পানিশূন্য আত্রাই: সেচসংকটে ৪৫ হাজার বিঘার বোরো আবাদ

মান্দা (নওগাঁ) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২০ মার্চ ২০২৪, ০৯: ৫০

শুকিয়ে গেছে একসময়ের খরস্রোতা আত্রাই নদ। খরা মৌসুম শুরু হলেই এর পানি হু হু করে কমতে থাকে। চৈত্র-বৈশাখ মাসে পানি কমে চলে আসে হাঁটুর নিচে। এ সময় এলাকার লোকজন হেঁটেই নদ পারাপার হয়। এবারও কয়েক দিন ধরে নদটির পানিপ্রবাহ বন্ধ। উজানের নিচু এলাকাগুলোয় সামান্য পানি থাকলেও পানিশূন্য ভাটি অংশ। এতে চরম ঝুঁকিতে পড়েছে নওগাঁর মান্দা উপজেলার তিন শতাধিক সেচ পাম্পের আওতায় চাষ হওয়া অন্তত ৪৫ হাজার বিঘা জমির বোরো আবাদ। কৃষকেরা জানান, পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত কিংবা নদে পানি না এলে আবাদে বিপর্যয় ঘটবে।

এদিকে গত শনিবার নদটি পরিদর্শনে যান স্থানীয় সংসদ সদস্য এস এম ব্রহানী সুলতান মামুদ গামা। এ সময় তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে আত্রাই ও শিব নদ সংস্কারসহ খননের বিষয়ে কথা হয়েছে। জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনেই নদ দুটি সংস্কারসহ খননের প্রস্তাব উত্থাপন করেছি। সংশ্লিষ্টরা আশ্বস্ত করেছেন, নদ দুটির নাব্যতা ফেরাতে শিগগির উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

নদী গবেষক ও হেরিটেজ রাজশাহীর সভাপতি মাহবুব সিদ্দিকী বলেন, ‘আত্রাই নদের দিনাজপুর এলাকায় অপরিকল্পিতভাবে একটি রাবার ড্যাম তৈরি করা হয়েছে। মাত্র কয়েকটি গ্রামকে সেচসুবিধা দিতে এটি নির্মাণ করা হয়। নদটি শুকিয়ে যাওয়ার এটিই প্রধান কারণ। রাবার ড্যাম তুলে নিলে নদটি আবার আগের জায়গায় ফিরে আসবে।’

মান্দা উপজেলার সুজন-সখী খেয়াঘাটসংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, আত্রাই নদের পানি দিয়ে দুই পারের শত শত হেক্টর উর্বর জমিতে ধান, গম, আলু, পেঁয়াজসহ বিভিন্ন ধরনের ফসলের চাষ করেন কৃষকেরা। চাষ হয় বোরো, আমন ও আউশ ধান। কিন্তু প্রতিটি রবি মৌসুমের শুরুতেই অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে নদের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়ছেন চাষিরা। তাঁরা আরও বলেন, নদ থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন হচ্ছে প্রতিনিয়ত। নদপাড়ের মাটি কেটে নেওয়ার প্রতিযোগিতা চলছে। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারও নেই। ফলে নদটি নাব্যতা হারানোর পাশাপাশি হারাচ্ছে স্বাভাবিক গতিও। খুব তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যাচ্ছে পানি। অচিরেই খনন করা না হলে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে নদটির অস্তিত্ব।

কৃষক ইব্রাহীম হোসেন বলেন, নদপারের মানুষের উৎপাদন করা প্রধান ফসলই হচ্ছে বোরো ধান। এবার রোপণের পর ধানগাছের বয়স ৩৫ থেকে ৪০ দিন হচ্ছে। পরিপক্ব ধানগাছ তৈরি হতে আরও সময় লাগবে। এ অবস্থায় সেচ ব্যাহত হলে ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা অনেক বেশি।

নদপারের বাসিন্দা শতবর্ষী তনজেব আলী বলেন, আশির দশকজুড়েই নদটির ভরা যৌবন ছিল।

 নব্বইয়ের দশক থেকে নদটির দুর্দশা শুরু। এখন এমন অবস্থা যে নদটির হারানোর আর কিছুই নেই। ছোট-বড় নানা প্রজাতির মাছের অফুরন্ত উৎস ছিল এই নদ। এ কারণে নদপারসংলগ্ন আশপাশের এলাকাগুলোয় গড়ে উঠেছিল অসংখ্য জেলে পরিবারের বসতি। নদটি শুকিয়ে যাওয়ায় মাছের সেই উৎস এখন শুধুই অতীত।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শায়লা শারমিন বলেন, বোরো ধানের আবাদ মূলত সেচনির্ভর। বর্তমানে ধান কুশি পর্যায়ে আছে। এখন সেচ কম হলেও সমস্যা নেই। ফলনেও তেমন প্রভাব পড়বে না। কিন্তু থোড় অবস্থায় সময়মতো সেচ ও জমিতে দুই থেকে তিন ইঞ্চি পানি থাকা জরুরি। না হলে ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা থাকবে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত