সঙ্গীতা ইমাম
সেদিন (১৭ জুলাই) শহীদ মিনার থেকে বিদায় দিয়ে এলাম এক গানের পাখিকে, আমাদের মুক্তিসংগ্রামের এক বীর যোদ্ধাকে। শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে ফুলের বেদনায় বিদায় জানালাম বাংলার সেই সাহসী সন্তানকে, যিনি শৈশব উত্তীর্ণ সময়ে দেশের মুক্তির জন্য কণ্ঠের অস্ত্রে যুদ্ধ করেছেন। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কনিষ্ঠ কণ্ঠযোদ্ধা বুলবুল মহলানবীশ প্রয়াত হয়েছেন।
সোমবার বৃষ্টিস্নাত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের লাল চত্বরে, লাল সবুজের পতাকায় ঢাকা বুলবুল মহলানবীশকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় গার্ড অব অনারের মাধ্যমে শ্রদ্ধায় শেষবিদায় জানানো হয়েছে। থেমে গেল সেই কণ্ঠ, যে কণ্ঠের উদ্দীপনা মুক্তিযোদ্ধাদের আন্দোলিত করেছিল, শপথে বলীয়ান করেছিল গ্রামেগঞ্জে, শহরে-বন্দরে, ট্রেঞ্চে আর বাংকারে। একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষ শুনেছিল, ‘বিজয় নিশান উড়ছে ওই’।
একাত্তরে আমার বাবা-মা সৈয়দ হাসান ইমাম ও লায়লা হাসানের সঙ্গে আড়াই বছরের আমিও যাতায়াত করতাম কলকাতার বালিগঞ্জের স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে। সে সময় আমি বীর মুক্তিযোদ্ধা বুলবুল মহলানবীশকে দেখেছি কি না, তাঁর আদর পেয়েছি কি না, আমার স্মরণে নেই। তবে মায়ের কাছে শুনেছি, সদ্য বিবাহিত বুলবুল খালার বীর মুক্তিযোদ্ধা স্বামী সাব সেক্টর কমান্ডার সরিত কুমার লালা তখন সম্মুখ সমরে। আর বুলবুল খালা কলকাতার এক শহরতলি থেকে রোজ ট্রেনে-বাসে করে আসতেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অফিসে।
মহড়া, রেকর্ডিং সেরে, বাজার করে আবার ফিরে যেতেন সেখানে। অসাধারণ সুন্দরী ছিলেন। সেই বিড়ম্বনাও সইতে হতো পথেঘাটে। এত কিছুর পরেও দেশপ্রেমে কোনো ঘাটতি ছিল না। তিনি যেমন ছিলেন অপরূপ সুন্দর, তেমনি ছিলেন দুর্দান্ত সাহসী। আর প্রতিভায় ছিলেন বহুমাত্রিক। বুলবুল মহলানবীশ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে কেবল যে সংগীতশিল্পী হিসেবে যুদ্ধ করেছেন, তা-ই নয়; তিনি অভিনয়শিল্পী হিসেবেও কাজ করেছেন। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে কল্যাণ মিত্রের জল্লাদের দরবার নাটকে তিনি মূল নারী চরিত্রে অভিনয় করতেন। এ নাটকটি তখন অনেক জনপ্রিয় ছিল। আমাদের সাংস্কৃতিক ইতিহাসেও এ নাটকটির গুরুত্ব অপরিসীম।
আমি যখন সাংস্কৃতিক আন্দোলনে যুক্ত হয়েছি, বুলবুল মহলানবীশ তখন জ্বলজ্বলে নক্ষত্র। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী হয়েও রাজপথের আন্দোলনে তাঁকে নিয়মিত পেয়েছি। ১৯৭৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স করার পর তিনি প্রবাসে চলে গিয়েছিলেন। ১৯৮৭ সালে ফিরে আসেন ঢাকায় এবং এসেই যুক্ত হন নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে। আমরা তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, ডাকসুর সাংস্কৃতিক দলের প্রতিনিধি হিসেবে অশোক কর্মকারের নেতৃত্বে সারা দেশে সাংস্কৃতিক আন্দোলনের কাজ করছি।
তখন বুলবুল খালাকে দেখেছি আন্দোলনের নানা পর্যায়ে সক্রিয় ছিলেন। তাঁর উপস্থিতি আমাদের প্রাণিত করত। শিল্পের অগ্রযাত্রায় উদীচীর সব আয়োজনে, কখনো পরিবেশনায়, কখনো বক্তব্যে, কখনো প্রশিক্ষক হিসেবে, আবার কখনো বা বিচারক হিসেবে ডাকলে তাঁকে পাইনি—এমন ঘটনা কখনোই ঘটেনি। সারা দেশের সাংগঠনিক নানা প্রশিক্ষণেও ছিল তাঁর সাগ্রহ উপস্থিতি। এমন একজন প্রাণবন্ত সংস্কৃতিজন চলে গেলেন সবাইকে অশ্রুসিক্ত করে। সময়ের নিষ্ঠুর সত্য হলেও, এ সত্য আমরা মেনে নিতে পারি না; অন্তত বুলবুল খালাকে আমরা যারা কাছ থেকে দেখেছি, তাঁর স্নেহ-ভালোবাসা পেয়েছি।
প্রকৃতি উদ্যাপনের সর্বজনীন উৎসবগুলো অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ায় কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা বুঝেছিলেন আমাদের পথিকৃৎ প্রজন্ম। জাতীয় নবান্নোৎসব উদ্যাপন পর্ষদ গ্রাম বাংলার প্রাচীনতম উৎসবের অন্যতম নবান্ন উদ্যাপন করে দেশের বিভিন্ন স্থানে। এই কমিটির সহসভাপতি বুলবুল মহলানবীশ। প্রতিটি আয়োজনে অর্থ সংগ্রহ থেকে শুরু করে বিজ্ঞাপন জোগাড়সহ বহু কাজে যুক্ত থাকতেন তিনি। সরবে অংশ নিতেন সভাগুলোয়। নিতেন বলিষ্ঠ সিদ্ধান্ত। উজ্জ্বল এ মহাপ্রাণের সঙ্গে কাজ করেছি উদীচীতে। অনুষ্ঠান আয়োজনে তাঁর আলোকিত উপস্থিতি আমাদের শিখিয়েছে অনেক কিছু। কেবল উদীচীই নয়, বুলবুল মহলানবীশ ছিলেন নজরুলসংগীত শিল্পী পরিষদের সহসভাপতি, ছিলেন রবীন্দ্র একাডেমির সাধারণ সম্পাদক। জাতীয় কবিতা পরিষদ, কচি-কাঁচার মেলা, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র শিল্পী পরিষদসহ বহু সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন।
বুলবুল খালার সঙ্গে আমার আরেকটি স্মৃতিময় স্থান হলো অমর একুশে বইমেলা। এবারের মেলায় অসুস্থ থাকার কারণে তাঁর সঙ্গে আমার দেখা হয়নি। কিন্তু করোনার আগে, প্রতিটি মেলাতেই তাঁর সঙ্গে আমার দেখা হতো। কী অপার স্নেহে তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরতেন মেলার মাঠে! লেখালেখির খোঁজ নিতেন, আমার বইয়ের খোঁজ নিতেন। খালার বইগুলো আমার বুকশেলফে আজও সযত্নে রাখা আছে।
তাঁর শুভেচ্ছাবার্তা লেখা বইগুলোর প্রথম পাতা দেখলে কত স্মৃতি মনে পড়ে যাচ্ছে। ১২টির বেশি বই রয়েছে লেখক বুলবুল মহলানবীশের। তাঁর লেখা দুটো বই—‘পূর্ব বাংলার সাংস্কৃতিক আন্দোলন ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ’ এবং ‘মুক্তিযুদ্ধের পূর্ব প্রস্তুতি ও স্মৃতি ’৭১’ বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ আকর। নতুন প্রজন্মের প্রত্যেকেরই এ বই দুটো পড়া উচিত আমাদের ইতিহাসের সত্য তথ্য জানতে।
সত্যিকার অর্থে, মুক্তিযুদ্ধে গড়ে ওঠা সম্পর্ক রক্তের সব সম্পর্ককে ছাপিয়ে যায়। একাত্তরের সেই উত্তাল দুর্বহ দিনগুলোতে আমরা একসঙ্গে জীবন কাটিয়েছি, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পীরা নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও মুক্তিযুদ্ধ চালিয়েছেন। সে সময়েই সম্পর্কে তিনি আমার মায়ের ছোট বোন হয়ে গিয়েছিলেন, আর আমার কাছে হয়ে উঠেছিলেন প্রিয় বুলবুল খালা। তাঁর আদর পেয়েছি অফুরান।
সুমিষ্ট বচনে সেই আদর অতুলনীয়। আমাদের মনে রাখতে হবে, যে বীর প্রজন্মের লড়াইয়ে আমরা পেয়েছি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ, সেই বাংলাদেশকে মুক্তিসংগ্রামের আদর্শে প্রোজ্জ্বল করার দায়িত্ব আমাদের। শুধু অশ্রু নদীতে ভাসলেই দায়িত্ব শেষ হবে না।
যে দায়িত্ব বীর মুক্তিযোদ্ধা বুলবুল মহলানবীশ আমাদের কাঁধে তুলে দিয়েছেন, তা পালনের শপথ মঞ্চই যেন ছিল শহীদ মিনার। বুলবুল মহলানবীশের মতো মানুষের মৃত্যু নেই। তিনি বিরাজ করবেন আমাদের অন্তরে। অতল শ্রদ্ধা বীর মুক্তিযোদ্ধা শিল্পী-সংগ্রামী বুলবুল মহলানবীশের প্রতি।
লেখক: শিক্ষক ও সংস্কৃতিকর্মী
সেদিন (১৭ জুলাই) শহীদ মিনার থেকে বিদায় দিয়ে এলাম এক গানের পাখিকে, আমাদের মুক্তিসংগ্রামের এক বীর যোদ্ধাকে। শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে ফুলের বেদনায় বিদায় জানালাম বাংলার সেই সাহসী সন্তানকে, যিনি শৈশব উত্তীর্ণ সময়ে দেশের মুক্তির জন্য কণ্ঠের অস্ত্রে যুদ্ধ করেছেন। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কনিষ্ঠ কণ্ঠযোদ্ধা বুলবুল মহলানবীশ প্রয়াত হয়েছেন।
সোমবার বৃষ্টিস্নাত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের লাল চত্বরে, লাল সবুজের পতাকায় ঢাকা বুলবুল মহলানবীশকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় গার্ড অব অনারের মাধ্যমে শ্রদ্ধায় শেষবিদায় জানানো হয়েছে। থেমে গেল সেই কণ্ঠ, যে কণ্ঠের উদ্দীপনা মুক্তিযোদ্ধাদের আন্দোলিত করেছিল, শপথে বলীয়ান করেছিল গ্রামেগঞ্জে, শহরে-বন্দরে, ট্রেঞ্চে আর বাংকারে। একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষ শুনেছিল, ‘বিজয় নিশান উড়ছে ওই’।
একাত্তরে আমার বাবা-মা সৈয়দ হাসান ইমাম ও লায়লা হাসানের সঙ্গে আড়াই বছরের আমিও যাতায়াত করতাম কলকাতার বালিগঞ্জের স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে। সে সময় আমি বীর মুক্তিযোদ্ধা বুলবুল মহলানবীশকে দেখেছি কি না, তাঁর আদর পেয়েছি কি না, আমার স্মরণে নেই। তবে মায়ের কাছে শুনেছি, সদ্য বিবাহিত বুলবুল খালার বীর মুক্তিযোদ্ধা স্বামী সাব সেক্টর কমান্ডার সরিত কুমার লালা তখন সম্মুখ সমরে। আর বুলবুল খালা কলকাতার এক শহরতলি থেকে রোজ ট্রেনে-বাসে করে আসতেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অফিসে।
মহড়া, রেকর্ডিং সেরে, বাজার করে আবার ফিরে যেতেন সেখানে। অসাধারণ সুন্দরী ছিলেন। সেই বিড়ম্বনাও সইতে হতো পথেঘাটে। এত কিছুর পরেও দেশপ্রেমে কোনো ঘাটতি ছিল না। তিনি যেমন ছিলেন অপরূপ সুন্দর, তেমনি ছিলেন দুর্দান্ত সাহসী। আর প্রতিভায় ছিলেন বহুমাত্রিক। বুলবুল মহলানবীশ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে কেবল যে সংগীতশিল্পী হিসেবে যুদ্ধ করেছেন, তা-ই নয়; তিনি অভিনয়শিল্পী হিসেবেও কাজ করেছেন। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে কল্যাণ মিত্রের জল্লাদের দরবার নাটকে তিনি মূল নারী চরিত্রে অভিনয় করতেন। এ নাটকটি তখন অনেক জনপ্রিয় ছিল। আমাদের সাংস্কৃতিক ইতিহাসেও এ নাটকটির গুরুত্ব অপরিসীম।
আমি যখন সাংস্কৃতিক আন্দোলনে যুক্ত হয়েছি, বুলবুল মহলানবীশ তখন জ্বলজ্বলে নক্ষত্র। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী হয়েও রাজপথের আন্দোলনে তাঁকে নিয়মিত পেয়েছি। ১৯৭৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স করার পর তিনি প্রবাসে চলে গিয়েছিলেন। ১৯৮৭ সালে ফিরে আসেন ঢাকায় এবং এসেই যুক্ত হন নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে। আমরা তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, ডাকসুর সাংস্কৃতিক দলের প্রতিনিধি হিসেবে অশোক কর্মকারের নেতৃত্বে সারা দেশে সাংস্কৃতিক আন্দোলনের কাজ করছি।
তখন বুলবুল খালাকে দেখেছি আন্দোলনের নানা পর্যায়ে সক্রিয় ছিলেন। তাঁর উপস্থিতি আমাদের প্রাণিত করত। শিল্পের অগ্রযাত্রায় উদীচীর সব আয়োজনে, কখনো পরিবেশনায়, কখনো বক্তব্যে, কখনো প্রশিক্ষক হিসেবে, আবার কখনো বা বিচারক হিসেবে ডাকলে তাঁকে পাইনি—এমন ঘটনা কখনোই ঘটেনি। সারা দেশের সাংগঠনিক নানা প্রশিক্ষণেও ছিল তাঁর সাগ্রহ উপস্থিতি। এমন একজন প্রাণবন্ত সংস্কৃতিজন চলে গেলেন সবাইকে অশ্রুসিক্ত করে। সময়ের নিষ্ঠুর সত্য হলেও, এ সত্য আমরা মেনে নিতে পারি না; অন্তত বুলবুল খালাকে আমরা যারা কাছ থেকে দেখেছি, তাঁর স্নেহ-ভালোবাসা পেয়েছি।
প্রকৃতি উদ্যাপনের সর্বজনীন উৎসবগুলো অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ায় কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা বুঝেছিলেন আমাদের পথিকৃৎ প্রজন্ম। জাতীয় নবান্নোৎসব উদ্যাপন পর্ষদ গ্রাম বাংলার প্রাচীনতম উৎসবের অন্যতম নবান্ন উদ্যাপন করে দেশের বিভিন্ন স্থানে। এই কমিটির সহসভাপতি বুলবুল মহলানবীশ। প্রতিটি আয়োজনে অর্থ সংগ্রহ থেকে শুরু করে বিজ্ঞাপন জোগাড়সহ বহু কাজে যুক্ত থাকতেন তিনি। সরবে অংশ নিতেন সভাগুলোয়। নিতেন বলিষ্ঠ সিদ্ধান্ত। উজ্জ্বল এ মহাপ্রাণের সঙ্গে কাজ করেছি উদীচীতে। অনুষ্ঠান আয়োজনে তাঁর আলোকিত উপস্থিতি আমাদের শিখিয়েছে অনেক কিছু। কেবল উদীচীই নয়, বুলবুল মহলানবীশ ছিলেন নজরুলসংগীত শিল্পী পরিষদের সহসভাপতি, ছিলেন রবীন্দ্র একাডেমির সাধারণ সম্পাদক। জাতীয় কবিতা পরিষদ, কচি-কাঁচার মেলা, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র শিল্পী পরিষদসহ বহু সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন।
বুলবুল খালার সঙ্গে আমার আরেকটি স্মৃতিময় স্থান হলো অমর একুশে বইমেলা। এবারের মেলায় অসুস্থ থাকার কারণে তাঁর সঙ্গে আমার দেখা হয়নি। কিন্তু করোনার আগে, প্রতিটি মেলাতেই তাঁর সঙ্গে আমার দেখা হতো। কী অপার স্নেহে তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরতেন মেলার মাঠে! লেখালেখির খোঁজ নিতেন, আমার বইয়ের খোঁজ নিতেন। খালার বইগুলো আমার বুকশেলফে আজও সযত্নে রাখা আছে।
তাঁর শুভেচ্ছাবার্তা লেখা বইগুলোর প্রথম পাতা দেখলে কত স্মৃতি মনে পড়ে যাচ্ছে। ১২টির বেশি বই রয়েছে লেখক বুলবুল মহলানবীশের। তাঁর লেখা দুটো বই—‘পূর্ব বাংলার সাংস্কৃতিক আন্দোলন ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ’ এবং ‘মুক্তিযুদ্ধের পূর্ব প্রস্তুতি ও স্মৃতি ’৭১’ বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ আকর। নতুন প্রজন্মের প্রত্যেকেরই এ বই দুটো পড়া উচিত আমাদের ইতিহাসের সত্য তথ্য জানতে।
সত্যিকার অর্থে, মুক্তিযুদ্ধে গড়ে ওঠা সম্পর্ক রক্তের সব সম্পর্ককে ছাপিয়ে যায়। একাত্তরের সেই উত্তাল দুর্বহ দিনগুলোতে আমরা একসঙ্গে জীবন কাটিয়েছি, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পীরা নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও মুক্তিযুদ্ধ চালিয়েছেন। সে সময়েই সম্পর্কে তিনি আমার মায়ের ছোট বোন হয়ে গিয়েছিলেন, আর আমার কাছে হয়ে উঠেছিলেন প্রিয় বুলবুল খালা। তাঁর আদর পেয়েছি অফুরান।
সুমিষ্ট বচনে সেই আদর অতুলনীয়। আমাদের মনে রাখতে হবে, যে বীর প্রজন্মের লড়াইয়ে আমরা পেয়েছি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ, সেই বাংলাদেশকে মুক্তিসংগ্রামের আদর্শে প্রোজ্জ্বল করার দায়িত্ব আমাদের। শুধু অশ্রু নদীতে ভাসলেই দায়িত্ব শেষ হবে না।
যে দায়িত্ব বীর মুক্তিযোদ্ধা বুলবুল মহলানবীশ আমাদের কাঁধে তুলে দিয়েছেন, তা পালনের শপথ মঞ্চই যেন ছিল শহীদ মিনার। বুলবুল মহলানবীশের মতো মানুষের মৃত্যু নেই। তিনি বিরাজ করবেন আমাদের অন্তরে। অতল শ্রদ্ধা বীর মুক্তিযোদ্ধা শিল্পী-সংগ্রামী বুলবুল মহলানবীশের প্রতি।
লেখক: শিক্ষক ও সংস্কৃতিকর্মী
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৩ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৩ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৩ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৩ দিন আগে