মহিউদ্দিন খান মোহন
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন নতুন নাটক মঞ্চস্থ হওয়ার আভাস স্পষ্ট হয়ে উঠছে। প্রতিটি নির্বাচনের আগেই এ ধরনের নাটক, যাত্রাপালা, একাঙ্কিকা মঞ্চস্থ হতে দেখা যায়। সেই সব নাটক, যাত্রাপালা, একাঙ্কিকার পাত্রপাত্রীরা আমাদের সুপরিচিত। তাঁরা কেউ পার্টি বদল করেন, কেউ জোট ভেঙে নতুন জোট করেন। আবার কেউ কেউ বেশ চড়া দামে বিক্রি হয়ে যান। নির্বাচনের আগে এসব দেখতে দেখতে দর্শক, মানে বাংলাদেশের জনগণ এখন ক্লান্ত, বিরক্ত। একটা সময় ছিল নির্বাচন ঘনিয়ে এলে জনমনে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হতো কোন নেতা কোন দলে ভিড়ছেন, তা দেখার জন্য। অনেকটা ফুটবল-ক্রিকেট খেলোয়াড়দের দলবদলের মতো। খেলোয়াড়েরা যেমন জার্সি পাল্টে ফেলেন, তেমনি একশ্রেণির রাজনীতিকও তাঁদের মার্কা বদলে ফেলেন নিমেষেই। এখন অবশ্য নাটক হয় বৃহৎ পরিসরে। এসবের মধ্যে রয়েছে কোন দল কোন দলের সঙ্গে জোট করছে, কোন দল কোন জোট ত্যাগ করছে, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট মতবিরোধের ফলে দলে বিভক্তি, এমনকি ভেঙে যাওয়া ইত্যাদি। আদর্শগত বিরোধ নয়, শুধু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দল-জোট ভেঙে যাওয়ার নজিরও আছে।
এবারও সেই আলামত দেখা যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ যেহেতু ক্ষমতায় আছে, তাই এ বাতাস তাদের স্পর্শ করতে পারবে না, এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়। তবে মনোনয়নকে কেন্দ্র করে স্থানীয়ভাবে দলের মধ্যে কোন্দল সৃষ্টি এবং সে কারণে নেতা-কর্মীদের কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ইতিমধ্যে সংবাদমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে, বর্তমান সংসদ সদস্যদের মধ্যে শতাধিক দলটির হাইকমান্ডের কালো তালিকায় রয়েছেন। তাঁদের আগামী নির্বাচনে নৌকার মাঝি হওয়া অনিশ্চিত। বিগত ৫ কিংবা ১০ বছরের আমলনামা বিবেচনায় নিয়ে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব যদি এবার মনোনয়নের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে অধিকাংশ কীর্তিমানেরই কপাল পোড়ার আশঙ্কা রয়েছে। মন্ত্রী-এমপিদের কারও কারও বিরুদ্ধে দলের নেতা-কর্মী এবং সাধারণ মানুষের এমন সব অভিযোগ রয়েছে, যা দলের ভাবমূর্তিকে বহুলাংশে ক্ষুণ্ন করেছে। সেই ভাবমূর্তিকে প্রতিস্থাপিত করতে হলে ওই বিতর্কিতদের সম্বন্ধে নতুন সিদ্ধান্ত নিতেই হবে।
অন্যদিকে সরকারের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি রয়েছে এলোমেলো অবস্থায়। তারা আন্দোলন করবে না নির্বাচনে মনোনিবেশ করবে, তা-ই যেন ঠিক করে উঠতে পারছে না। আন্দোলনের সফলতার প্রশ্নে দলটির তৃণমূলের কর্মীরা রয়েছেন ধোঁয়াশার মধ্যে। যদিও কেন্দ্রীয় নেতারা তাঁদের এই বলে উজ্জীবিত রাখতে চাইছেন যে আন্দোলনে সরকারের পতন হবে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জয়লাভ করে তাঁরা সরকার গঠন করবেন। তবে নেতাদের এই আশ্বাসে তেমন আস্থা রাখতে পারছেন না কর্মীরা। কেননা, আওয়ামী লীগের মতো সাংগঠনিক শক্তিসম্পন্ন একটি রাজনৈতিক দলের সরকারকে গদিচ্যুত করতে যে ধরনের আন্দোলন দরকার, তার ধারেপাশেও যেতে পারেনি বিএনপি; বরং ক্ষণে ক্ষণে বিরতি দিয়ে নতুন করে কর্মসূচি শুরু করায় কর্মীদের মধ্যে একরাশ হতাশা ভর করেছে।
বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বললে এটা স্পষ্ট হয়ে যায়, নিজেদের আন্দোলন-কর্মসূচির চেয়ে তাঁরা বিদেশি বন্ধুদের ওপর বেশিমাত্রায় নির্ভরশীল। তাঁরা মনে করছেন, বহিঃশক্তিগুলো ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ওপর এমন চাপ সৃষ্টি করবে, যাতে তারা বাধ্য হবে বিএনপির ফর্মুলায় নির্বাচন দিতে। কিন্তু রাজনৈতিক অভিজ্ঞ মহল বলছেন ভিন্ন কথা। তারা বলছে, একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের চাপ আওয়ামী লীগ সরকারের ওপর আছে, এটা ঠিক। তবে সেই নির্বাচন কোন পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হবে, সে বিষয়ে তারা কোনো মতামত দেবে না। বিএনপি অবশ্য এই ভেবে উৎফুল্ল যে আমেরিকার ভিসা নীতি ও নিষেধাজ্ঞার (স্যাংশন) চাপে সরকার নতি স্বীকারে বাধ্য হবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এভাবে কোনো সরকারকে বিদেশি শক্তি বাধ্য করতে পারে না। তারা পরামর্শ দিতে পারে, চাপও সৃষ্টি করতে পারে। কিন্তু ঘাড়ে ধরে কাজ করানোর এখতিয়ার তাদের নেই।
লক্ষণীয় হলো, আমেরিকার ভিসা নীতি ও নিষেধাজ্ঞা নিয়ে সরকারকে খুব একটা বিচলিত মনে হচ্ছে না। তদুপরি নিকট প্রতিবেশী দেশের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে তাদের প্রতি। এবার চীনও তাদের সমর্থন দিয়েছে প্রকাশ্যেই। তা ছাড়া, বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য আমেরিকার যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা এবং সরকারের প্রতি উষ্মা, তা যতটা না গণতন্ত্রের জন্য, তার চেয়ে শত গুণ বেশি বাংলাদেশের ওপর প্রভাব বজায় রাখার জন্য—এটা মনে রাখা দরকার। এখানে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনার দাবি রাখে। এই অঞ্চলে যদি মোড়লগিরি অক্ষুণ্ন রাখতে হয়, তাহলে আমেরিকার ভারতকে গুডবুকে রাখতেই হবে। কেননা, এখানে রয়েছে চীনের মতো বৈরী রাষ্ট্র। আর চীন ইতিমধ্যে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে আসন পোক্ত করে ফেলেছে। চীনকে মোকাবিলার জন্য তাই আমেরিকার ভারতকে হাতে রাখতেই হবে। আর যেহেতু ভারত আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত মিত্র, তাই ভারতের ইচ্ছাকে তাদের প্রাধান্য দিতেই হবে। সুতরাং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সরকারের ওপর আমেরিকার চাপ কতটা শেষ পর্যন্ত থাকবে, তা নিয়ে অনেকেরই সংশয় রয়েছে।
অপরদিকে বর্তমান সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টিতে শুরু হয়েছে নতুন নাটক। কয়েক দিন আগে সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে আসার পর সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ নিজেকে দলের চেয়ারম্যান ঘোষণা করে গণমাধ্যমে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেন নিজের স্বাক্ষরে। তবে এক দিন পরেই অবস্থান থেকে কিছুটা সরে এসে বলেছেন, তিনি দলের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির চেয়ারম্যান। হঠাৎ করে রওশন এরশাদের দলের চেয়ারম্যানের চেয়ারে উপবেশনের চেষ্টা রাজনীতিসচেতন মহলে যথেষ্ট কৌতূহলের সৃষ্টি করেছে। যদিও জাতীয় পার্টির শীর্ষস্থানীয় নেতারা কেউই রওশনের এ কাজকে সমর্থন করেননি। তাঁরা বলছেন, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান পরিবর্তনের বিধিবদ্ধ নিয়ম রয়েছে। দলের গঠনতন্ত্র মোতাবেক কো-চেয়ারম্যানরা এবং প্রেসিডিয়াম সদস্যদের সম্মিলিত সভায় সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে অথবা দলের জাতীয় সম্মেলনে কাউন্সিলরদের সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে চেয়ারম্যান পদে পরিবর্তন আনা যায়।
এ বিষয়ে দলটির মহাসচিব বলেছেন, রওশন এরশাদের অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে একটি চক্র ওই অপচেষ্টা করেছে। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো রওশন এরশাদ হঠাৎ কেন এই সিদ্ধান্ত নিলেন। রাজনীতিসচেতন মহল বলছে, নির্বাচন প্রশ্নে জাপার চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের বর্তমান অবস্থান সরকারি মহল ভালোভাবে নিচ্ছে না। তাই রওশন এরশাদকে দিয়ে চাপ সৃষ্টি করে তাঁকে বাগে আনার এই প্রচেষ্টা। এদিকে ভারত সফর শেষে দেশে ফিরে জি এম কাদের বলেছেন, ভাবির সঙ্গে তাঁর কোনো দ্বন্দ্ব নেই। অনেকের ধারণা, জাপার এই ‘নাটক’ খুব একটা দীর্ঘস্থায়ী হবে না। অচিরেই দুই ধারা এক মোহনায় এসে মিলে যাবে।
পাদটীকা: এসব নিয়ে কথা প্রসঙ্গে এক রসিক ভদ্রলোক মন্তব্য করলেন, ‘ইয়ে তো ট্রেলার হ্যায়, পিকচার আভি বাকি হ্যায়।’
মহিউদ্দিন খান মোহন, সাংবাদিক, রাজনীতি বিশ্লেষক
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন নতুন নাটক মঞ্চস্থ হওয়ার আভাস স্পষ্ট হয়ে উঠছে। প্রতিটি নির্বাচনের আগেই এ ধরনের নাটক, যাত্রাপালা, একাঙ্কিকা মঞ্চস্থ হতে দেখা যায়। সেই সব নাটক, যাত্রাপালা, একাঙ্কিকার পাত্রপাত্রীরা আমাদের সুপরিচিত। তাঁরা কেউ পার্টি বদল করেন, কেউ জোট ভেঙে নতুন জোট করেন। আবার কেউ কেউ বেশ চড়া দামে বিক্রি হয়ে যান। নির্বাচনের আগে এসব দেখতে দেখতে দর্শক, মানে বাংলাদেশের জনগণ এখন ক্লান্ত, বিরক্ত। একটা সময় ছিল নির্বাচন ঘনিয়ে এলে জনমনে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হতো কোন নেতা কোন দলে ভিড়ছেন, তা দেখার জন্য। অনেকটা ফুটবল-ক্রিকেট খেলোয়াড়দের দলবদলের মতো। খেলোয়াড়েরা যেমন জার্সি পাল্টে ফেলেন, তেমনি একশ্রেণির রাজনীতিকও তাঁদের মার্কা বদলে ফেলেন নিমেষেই। এখন অবশ্য নাটক হয় বৃহৎ পরিসরে। এসবের মধ্যে রয়েছে কোন দল কোন দলের সঙ্গে জোট করছে, কোন দল কোন জোট ত্যাগ করছে, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট মতবিরোধের ফলে দলে বিভক্তি, এমনকি ভেঙে যাওয়া ইত্যাদি। আদর্শগত বিরোধ নয়, শুধু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দল-জোট ভেঙে যাওয়ার নজিরও আছে।
এবারও সেই আলামত দেখা যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ যেহেতু ক্ষমতায় আছে, তাই এ বাতাস তাদের স্পর্শ করতে পারবে না, এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়। তবে মনোনয়নকে কেন্দ্র করে স্থানীয়ভাবে দলের মধ্যে কোন্দল সৃষ্টি এবং সে কারণে নেতা-কর্মীদের কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ইতিমধ্যে সংবাদমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে, বর্তমান সংসদ সদস্যদের মধ্যে শতাধিক দলটির হাইকমান্ডের কালো তালিকায় রয়েছেন। তাঁদের আগামী নির্বাচনে নৌকার মাঝি হওয়া অনিশ্চিত। বিগত ৫ কিংবা ১০ বছরের আমলনামা বিবেচনায় নিয়ে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব যদি এবার মনোনয়নের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে অধিকাংশ কীর্তিমানেরই কপাল পোড়ার আশঙ্কা রয়েছে। মন্ত্রী-এমপিদের কারও কারও বিরুদ্ধে দলের নেতা-কর্মী এবং সাধারণ মানুষের এমন সব অভিযোগ রয়েছে, যা দলের ভাবমূর্তিকে বহুলাংশে ক্ষুণ্ন করেছে। সেই ভাবমূর্তিকে প্রতিস্থাপিত করতে হলে ওই বিতর্কিতদের সম্বন্ধে নতুন সিদ্ধান্ত নিতেই হবে।
অন্যদিকে সরকারের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি রয়েছে এলোমেলো অবস্থায়। তারা আন্দোলন করবে না নির্বাচনে মনোনিবেশ করবে, তা-ই যেন ঠিক করে উঠতে পারছে না। আন্দোলনের সফলতার প্রশ্নে দলটির তৃণমূলের কর্মীরা রয়েছেন ধোঁয়াশার মধ্যে। যদিও কেন্দ্রীয় নেতারা তাঁদের এই বলে উজ্জীবিত রাখতে চাইছেন যে আন্দোলনে সরকারের পতন হবে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জয়লাভ করে তাঁরা সরকার গঠন করবেন। তবে নেতাদের এই আশ্বাসে তেমন আস্থা রাখতে পারছেন না কর্মীরা। কেননা, আওয়ামী লীগের মতো সাংগঠনিক শক্তিসম্পন্ন একটি রাজনৈতিক দলের সরকারকে গদিচ্যুত করতে যে ধরনের আন্দোলন দরকার, তার ধারেপাশেও যেতে পারেনি বিএনপি; বরং ক্ষণে ক্ষণে বিরতি দিয়ে নতুন করে কর্মসূচি শুরু করায় কর্মীদের মধ্যে একরাশ হতাশা ভর করেছে।
বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বললে এটা স্পষ্ট হয়ে যায়, নিজেদের আন্দোলন-কর্মসূচির চেয়ে তাঁরা বিদেশি বন্ধুদের ওপর বেশিমাত্রায় নির্ভরশীল। তাঁরা মনে করছেন, বহিঃশক্তিগুলো ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ওপর এমন চাপ সৃষ্টি করবে, যাতে তারা বাধ্য হবে বিএনপির ফর্মুলায় নির্বাচন দিতে। কিন্তু রাজনৈতিক অভিজ্ঞ মহল বলছেন ভিন্ন কথা। তারা বলছে, একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের চাপ আওয়ামী লীগ সরকারের ওপর আছে, এটা ঠিক। তবে সেই নির্বাচন কোন পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হবে, সে বিষয়ে তারা কোনো মতামত দেবে না। বিএনপি অবশ্য এই ভেবে উৎফুল্ল যে আমেরিকার ভিসা নীতি ও নিষেধাজ্ঞার (স্যাংশন) চাপে সরকার নতি স্বীকারে বাধ্য হবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এভাবে কোনো সরকারকে বিদেশি শক্তি বাধ্য করতে পারে না। তারা পরামর্শ দিতে পারে, চাপও সৃষ্টি করতে পারে। কিন্তু ঘাড়ে ধরে কাজ করানোর এখতিয়ার তাদের নেই।
লক্ষণীয় হলো, আমেরিকার ভিসা নীতি ও নিষেধাজ্ঞা নিয়ে সরকারকে খুব একটা বিচলিত মনে হচ্ছে না। তদুপরি নিকট প্রতিবেশী দেশের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে তাদের প্রতি। এবার চীনও তাদের সমর্থন দিয়েছে প্রকাশ্যেই। তা ছাড়া, বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য আমেরিকার যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা এবং সরকারের প্রতি উষ্মা, তা যতটা না গণতন্ত্রের জন্য, তার চেয়ে শত গুণ বেশি বাংলাদেশের ওপর প্রভাব বজায় রাখার জন্য—এটা মনে রাখা দরকার। এখানে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনার দাবি রাখে। এই অঞ্চলে যদি মোড়লগিরি অক্ষুণ্ন রাখতে হয়, তাহলে আমেরিকার ভারতকে গুডবুকে রাখতেই হবে। কেননা, এখানে রয়েছে চীনের মতো বৈরী রাষ্ট্র। আর চীন ইতিমধ্যে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে আসন পোক্ত করে ফেলেছে। চীনকে মোকাবিলার জন্য তাই আমেরিকার ভারতকে হাতে রাখতেই হবে। আর যেহেতু ভারত আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত মিত্র, তাই ভারতের ইচ্ছাকে তাদের প্রাধান্য দিতেই হবে। সুতরাং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সরকারের ওপর আমেরিকার চাপ কতটা শেষ পর্যন্ত থাকবে, তা নিয়ে অনেকেরই সংশয় রয়েছে।
অপরদিকে বর্তমান সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টিতে শুরু হয়েছে নতুন নাটক। কয়েক দিন আগে সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে আসার পর সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ নিজেকে দলের চেয়ারম্যান ঘোষণা করে গণমাধ্যমে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেন নিজের স্বাক্ষরে। তবে এক দিন পরেই অবস্থান থেকে কিছুটা সরে এসে বলেছেন, তিনি দলের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির চেয়ারম্যান। হঠাৎ করে রওশন এরশাদের দলের চেয়ারম্যানের চেয়ারে উপবেশনের চেষ্টা রাজনীতিসচেতন মহলে যথেষ্ট কৌতূহলের সৃষ্টি করেছে। যদিও জাতীয় পার্টির শীর্ষস্থানীয় নেতারা কেউই রওশনের এ কাজকে সমর্থন করেননি। তাঁরা বলছেন, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান পরিবর্তনের বিধিবদ্ধ নিয়ম রয়েছে। দলের গঠনতন্ত্র মোতাবেক কো-চেয়ারম্যানরা এবং প্রেসিডিয়াম সদস্যদের সম্মিলিত সভায় সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে অথবা দলের জাতীয় সম্মেলনে কাউন্সিলরদের সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে চেয়ারম্যান পদে পরিবর্তন আনা যায়।
এ বিষয়ে দলটির মহাসচিব বলেছেন, রওশন এরশাদের অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে একটি চক্র ওই অপচেষ্টা করেছে। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো রওশন এরশাদ হঠাৎ কেন এই সিদ্ধান্ত নিলেন। রাজনীতিসচেতন মহল বলছে, নির্বাচন প্রশ্নে জাপার চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের বর্তমান অবস্থান সরকারি মহল ভালোভাবে নিচ্ছে না। তাই রওশন এরশাদকে দিয়ে চাপ সৃষ্টি করে তাঁকে বাগে আনার এই প্রচেষ্টা। এদিকে ভারত সফর শেষে দেশে ফিরে জি এম কাদের বলেছেন, ভাবির সঙ্গে তাঁর কোনো দ্বন্দ্ব নেই। অনেকের ধারণা, জাপার এই ‘নাটক’ খুব একটা দীর্ঘস্থায়ী হবে না। অচিরেই দুই ধারা এক মোহনায় এসে মিলে যাবে।
পাদটীকা: এসব নিয়ে কথা প্রসঙ্গে এক রসিক ভদ্রলোক মন্তব্য করলেন, ‘ইয়ে তো ট্রেলার হ্যায়, পিকচার আভি বাকি হ্যায়।’
মহিউদ্দিন খান মোহন, সাংবাদিক, রাজনীতি বিশ্লেষক
গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
১৫ ঘণ্টা আগেঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৫ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৫ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৫ দিন আগে