সারা রাত যুদ্ধ করে বালিউরা বাজার দখলে নেন তাজুলেরা

আশিস রহমান, দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ)
প্রকাশ : ২৬ মার্চ ২০২২, ০৪: ৪৭
আপডেট : ২৬ মার্চ ২০২২, ১৪: ০৬

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ঐতিহাসিক ভাষণ দেন শেখ মুজিবুর রহমান। সে সময় ঢাকার ইসলামিয়া গভর্নমেন্ট কলেজের (বর্তমানে কবি নজরুল সরকারি কলেজ) ছাত্র তাজুল ইসলাম। তিনি সেদিনের সমাবেশে কলেজ থেকে মিছিল নিয়ে যোগ দেন।

২৫ মার্চ রাতে সিলেটের ট্রেনে ঢাকা ছাড়েন তাজুল। পথিমধ্যে ফেঞ্চুগঞ্জ পৌঁছালে পাকিস্তানি বাহিনীর সিলেট আক্রমণের খবর পান। এ সময় তিনি হেঁটে ২৭ মার্চ সকালে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার সদর ইউনিয়নের পরমেশ্বরীপ পুরে গ্রামের বাড়িতে পৌঁছান।

এদিন রেডিওর মাধ্যমে স্বাধীনতা ঘোষণার খবর জানতে পারেন তিনি। এর সপ্তাহ দু-এক পরই গ্রামে পাল্টাপাল্টি শান্তি কমিটি ও স্বাধীন বাংলা সংগ্রাম কমিটি গঠন হয়। একদিন কারণ ছাড়াই বালিউরা বাজার থেকে তাজুল ইসলামকে পাকিস্তানি বাহিনী ধরে নিয়ে যায়। এ সময় তাজুলসহ আরও চারজনকে বালিউরা বাজারের মাদ্রাসা ঘরের পিলারে হাত-পা ও চোখ-মুখ বেঁধে রাখে। সেদিন ছাতকের নুরুল হক নামের পূর্বপরিচিত এক মাওলানা ছাড়িয়ে আনেন তাজুল ইসলামকে।

জুন মাসের ১১ তারিখের দিকে পরমেশ্বরীপ পুর ও বীরসিং গ্রামে পাকিস্তানি সেনারা প্রবেশ করে। গ্রামের গোপাল মাস্টারকে হত্যা করে বাড়িঘর লুটপাট করে আগুনে জ্বালিয়ে দেয়।

এসব ঘটনায় তাজুল ইসলাম গ্রামের মমতাজ উদ্দিন, সিরাজুল ইসলাম, আব্দুল মন্নাফসহ আরও কয়েকজনকে নিয়ে যোগ দেন মুক্তিযুদ্ধে। টেবলাই, দোয়ারাবাজার, বেতুরা, নরসিংপুর, ছাতকসহ বেশ কয়েকটি এলাকার অপারেশনে অংশ নেন তিনি।

এ যুদ্ধ বীর তাজুল ইসলাম পরমেশ্বরীপ পুর গ্রামের মৃত হাফেজ আমিনুল হকের সন্তান। ছয় ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তাজুল সবার বড়। তিনি দীর্ঘদিন শিক্ষকতা পেশায় ছিলেন। ২০১৫ সালে দোয়ারাবাজার সরকারি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে অবসর নেন। বর্তমানে তিনি উপজেলা সদরের মাস্টারপাড়া এলাকায় সপরিবারে বসবাস করছেন।

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণা করে তাজুল ইসলাম বলেন, ‘ভারতের ইকোয়ান প্রশিক্ষণকেন্দ্রের ৯ নম্বর ব্যাচে ২৮ দিনের প্রশিক্ষণ শেষ করে ১৭ জুলাই অস্ত্র হাতে পাই। ৩৬ জনের একটা প্লাটুনের কমান্ডার নিযুক্ত হই। ১৮ জুলাই চেলা সাবসেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন হেলালের কাছে রেঙ্গুয়া ক্যাম্পে রিপোর্ট পেশ করি। পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে প্রথম যুদ্ধ হয় বালিউরা বাজার দখল নিয়ে। সারা রাত যুদ্ধ করে পরের দিন সকালে বালিউরা বাজার দখল করি। এরপর ইদ্রিস কোম্পানির আওতায় বিভিন্ন যুদ্ধে অংশ নিই।’

মুক্তিযুদ্ধের স্মরণীয় ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তাজুল ইসলাম বলেন, ‘২৩ অক্টোবর টেবলাই যুদ্ধ হয়। তিন দিক থেকে পাকিস্তানি বাহিনী আমাদের আক্রমণ করে। এদিন নরসিংপুর ও হাদাটিলায় মারা যান ১৬ জন মুক্তিযোদ্ধা। আমার ফুপাতো ভাই প্লাটুন কমান্ডার আব্দুস সাত্তারকে হাদাটিলা থেকে পাকিস্তানি সেনারা ছাতকে ধরে নিয়ে হত্যা করে। তাঁর লাশ খুঁজে পাওয়া যায়নি।’

তাজুল ইসলাম আরও বলেন, ‘২৩ অক্টোবরের পর আমাদের কোম্পানি কমান্ডার হন সুবেদার নাসির উদ্দিন। তাঁর নেতৃত্বে গোবিন্দগঞ্জ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করি। ১৬ ডিসেম্বর রেডিওতে পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের খবর শুনতে পাই। এদিন মুক্তিযুদ্ধের ৫ নম্বর সেক্টরের বেসামরিক উপদেষ্টা এমএনএ আব্দুল হক গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যান। আমরা পাঁচজন ছাতকের কৈতক হাসপাতালে চার দিন অবস্থান করি। ২০ ডিসেম্বর লেফটেন্যান্ট মাহবুবের কাছে অস্ত্র জমা দিয়ে ২১ ডিসেম্বর বাড়ি ফিরে আসি।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত