Ajker Patrika

শব্দদূষণে অতিষ্ঠ মানুষ

মেহেদী হাসান, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) 
আপডেট : ০৮ নভেম্বর ২০২২, ১৩: ৫১
শব্দদূষণে অতিষ্ঠ মানুষ

দিনাজপুরের ফুলবাড়ী পৌর শহরে দিন দিন শব্দদূষণ চরম আকার ধারণ করেছে। এতে পৌরবাসীরা চরম সমস্যায় ভুগছেন। কেউ আক্রান্ত হচ্ছেন হৃদ্‌রোগে আবার কারও শ্রবণশক্তি হ্রাস পাচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ—শব্দদূষণ রোধে আইনের প্রয়োগ নেই। নেই ট্রাফিকব্যবস্থা ও নির্দিষ্ট বাসস্ট্যান্ড।

জানা গেছে, ফুলবাড়ী পৌর শহরের মধ্য দিয়ে যাওয়া দিনাজপুর-ঢাকা মহাসড়কের পাশে তিনটি উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়, দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি কিন্ডারগার্টেন, একটি মাদ্রাসাসহ চারটি কলেজ রয়েছে। এ ছাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, পশু হাসপাতাল, প্রাইভেট হাসপাতাল, পৌরসভা, বাণিজ্যিক ব্যাংক, বেসরকারি সংস্থার কার্যালয়সহ প্রায় সব কটি বড় বড় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান মহাসড়কের দুই পাশে অবস্থিত।

ফুলবাড়ী মহিলা ডিগ্রি কলেজের প্রদর্শক মোস্তাক আহম্মেদ বলেন, ফুলবাড়ীতে ট্রাফিকব্যবস্থা না থাকায় মহাসড়কসহ অভ্যন্তরীণ সব সড়কে দ্রুতগতিতে যানবাহন চলাচল করে। দ্রুতগতিতে চলাচলকারী এসব যানবাহনের ইঞ্জিনের শব্দ ও হাইড্রোলিক হর্নের উচ্চ শব্দের কারণে এলাকাবাসী ব্যাপক শব্দদূষণের শিকার হচ্ছেন।

সমাজকর্মী সৈয়দ সাইফুল ইসলাম জুয়েল বলেন, ‘শহরে মাইকে প্রচার চালাতে হয় আইন মেনে; কিন্তু ফুলবাড়ীতে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত উচ্চ শব্দে মাইকে বিভিন্ন প্রচার-প্রচারণা চালানো হয়। শহরে দিনরাত দাপিয়ে বেড়ায় ট্রাক্টর, ট্রলিসহ শব্দদূষণকারী যানবাহন। যেখানে-সেখানে ইট ভাঙার মেশিন চলে। এই বিষয়ে প্রশাসনের দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন।

মহাসড়কের পাশের ব্যবসায়ীরা জানান, শহরে স্থায়ী বাসস্ট্যান্ড না থাকায় ঢাকা মোড় থেকে হাসপাতাল মোড় পর্যন্ত প্রায় পৌনে এক কিলোমিটার এলাকা বাসস্ট্যান্ড হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। যেখানে-সেখানে গাড়ি দাঁড় করিয়ে যাত্রী ওঠানামার সময় উচ্চ শব্দে হর্ন বাজানো হয়। ফলে এই সড়কের দুই পাশের ব্যবসায়ী, ক্রেতাসহ এলাকাবাসী চরম শব্দদূষণের শিকার হচ্ছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শব্দদূষণ বিধিমালা-২০০৬ অনুযায়ী হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত বা এ-জাতীয় প্রতিষ্ঠান হচ্ছে নীরব এলাকা। বিধিমালায় বলা হয়েছে, এসব এলাকার চতুর্দিকে ১০০ মিটারে কোনো প্রকার হর্ন বাজানো যাবে না। আবাসিক এলাকার ৫০০ মিটারের মধ্যে ইটভাঙার মেশিন ব্যবহার করা যাবে না। অথচ পৌর শহরে গত শনিবার দিনে পাওয়া গেছে ৬১ ডেসিবেল এবং শুক্রবার রাতে পাওয়া গেছে ৫০ ডেসিবেল শব্দ।

ফুলবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মশিউর রহমান জানান, শব্দদূষণের কারণে ঘুমের সমস্যা, শ্রবণশক্তি হ্রাস, উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদ্‌রোগ হতে পারে। সর্বোচ্চ পর্যায়ে মৃত্যুঝুঁকি পর্যন্ত রয়েছে।

দিনাজপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক এ কে এম ছামিউল আলম কুরসি বলেন, ‘শব্দদূষণের ক্ষেত্রে উপজেলা পর্যায়ে এই বিষয়ে কম যাওয়া হয়। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাও ব্যবস্থা নিতে পারেন।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রিয়াজ উদ্দিন বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে জেলা মিটিংয়ে আলোচনা করা হয়েছে। সেখানে জানানো হয়েছে কোনো ডাক্তার চিকিৎসাসেবার বিষয়ে কোনো প্রকার প্রচার-প্রচারণা মাইকে প্রচার করতে পারবে না। যদি কেউ করে সর্বোচ্চ দুই হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা ও জেলের বিধান রয়েছে। পৌরসভা কর্তৃপক্ষ যদি এই বিষয়ে আমাকে লিখিতভাবে অবগত করে, সে অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত