মামলায় পদোন্নতি বঞ্চিত ৩০ হাজার প্রাথমিক শিক্ষক

রাহুল শর্মা, ঢাকা
প্রকাশ : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৮: ০০

প্রায় ১৪ বছর পর গত আগস্টে শুরু হয়েছিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি কার্যক্রম। কিন্তু মাত্র ছয় মাসের মাথায় মামলাসংক্রান্ত জটিলতায় ফের আটকে গেছে তা। এতে পদোন্নতিবঞ্চিত হচ্ছেন প্রায় ৩০ হাজার সহকারী শিক্ষক। স্থায়ী প্রধান শিক্ষক না থাকায় স্কুলগুলোও চলছে ঢিমেতালে।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই) সূত্র জানায়, গত বছরের ৩ আগস্ট লক্ষ্মীপুর জেলার তিন উপজেলার সহকারী শিক্ষককে প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি দেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর মধ্য দিয়ে শুরু হয় পদোন্নতি কার্যক্রম। সর্বশেষ ৬ নভেম্বর পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে ১৯ উপজেলায় ৯৪১ জন সহকারী শিক্ষক পদোন্নতি পান। এরপর চলতি বছরের জানুয়ারিতে জাতীয়করণকৃত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ৫০ শতাংশ চাকরিকাল গণনাসংক্রান্ত মামলায় ফের আটকে যায় পদোন্নতি কার্যক্রম।

প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি বন্ধ থাকার তথ্য নিশ্চিত করেছেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত। ১৯ ফেব্রুয়ারি আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশে সহকারী শিক্ষকদের প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্যমতে, দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে ৬৫ হাজার ৫৬৫ টি। এসব বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২ কোটি ৫ লাখ ৪৬ হাজার ৯১। আর  শিক্ষক আছেন ৩ লাখ ৬২ হাজার ৭০৯ জন।

অন্যদিকে ডিপিই সূত্র জানায়, সারা দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গত বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত প্রধান শিক্ষকের পদোন্নতিযোগ্য শূন্য পদ ছিল ২৯ হাজার ১৬৭। এর মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের চলতি দায়িত্ব দিয়েছে ১৫ হাজার ৪৯৮টি বিদ্যালয়ে। আর বাকি ১৩ হাজার ৬৬৯ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদে সিনিয়র শিক্ষকেরা দায়িত্ব পালন করছেন। গত ৭ মাসে আরও প্রায় ১ হাজার বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অবসরে গিয়েছেন। সেই হিসাবে শূন্য পদের সংখ্যা ৩০ হাজারের কম নয়।

এ বিষয়ে ডিপিইর ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অসৎ উদ্দেশ্যে ২০১৩ সালের গেজেটের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে মামলা করেছেন জাতীয়করণকৃত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। এতে আটকে গেছে পুরো পদোন্নতি কার্যক্রম।

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, মামলার কারণে বারবার পিছিয়ে যাচ্ছে পদোন্নতি। আর মামলার কথা বলে শিক্ষকদের ভুল বুঝিয়ে টাকা আদায় করা হচ্ছে। এতে কতিপয় ব্যক্তি লাভবান হলেও গোটা শিক্ষক সমাজ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বলা যায়, মামলাজটে কাহিল অবস্থা অধিদপ্তরের।

জানা যায়, ২০০৯ সালে একটি মামলার কারণে সারা দেশে পদোন্নতির মাধ্যমে প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদ পূরণ বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৪ সালে এ মামলার নিষ্পত্তি হয়। কিন্তু একই বছর প্রধান শিক্ষকের পদ দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত করা হয়। এতে ওই পদে নিয়োগ ও পদোন্নতির বিষয়টি চলে যায় বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) অধীনে। ফলে আবার বন্ধ হয়ে যায় পদোন্নতির মাধ্যমে শূন্য পদ পূরণ।পরে ২০১৭ সালের ২৩ মে থেকে প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয় সহকারী শিক্ষকদের।

এদিকে স্থায়ী প্রধান শিক্ষক না থাকায় সুশৃঙ্খলভাবে বিদ্যালয় পরিচালনা সম্ভব হচ্ছে না অনেক জায়গায়। ব্যাহত হচ্ছে শ্রেণিকক্ষে পাঠদানও। দেশের বিভিন্ন স্থানে খোঁজ নিয়ে প্রধান শিক্ষক না থাকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বেহাল অবস্থা উঠে এসেছে।

দীর্ঘদিন ধরে প্রধান শিক্ষক নেই চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই উপজেলার ছোট কমলদহ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। বিদ্যালয়টিতে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মো. বদিউল আলম নামের এক শিক্ষক। বদিউল আলম বলেন, নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত হিসেবে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। এতে স্বাভাবিক পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

বাগেরহাট সদর উপজেলার উত্তর হাঁড়িখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ও চলছে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়ে। জানতে চাইলে বিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শারমিনা হক হীরা বলেন, ভারপ্রাপ্তের দায়িত্ব থাকলে অনেক সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয় না। এতে বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ কার্যক্রম ব্যাহত হয়।

পদোন্নতি কার্যক্রম বন্ধ থাকায় শিক্ষক সমাজ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জানিয়ে বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সিনিয়র সহসভাপতি রাজেশ মজুমদার বলেন, মামলার জটিলতায় প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি বন্ধ থাকার বিষয়টি দুঃখজনক। কতিপয় ব্যক্তি অসৎ উদ্দেশ্যে মামলা করে গোটা শিক্ষক সমাজকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। রাজেশ মজুমদার আরও বলেন, দীর্ঘদিন ধরে পদোন্নতি না থাকায় সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন হতে হচ্ছে। এ বিষয়ে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানাই। 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত