দাম বাড়ায় দুশ্চিন্তায় কৃষক

ইলিয়াস আহমেদ, ময়মনসিংহ
প্রকাশ : ০৫ আগস্ট ২০২২, ০৮: ১১
আপডেট : ০৫ আগস্ট ২০২২, ১২: ০৬

ইউরিয়া সারের দাম হঠাৎ কেজিপ্রতি ৬ টাকা বেড়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় ময়মনসিংহ অঞ্চলের কৃষকেরা। তাঁরা বলছেন ধান উৎপাদন করে খুব বেশি লাভ হয় না। এ বছর বোরো ধান করে মোটামুটি সবাই লোকসানের মধ্যে রয়েছেন। আমন ফসলকে সামনে রেখে সারের দাম বৃদ্ধি করা কোনোভাবেই সরকারের উচিত হয়নি। তবে কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, সারের দাম বৃদ্ধি পেলেও কৃষকেরা ধান উৎপাদন করে লাভবান হবেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় গত মৌসুমে ২ লাখ ৬০ হাজার ৩১৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ, ১৭ হাজার ৭৬৫ হেক্টর জমিতে আউশ ধান আবাদ হয়েছে। চলতি বছরে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ২ লাখ ৬৮ হাজার ৩২০ হেক্টর জমিতে। কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন সারের দাম বাড়লেও কৃষকদের হতাশা হওয়ার কোনো কারণ নেই। আশা করা যাচ্ছে উন্নত প্রযুক্তির কারণে ধানের ফলনও ভালো হবে। কৃষক তাঁর উৎপাদিত ধানের যথাযথ মূল্যও পাবেন।

আমন আবাদকে সামনে রেখে ময়মনসিংহে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকেরা। বৃষ্টি না হওয়ায় কিছুটা বিপাকে কৃষক। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাঠে কাজ করতে দেখা গেছে অনেক কৃষককে। ময়মনসিংহ সদর উপজেলার পরাণগঞ্জ ইউনিয়নের সানাদিয়া গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আবাদের জন্য ৬৬ শতাংশ জমি প্রস্তুত করছেন। তাঁদের এখানে কাঠাপ্রতি জমিতে কমপক্ষে ৫ থেকে ৬ মণ করে ধান হয়। বিগত সময়ে ধান উৎপাদন করে লাভ হলেও এবার সারের দাম বাড়ায় লাভের চেয়ে ক্ষতির শঙ্কা বেশি। প্রতি কাঠা জমিতে খরচ হয় দুই থেকে তিন হাজার টাকা।

মোখলেসুর রহমান বলেন, গত বছর ২৮ কাঠা জমিতে আমন ধান করেছি। এ বছর একজনের আরও ৪ কাঠা জমি বর্গা নিয়েছি। কিন্তু হঠাৎ করে সরকার সারের দাম বাড়িয়ে দেওয়ায় মনে হচ্ছে না আমরা কৃষি আবাদ করে চলতে পারব। ধান উৎপাদনে প্রয়োজনীয় সামগ্রীর যেভাবে দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে, কিন্তু আমরা ধান বিক্রি করতে গেলেই দাম কমে যায়। সাধারণ কৃষকদের নিয়ে সরকারের কোনো ভাবনা নেই।

ফয়সাল মিয়া নামের আরেকজন বলেন, ‘আগে সার ৮০০ টাকা বস্তা ছিল। এখন ১ হাজার ১০০ টাকায় কিনতে হবে। আরও তো অন্যান্য অনেক খরচ রয়েছে। বুঝতে পারছি না কীভাবে কৃষি করে সংসারের খরচ এবং ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার খরচ চালাব।’

কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘সরকার সারের দাম বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাজারেও সার পাওয়া যাচ্ছে না। যত সমস্যা কৃষককে নিয়ে। সবকিছুর দাম বাড়ে, কিন্তু ধানের দাম বাড়ে না। তাহলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চলবে, সেটা সরকারকে ভাবা উচিত। বোরো ধানের বাম্পার ফলনের পরেও আমাদের অনেককে লোকসান গুনতে হয়েছে। কারণ টানা বৃষ্টিতে ধান নষ্ট হয়ে গেছিল। এখন বৃষ্টির জন্য খেত শুকিয়ে গেছে।’

ময়মনসিংহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মতিউজ্জামান বলেন, ‘এ বছর আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ২ লাখ ৬৮ হাজার ৩২০ হেক্টর জমিতে। এই অঞ্চল ধান চাষে উপযোগী হওয়ায় এবং ধানের দাম পাওয়ায় কৃষকেরা বিগত সময়ের তুলনায় বর্তমান সময়ে ধান চাষে ঝুঁকছেন। একটা সময় কৃষক সারের জন্য হাহাকার করলেও এখন সারসহ কৃষকদের যাবতীয় উপকরণ সহজলভ্য হওয়ায় কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সারের দাম বাড়লেও কৃষকদের লোকসান হবে না। কারণ এখন উন্নত জাতের বীজ রয়েছে। এসবে প্রচুর ধান হয়। এ ছাড়া সরকার কৃষকদের সহযোগিতা করছে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত