প্রকৃতিবান্ধব আস-সালাম জামে মসজিদ

মিসু সাহা নিক্কন, রামগতি (লক্ষ্মীপুর)
প্রকাশ : ১২ আগস্ট ২০২২, ০৬: ৪৫
আপডেট : ২৬ মার্চ ২০২৩, ২১: ১১

লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরাঞ্চলে গড়ে উঠেছে পরিবেশবান্ধব নান্দনিক এক মসজিদ। মসজিদটি বৈদ্যুতিক বাতি ছাড়াই প্রাকৃতিক আলোয় সব সময় আলোকিত থাকে। বর্ষা মৌসুমে মেলে বৃষ্টির ছোঁয়া। গত শীত মৌসুমে মুসল্লিরা উপভোগ করেছেন কুয়াশার শীতলতা। পূর্ণিমা রাতে চাঁদের আলো মুগ্ধতা ছড়ায় মসজিদের অন্দরে অন্দরে; মনে হয়, এ এক অপরূপ সৃষ্টি।

নজরকাড়া নকশায় নির্মিত মসজিদটি রামগতির চরপোড়াগাছা ইউনিয়নের শেখের কিল্লা এলাকায়। মসজিদটির নাম আস-সালাম জামে মসজিদ ও ঈদগাহ সোসাইটি। নান্দনিক স্থাপত্যশৈলীর মসজিদটি দেখতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসছেন উৎসুক মানুষ।

দ্বিতল এ মসজিদে কোনো আলাদা জানালা নেই। মসজিদটির নকশাই এমন শৈল্পিক যে চারদিক থেকে কোনো বাধা ছাড়াই আলো-বাতাস প্রবেশ করে ভেতরে। তবে মুসল্লিদের প্রবেশ ও বের হওয়ার জন্য দুটি দরজা রয়েছে।

­মসজিদের ভেতরে বসেই মুসল্লিরা উপভোগ করতে পারেন রোদ-বৃষ্টি-কুয়াশা। তবে এখানে রোদের তাপে কাউকে পুড়তে হয় না, বৃষ্টিতেও কাউকে ভিজতে হয় না। গ্রীষ্মে মসজিদ শীতল রাখার জন্য ভেতরে রয়েছে শীতল পাথরসহ পানি সংরক্ষণের চারটি জলাধার।

আস-সালাম মসজিদের ছাদ প্রচলিত মসজিদের ছাদের মতো নয়; এটি প্রকৃতিবান্ধব নান্দনিক নকশায় তৈরি। মসজিদের বাইরে থেকে নজর বোলালে মনে হয়—পুরো দেয়াল ইটের তৈরি। মূলত ইট দেখা গেলেও ভেতরে রয়েছে রড, সিমেন্ট ও ইটের মিশ্রণে আরসিসির ঢালাই।

পুরো মসজিদে একসঙ্গে ৪০০ জন মুসল্লি জামাতে নামাজ আদায় করতে পারেন। জানা গেছে, আস-সালাম জামে মসজিদ ও ঈদগাহ সোসাইটিটি স্থানীয় রহিমা মমতাজ ও সাইফ সালাহউদ্দিন ট্রাস্টের উদ্যোগে একান্তই আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ আর জনহিতকর কাজের অংশ হিসেবে নির্মাণ করা হয়েছে।

আস-সালাম জামে মসজিদ ও ঈদগাহ সোসাইটি, রামগতি, লক্ষ্মীপুর। ছবি: আজকের পত্রিকাট্রাস্ট সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে এই মসজিদ নির্মাণকাজ শুরু হয়। মসজিদটির নকশা তৈরিতে বাংলাদেশি একটি স্থাপত্য প্রতিষ্ঠান এবং সঙ্গে ছিলেন কয়েকজন বিদেশি স্থপতি। বিরতিহীন কাজের পর ২০২১ সালের শেষের দিকে মসজিদটি মুসল্লিদের ইবাদতের জন্য খুলে দেওয়া হয়। প্রায় চার হাজার বর্গফুটের দোতলা এ মসজিদ নির্মাণে ব্যয়ভার বহন করেছে রহিমা মমতাজ ও সাইফ সালাহউদ্দিন ট্রাস্ট।

এদিকে নান্দনিক মসজিদ এবং আধুনিক শিক্ষা কমপ্লেক্স নির্মাণ করলেও প্রতিষ্ঠাতা নিজেকে প্রচারের আড়ালে রাখতেই পছন্দ করেন। স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রহিমা মমতাজ ও সাইফ সালাহউদ্দিন ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা সুপ্রিম কোর্টের একজন সিনিয়র আইনজীবী। তিনি তাঁর বাবা-মায়ের নামেই ট্রাস্টটি গঠন করেন। এর মাধ্যমে তিনি জনহিতকর কাজ পরিচালিত করে আসছেন। এ মসজিদটি তারই একটি অংশ মাত্র। এ ছাড়া এখানে আন্তর্জাতিক মানের একটি হাফেজিয়া মাদ্রাসা, একটি গার্লস স্কুল এবং একটি কলেজ নির্মাণ করা হচ্ছে।

ট্রাস্ট সূত্রে জানা যায়, মসজিদ নির্মাণ ছিল প্রথম উদ্যোগ। দ্বিতীয় উদ্যোগে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এখন গার্লস স্কুলের কাজ চলছে। ২০২৩ সালের মধ্যে তা চালু হবে। পরের ২-৩ বছরের মধ্যে একটি কলেজও চালু করা হবে। আরবি ও ইংরেজি শিক্ষার সমন্বিত সিলেবাসে পরিচালিত মাদ্রাসাটি ২০২১ সালের নভেম্বর থেকে চালু হয়েছে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত