Ajker Patrika

করোনায় পিছিয়েছে, এগোনোর উপায় কী?

সম্পাদকীয়
Thumbnail image

২০১৯ সালের শেষ দিকে চীনের একটি প্রদেশে করোনার জীবাণু প্রথম ধরা পড়ার পর থেকে দুই বছরের বেশি সময় চলে গেছে। করোনা মহামারি মোকাবিলায় বিশ্ববাসীকে হিমশিম খেতে হয়েছে এবং হচ্ছে। অদৃশ্য অথচ শক্তিশালী এই জীবাণু মানুষের মধ্যে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে জীবন সংশয়ের কারণ হয়েছে। এই জীবাণুকে নিয়ন্ত্রণের উপায় বের করতে সময় লেগেছে। তবে আশার কথা, করোনা যেমন দ্রুততম সময়ে পৃথিবীর দেশে দেশে ছড়িয়ে পড়ে দারুণ আতঙ্ক ছড়িয়েছে, লাখ লাখ মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে, তেমনি করোনার টিকা আবিষ্কারেও স্বল্প সময়েই সফলতা পাওয়া গেছে। পৃথিবী এখনো সম্পূর্ণভাবে করোনামুক্ত হয়নি। করোনাভাইরাস মানুষের জীবনকে নিয়ন্ত্রিত করে ফেলেছিল। এখনো করোনায় মানুষ মারা যাচ্ছে। তবে আশার কথা এটাই যে, করোনার বিস্তার রোধ করা আপাতত সম্ভব হয়েছে।

করোনায় মানুষের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি বেড়েছিল। কিন্তু করোনা মহামারির সঙ্গে মানুষের বসবাসের অভিজ্ঞতাও তৈরি হয়েছে। করোনাকাল অনেক দেশে অনেক ধরনের সংকটও তৈরি করেছিল। আমাদের দেশেই দীর্ঘ সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ঝরে পড়ার হার বেড়েছে। বাল্যবিবাহের প্রবণতা বেড়েছে। মানুষের আয়-উপার্জনের পথ রুদ্ধ হয়েছে। তবে গত বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) আওতায়  ‘অনিশ্চিত সময়, অস্থির জীবন’ শিরোনামের  ওই প্রতিবেদনে করোনা মহামারির ধাক্কায় মানব উন্নয়ন সূচকে পাঁচ বছর পিছিয়ে পড়েছে বিশ্ব। গত দুই বছরে মানুষের আয়ুষ্কাল, শিক্ষা ও জীবনযাপনের মান যে পরিমাণ কমেছে, তা নজিরবিহীন। কয়েক দশকে ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন সূচকে উন্নয়নের পর এভাবে পিছিয়ে যাওয়াটা মানব অগ্রগতির পথে একটি বড় ধাক্কা।

গড়ে মানব উন্নয়ন সূচকে বিশ্ব পিছিয়ে গেলেও সব দেশে তার প্রভাব এক নয়। কারণ, বিশ্বের অনেক উন্নত দেশ করোনার ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছে। ইউরোপ, উত্তর আমেরিকাসহ বিশ্বের বড় অর্থনীতিগুলো ইতিমধ্যে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে।

ইউএনডিপির প্রধান আচিম স্টাইনার এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ২০২২ সালের যেসব পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে, তাতে করে চলতি বছরটির মানব উন্নয়নের চিত্র আরও করুণ হতে পারে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চলতি বছর প্রায় ৮০টি দেশ তাদের আন্তর্জাতিক ঋণ পরিশোধের অক্ষমতার কথা জানিয়েছে। তাই ভবিষ্যতে যে বড় ধরনের বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে, তা সহজে অনুমান করা যায়। এসব বিপর্যয়ের ফল কয়েক বছর স্থায়ী হতে পারে।

ইউএনডিপির প্রধানের বক্তব্য উদ্বেগজনক। কারণ, সবারই তো চেষ্টা থাকে এগিয়ে যাওয়ার। কিন্তু করোনা যে পৃথিবীর এগিয়ে চলার ধারায় ব্যতিক্রম ঘটিয়ে বসে আছে, তার কী হবে? এই যে করোনা বিশ্বকে পাঁচ বছর পিছিয়ে দিল, এখন সমান অবস্থায় আসতে হলে ১০ বছর এগিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করতে হবে।

ইউএনডিপির প্রতিবেদনেই বলা হয়েছে, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, নতুন মহামারির জন্য প্রস্তুতি এবং নিত্যনতুন সংকট মোকাবিলায় উদ্ভাবনে জোর দেওয়া হলে বিপর্যয় রোধ করা যেতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত