বেহাত কোটি টাকার সম্পদ

আমিনুল হক, ফুলছড়ি (গাইবান্ধা) 
প্রকাশ : ০১ নভেম্বর ২০২১, ০৮: ৪০
আপডেট : ০১ নভেম্বর ২০২১, ১৮: ২০

গাইবান্ধার ফুলছড়ি রেলওয়ে ফেরি ও ট্রেন সার্ভিস ২০ বছর ধরে বন্ধ থাকায় যোগাযোগের সুবিধা থেকে বঞ্চিত রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও নীলফামারীর সঙ্গে যমুনার পূর্ব পাড়ের জামালপুর, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল ও শেরপুর এলাকার বিশাল জনগোষ্ঠী। অযত্ন-অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে রেলের যন্ত্রাংশ, আর বেহাত হচ্ছে রেলের কোটি টাকার সম্পদ।

এদিকে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ করতে বোনারপাড়া থেকে ভরতখালী-তিস্তামুখ ঘাট রুটে একটি শাটল ট্রেন চালুর দাবি এ অঞ্চলের যাত্রীদের।

অন্যদিকে লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগীয় ম্যানেজার শাহ সুফি নুর মোহাম্মদ জানান, বোনারপাড়া রেলওয়ে জংশন থেকে তিস্তামুখ ঘাট পর্যন্ত শাটল ট্রেন চালুর নির্দেশ যদি রেল মন্ত্রণালয় থেকে আসে, সে ক্ষেত্রে তা চালু করা সম্ভব।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, ঢাকার সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের রেল যোগাযোগের জন্য ১৯৩৮ সালে গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার তিস্তামুখ ঘাট ও জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার বাহাদুরাবাদ ঘাট দিয়ে যমুনা নদীতে রেল ফেরি সার্ভিস চালু হয়। রেলের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয় যমুনা নদীর ওপর দিয়ে রেলযাত্রী ও পণ্যবাহী ওয়াগন পারাপার। পরে নিয়মিত ফেরি চলাচল করলেও ১৯৯০ সালে যমুনা নদীর নাব্যতা সংকটে ফেরি সার্ভিসটি তিস্তামুখ ঘাট থেকে একই উপজেলার বালাসীঘাটে স্থানান্তর করা হয়। ত্রিমোহিনী স্টেশন থেকে বালাসী পর্যন্ত নতুন করে রেলপথ নির্মাণ করা হয়। বালাসীঘাট চালুর পরপরই নির্মিত হয় বঙ্গবন্ধু সেতু। এরপর বন্ধ হয়ে যায় এ রুটটি।

সরেজমিন দেখা যায়, রেলপথের অসংখ্য স্থানে কাঠের স্লিপার পচে নষ্ট হয়ে গেছে। রেললাইনের নিচের মাটি সরে গেছে। কয়েক স্থানে নষ্ট হয়ে গেছে রেলপাত। সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বালাসীঘাট ও আনন্দবাজার রেলস্টেশনের টিনের তৈরি ঘর ও অন্য সরঞ্জামাদি। তিস্তামুখ ঘাট, ভরতখালী রেলস্টেশন, বালাসী-ত্রিমোহিনী রেলপথে শুধু রেললাইন ছাড়া আর কিছুই নেই। ফলে নষ্ট হচ্ছে রেলের যন্ত্রাংশ, চুরি হয়ে যাচ্ছে রেলপাত, অসংখ্য স্লিপারসহ মূল্যবান যন্ত্রাংশ। আর বেহাত হচ্ছে রেলের কোটি কোটি টাকার ভূমি।

ফুলছড়ি বাজারের কাপড় ব্যবসায়ী হাসান আলী জানান, তিস্তামুখ ঘাট থেকে ফেরি সার্ভিসের মাধ্যমে অল্প খরচ ও স্বল্প সময়ে ময়মনসিংহ, ঢাকায় যাতায়াত করা যেত। কিন্তু ফেরি ও ট্রেন বন্ধ থাকায় বোনারপাড়া অথবা গাইবান্ধা শহরে গিয়ে বাস/ট্রেনে দ্বিগুণ ভাড়া ও দীর্ঘ সময় অপচয় করে যাতায়াত করতে হচ্ছে।

তিস্তামুখ ঘাটের শ্রমিক বাবলু শেখ বলেন, ফেরি ও ট্রেন বন্ধ হওয়ায় এলাকার হাজারো কর্মজীবী মানুষ বেকার হয়ে পড়েছেন। তাঁদের খুব কষ্টে দিন কাটছে। আর রেলওয়ের কোটি কোটি টাকার সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পরিত্যক্ত তিস্তামুখ ঘাটের রেললাইনের ওপর নদীভাঙনকবলিত শত শত মানুষজন আশ্রয় নিয়ে বসবাস করছে। গড়ে উঠেছে বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। এ ছাড়া চুরি হয়ে যাচ্ছে মূল্যবান রেলওয়ের লোহার পাত।

তিস্তামুখ ঘাট এলাকার বাসিন্দা আলমগীর হোসেন জানান, তিস্তা মুখঘাট থেকে একটি শাটল ট্রেন যদি চালু করা যেত, তাহলে এ অঞ্চলের মানুষ খুব সহজেই বোনারপাড়া রেলওয়ে জংশনে গিয়ে যেকোনো ট্রেনে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সহজে যাতায়াত করতে পারত।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত