঘণ্টায় ৯৭২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। সাধারণত জুন মাসে যে পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়, সে বিবেচনায় এটি গত ১২২ বছরের মধ্যে তৃতীয় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের ঘটনা। মেঘালয় ছাড়াও আসামে এবং আমাদের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে কয়েক দিন ধরেই ভারী বৃষ্টিপাতের ঘটনা ঘটেছে। মেঘালয়ের বৃষ্টির পানির ঢলে সিলেট-সুনামগঞ্জে অকস্মাৎ এই বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। সুনামগঞ্জের ৯০ শতাংশ এবং সিলেটের ৮০ শতাংশ এলাকা পানির নিচে ডুবে গেছে। খবর পাচ্ছি আসামের বৃষ্টির পানি ঢল আকারে ব্রহ্মপুত্র নদ দিয়ে ঢুকছে বাংলাদেশে। ফলে দেশের উত্তরাঞ্চলের নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। বাড়তে শুরু করেছে বন্যার তীব্রতা। এটি সিলেটে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা। এমন বন্যা পরিস্থিতি নাকি সিলেটবাসী দেখেনি কোনো দিন। বন্যায় সিলেট ও সুনামগঞ্জের প্রায় ৪০ লাখ মানুষ পানিবন্দী। মানুষ আশ্রয়ের খোঁজে দিশেহারা। যেকোনো দুর্যোগে সবচেয়ে বিপদে থাকেন শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিরা। এখানেও হয়েছে তা-ই। ভীষণ কষ্টে আছেন তাঁরা। সিলেট ও সুনামগঞ্জে মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে জায়গা পেলেও গবাদিপশু নিয়ে বিপদে আছেন সেখানকার অনেক মানুষ। যাঁরা কোরবানি ঘিরে গরু মোটাতাজাকরণ করছিলেন কিছুটা লাভের আশায়, তাঁদের লাভ দূরে থাক, আসল রক্ষা করা নিয়েই আছেন সংকটে।
বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্রের তথ্যমতে, আগামী দু-তিন দিনের মধ্যে উত্তরাঞ্চল ও দেশের মধ্যাঞ্চলের আরও ১৭টি জেলা বন্যায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা আছে। সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও কুড়িগ্রাম জেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে।
বন্যা আমাদের কাছে নতুন নয়। প্রতিবছরই দেশের কোনো না কোনো অঞ্চল বন্যায় তলিয়ে যায়। তবে দীর্ঘদিন আমরা প্রলয়ংকরী বন্যার মুখোমুখি হইনি। মনে পড়ে, ১৯৭০ সালের মহাপ্রলয়ংকরী বন্যা ও জলোচ্ছ্বাসে পাঁচ লাখ মানুষ মারা গিয়েছিল। ওই বন্যায় প্লাবিত হয়েছিল উপকূলের ১৬ হাজার বর্গমাইল এলাকা। খাদ্যশস্য নষ্ট হয় ১২ লাখ ৯৮ হাজার টন। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২, ১৯৭৩ ও ১৯৭৪ সালে বন্যায় বিপুল ক্ষতি হয়। ১৯৮৭ সালে জুলাই-আগস্ট মাসে বন্যায় বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটে। প্রায় ৫৭ হাজার ৩০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যা সমগ্র দেশের ৪০ শতাংশের অধিক এলাকা। তারপর ১৯৮৮ সালের বন্যা ছিল স্মরণকালের ভয়ংকর এক বন্যা। এই বন্যায় দেশের প্রায় ৬০ শতাংশ এলাকা ডুবে যায়। এরপর ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ মুখোমুখি হয় বড় এক বন্যার। এতে ৬৮ শতাংশ এলাকার ১ লাখ ২৫০ বর্গকিলোমিটার এলাকা প্লাবিত হয়। এরপর ২০০০, ২০০৪ সালে বন্যায় বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়। ২০০৭ সালের বন্যাও ছিল ১৯৯৮ সালের বন্যার মতো দীর্ঘস্থায়ী ও সর্বব্যাপী। সেপ্টেম্বর মাসের এ বন্যায় দেশের মোট আয়তনের ৬২ হাজার ৩০০ বর্গকিলোমিটার, অর্থাৎ ৪২ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়। ২০১৭ সালের বন্যাতেও বন্যাপ্রবণ এলাকাগুলো প্লাবিত হয়, ফসলের ক্ষয়ক্ষতি ঘটে। কয়েক দিন আগে বাংলাদেশের শত বছরের বদ্বীপ পরিকল্পনা বিষয়ে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলমের সাক্ষাৎকার নিতে গিয়েছিলাম। তিনি বলছিলেন, বাংলাদেশের বন্যার মূল কারণ নদীগুলোর নাব্যতা হারানো। বদ্বীপ অঞ্চল হওয়ায় বাংলাদেশের আশীর্বাদ যেমন পানি, বড় সমস্যাগুলো পানি থেকেই। তাই পানিকে নিয়ন্ত্রণ করা গেলে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আমরা জানি না, আমাদের নদীগুলো দিয়ে কোন সময়ে ঠিক কতটুকু পানি প্রবাহিত হবে। বাংলাদেশের প্রধান তিনটি নদী পদ্মা, মেঘনা, যমুনা শাসন করছে প্রতিবেশী দেশ ভারত ও চীন। সারা বছর আমাদের নদীগুলোতে পানি থাকে না। বর্ষায় বাঁধ খুলে দিয়ে পানি ছেড়ে দেওয়ায় অকস্মাৎ বন্যায় তলিয়ে যাচ্ছে এ অঞ্চলের কৃষিজমি, বাড়িঘর। তাই নদীর পানি বিষয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে দ্রুত বন্ধুত্বপূর্ণ চুক্তিতে আসা উচিত। সমুদ্র উত্থিত বদ্বীপ ও নদীমাতৃক দেশ হওয়ায় বন্যার সঙ্গেই আমাদের বসবাস। ফলে বন্যা প্রতিরোধে আমাদের স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
সুনামগঞ্জ-সিলেটের বন্যার কারণ হিসেবে অনেকেই বলছেন হাওরাঞ্চলে অপরিকল্পিত রাস্তাঘাট বা স্থাপনা নির্মাণকে। বিষয়টিকে তলিয়ে দেখতে হবে। পানিপ্রবাহের প্রাকৃতিক গতিপথ রুদ্ধ হলে, পানি বিকল্প পথ খুঁজে নেয়। তাই পরিকল্পিত উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালিত না হলে, সে উন্নয়ন টিকবে না। বন্যার পানিতে ধুয়ে যাবে।
নদীর গতিপথ পরিষ্কারের জন্য উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নদীর গতিপথে জমে থাকা পলি অপসারণ করা জরুরি। এতে নদীর পানি ধারণক্ষমতা বাড়বে। ভরাট হয়ে যাওয়া বিলগুলোকে খননের মাধ্যমে ফিরিয়ে আনতে হবে। অবকাঠামো নির্মাণেও সতর্ক থাকতে হবে, নদীর ওপর রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট এমনভাবে তৈরি করতে হবে যাতে সেগুলো নদীর গতিপথে বাধা সৃষ্টি করতে না পারে। আমরা অবশ্য কম-বেশি সবাই জানি কী করে বন্যা প্রতিরোধ বা প্রতিকার সম্ভব। কিন্তু সেগুলো আমরা খুব একটা মানি না। যে যার মতো নদীকে ব্যবহার করছি। ইচ্ছেমতো নদী থেকে বালু তুলে নিচ্ছি। ফলে নদীর বিরূপ রূপও আমাদের দেখতে হচ্ছে।
পৃথিবীর অনেক দেশই বন্যাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে। নেদারল্যান্ডস বন্যা নিয়ন্ত্রণ করেছে বাঁধ নির্মাণসহ নানা কৌশলে। কোথাও তৈরি করেছে প্রাকৃতিক রিজার্ভার। এতে বৃষ্টির পানি যেমন সংরক্ষণ করা যায়, তৈরি হয় না জলাবদ্ধতাও। আবার চীন বন্যার হাত থেকে রক্ষা পেতে অনেকগুলো স্পঞ্জ সিটি তৈরি করেছে; অর্থাৎ বন্যার পানিকে তারা বিভিন্ন উপায়ে নিয়ন্ত্রণ করে সেই পানি তারা ব্যবহার করছে উৎপাদনকাজে। এ ব্যবস্থাপনায় মূলত শহরকে বন্যার হাত থেকে রক্ষা করা যায়। সিলেট, সুনামগঞ্জের মতো শহরগুলোকে বন্যার হাত থেকে বাঁচাতে এ ধরনের কোনো ব্যবস্থাপনা উপযোগী কি না, কর্তৃপক্ষ তা যাচাই করে দেখতে পারে।
তবে এই মুহূর্তে সবার আগে এগিয়ে আসা উচিত বানভাসি মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতেও ঢুকে গেছে বন্যার পানি। মানুষ যাতায়াতের জন্য কোনো বাহন পাচ্ছে না। নৌকা বা ট্রলার ভাড়া আকাশচুম্বী। কেউ কেউ বলছেন, ২০০ টাকা ভাড়ার ট্রলার হাজার টাকাতেও পাচ্ছেন না। কোনো কোনো অঞ্চলের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে। অথচ এই বিপৎসংকুল মুহূর্তে মানুষের পাশে দাঁড়ানোই ছিল মানুষের কাজ। যা হোক, বন্যায় আক্রান্ত মানুষের পাশে সরকারি সহায়তা অতিদ্রুত পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে হবে। ব্যবস্থা নিতে হবে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের উন্নয়নে। তাঁরা যেন সব সময় ভাবতে জানেন, সারা দেশ তাঁদের পাশে আছে।
পর্দার নায়িকারা নিজেদের বয়স আড়ালে রাখা পছন্দ করেন। এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম আজমেরী হক বাঁধন। প্রতিবছর নিজের জন্মদিনে জানান দেন তাঁর বয়স। গতকাল ছিল বাঁধনের ৪১তম জন্মদিন। সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেই জানালেন এই তথ্য।
২ দিন আগে১০ বছরের বেশি সময় ধরে শোবিজে কাজ করছেন অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া। নাটকের পাশাপাশি ওটিটিতে দেখা গেছে তাঁকে। সরকারি অনুদানের ‘দেবী’ নামের একটি সিনেমায়ও অভিনয় করেছেন। প্রশংসিত হলেও সিনেমায় আর দেখা মেলেনি তাঁর। ছোট পর্দাতেও অনেক দিন ধরে অনিয়মিত তিনি। এবার শবনম ফারিয়া হাজির হচ্ছেন নতুন পরিচয়ে। কমেডি রিয়েলিটি
২ দিন আগেআমাদের লোকসংস্কৃতির অন্যতম ঐতিহ্য যাত্রাপালা। গণমানুষের সংস্কৃতি হিসেবে বিবেচিত এই যাত্রাপালা নিয়ে শিল্পকলা একাডেমি আয়োজন করছে ‘যাত্রা উৎসব-২০২৪’। আগামী ১ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চে শুরু হবে ৭ দিনব্যাপী এই উৎসব।
২ দিন আগে‘বঙ্গবন্ধু’ পদবি বিলীন হবে না। হতে পারে না। যেমনটি ‘দেশবন্ধু’ চিত্তরঞ্জন দাশের পদবি বিলীন হয়নি। ইতিহাসে এসব পদবি অম্লান ও অক্ষয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিত্ব ছিল অনন্যসাধারণ। আপনজনকে তো অবশ্যই, শত্রুপক্ষের লোকেরাও ব্যক্তিগত পর্যায়ে তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হতেন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর উচ্চপদের
২ দিন আগে