মোগল শৈলীর ‘জিনের মসজিদ’

সাদ্দাম হোসেন, ঠাকুরগাঁও
প্রকাশ : ১১ আগস্ট ২০২২, ০৬: ০৮
আপডেট : ১১ আগস্ট ২০২২, ১২: ৩৫

মসজিদের কাঠামো মোগল স্থাপত্যশৈলীর মতো। দেয়ালের কারুকাজ মানুষকে বিমোহিত করে। তাই অনেকে মসজিদটি দেখতে দূরদূরান্ত থেকে আসেন। স্থানীয়রা এটিকে জিনের মসজিদ নামে ডাকেন।

বলা হচ্ছে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়া মসজিদের কথা। এটি ঠাকুরগাঁও পৌর শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে বালিয়া ইউনিয়নের ছোট বালিয়া এলাকায় অবস্থিত।

জনশ্রুতি আছে, দেড় শ বছর আগে রাতের আঁধারে মসজিদটি নির্মাণ করেছিল হাজারো জিন। রাত পেরিয়ে ভোরের আলো ফুটতে শুরু করলে কিছু কাজ অসম্পূর্ণ রেখে চলে যায় তারা। তবে এসব লোককাহিনি গুজব বলে মনে করেন মসজিদের ইমামসহ মসজিদটির আধুনিকায়নের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা।

জানা গেছে, ১৮ শতকের শেষার্ধে বালিয়ার জমিদার মেহের বক্স চৌধুরী মসজিদটি নির্মাণের পরিকল্পনা করেন। ভারতের দিল্লি থেকে নির্মাণশিল্পী এনে মসজিদ নির্মাণকাজ শুরু করেন। এতে পোড়া ইটের সঙ্গে চুন-সুরকি ব্যবহার করা হয়। কিন্তু ছাদ পর্যন্ত নির্মাণের পর হঠাৎ প্রধান মিস্ত্রির মৃত্যু হলে গম্বুজ আর করা হয়নি। পরে স্থানীয় নির্মাণশ্রমিকদের দিয়ে কাজ শুরু করা হলেও মোগল স্থাপত্যশৈলীর দুর্বোধ্য নকশায় মসজিদের ছাদ ও গম্বুজ তৈরিতে বারবার ব্যর্থ হন তাঁরা। ১৯০৫ সালে মেহের বক্স চৌধুরীর মৃত্যু হয়। পরে নানা কারণে মসজিদ নির্মাণকাজ আর এগোয়নি। ধীরে ধীরে ওই স্থান পরিণত হয় জঙ্গলে।

৪২ ইঞ্চি প্রশস্ত দেয়ালের ওপরে দাঁড়িয়ে থাকা মসজিদটিতে রয়েছে ৩ গম্বুজ ও ১৬টি মিনার। আয়তাকার মসজিদটি উত্তর-দক্ষিণে ৬৯ ফুট ২ ইঞ্চি আর পূর্ব-পশ্চিমে ৬২ ফুট ৬ ইঞ্চি। মসজিদটিতে প্রবেশপথ, খোলা চত্বর ও নামাজঘরের অংশ আলাদা করা।

মেহের বক্স চৌধুরী বংশের ষষ্ঠ প্রজন্ম আফগান চৌধুরী বলেন, ‘মসজিদের ঐতিহাসিক গুরুত্বের কথা বিবেচনা করে আমাদের চাচা মৃত আনছারুল হক চৌধুরী এটি পুনর্নির্মাণকাজের উদ্যোগ নেন। পরে ২০০৫ সালে নামাজ আদায়ের উপযুক্ত করে তুলতে কাজ শুরু হয়। ২০১০ সালে মসজিদটি উদ্বোধন করা হয়। পুরোনো নকশার আদলে ওপরে তিনটি সুউচ্চ গম্বুজ নির্মাণ করা হয়।’

জিনের মসজিদ নামে পরিচিতি থাকলেও মসজিদের ইমাম খোরশেদ আলম মনে করেন, এর কোনো সত্যতা নেই।

মসজিদ দেখতে আসা ঠাকুরগাঁও হাজীপাড়া মহল্লার বাসিন্দা ফেরদৌসী খানম ও রিতু আক্তার বলেন, ‘শৈশবে মা-বাবার কাছে এই জিনের মসজিদের কথা শুনে আসছি। তখন ঢাকায় বসবাসের কারণে আসতে পারিনি। এবার ছুটি পেয়ে এসে কারুকার্যখচিত এ সুন্দর স্থাপনা দেখে আমরা মুগ্ধ হয়েছি।’

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মো. সামসুজ্জামান বলেন, ‘মসজিদটি ইতিমধ্যে জেলার পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে পরিণত হয়েছে। মসজিদ সংস্কারের জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে থেকে অনুদানের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। মসজিদের উন্নয়নে আরও কিছু প্রয়োজন পড়লে উপজেলা প্রশাসন তা দেখবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত