ভাঙনে দিশেহারা পাড়ের মানুষ

ফুয়াদ হাসান রঞ্জু, ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল) 
প্রকাশ : ১৩ আগস্ট ২০২২, ০৬: ৩৩
আপডেট : ১৩ আগস্ট ২০২২, ১২: ১১

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার তিন ইউনিয়নে চলতি বর্ষায় যমুনার ভাঙনে সহস্রাধিক বসতভিটা ও ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। হুমকিতে রয়েছে নদীতীরবর্তী চিতুলিয়াপাড়া গ্রাম, নদী রক্ষা বাঁধ, উঁচু সড়কসহ অন্যান্য স্থাপনা।

নদীভাঙনে দিশেহারা যমুনাপারের বাসিন্দারা। সর্বোস্ব হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তাঁরা।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গোবিন্দাসী, গাবসারা ও অর্জুনা ইউনিয়নের ভাঙনে সহস্রাধিক বসতঘর বিলীন হয়ে গেছে। কয়েক বছরের ভাঙনে যমুনা পূর্ব পারের খানুরবাড়ি, ব্যাপারীপাড়া, কষ্টাপাড়া, ভালকুটিয়া ও চিতুলিয়াপাড়া এলাকার হাজারো পরিবার নিঃস্ব হয়ে গেছে।

ভূঞাপুরের চিতুলিয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা নব্বই-ঊর্ধ্ব বৃদ্ধ মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘কোনাবাড়ি চরে আমার বাড়ি আছিল। তহন হেইডা ভাইঙ্গা গেলে এইখানে বাড়ি করি। নদী আমার ব্যাবাক কিছু শ্যাষ কইরা দিছে। এই বাড়িডাও শ্যাষম্যাষ ঠেকাইতে পারব না।’ এভাবেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের যমুনা-তীরবর্তী চিতুলিয়াপাড়া অংশে প্রায় ৫০০ মিটার এলাকাজুড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে বসতভিটা, ঘরবাড়ি। এর মধ্যে অনেকে আবার ঘরবাড়ি ও আসবাব অন্যত্র সরিয়ে নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। কারও কারও আসবাবসহ ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, চলতি বছর বন্যার প্রথম ধাপে বেশ কয়েকটি বসতভিটা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ওই সময় নিজেদের বসতভিটা রক্ষার জন্য নিজ উদ্যোগে মাটিভর্তি প্লাস্টিকের বস্তা ফেলেন তাঁরা। পানি কমে গেলে নদীভাঙন কিছুটা কমে আসে। পরে তাঁরা জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কাছে ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ ফেলার দাবি জানান। কিন্তু পাউবো ভাঙন রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। কয়েক দিন ধরে ওই এলাকায় আবার নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে।

মো. দুলাল জানান, তাঁর ঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। অন্য দুই ভাইয়ের তিনটি ঘর গেছে। এখন পর্যন্ত কোনো সহযোগিতা পাননি তাঁরা। সন্তান নিয়ে সড়কের পাশে অস্থায়ীভাবে থাকছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা আলামিন বলেন, ‘গত বছর ২০০-এর মতো ঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এবারও ১৫০টির বেশি বাড়ি নদীতে চলে গেছে। অনেক টেহাপয়সা নাই যে জায়গা কিনা আবার নতুন বাড়ি করব। আমগোর এহন কী হইব।’

স্থানীয় বয়োজ্যেষ্ঠ বাসিন্দা খোদেজা বেগম বলেন, ‘চোখে দেখি না। এই বয়সে কই থাকমু কই? যাওয়ার জায়গা নাই। এহন আমরা কী করমু? মরার আগে একটা স্থায়ী বাঁধ দেহার খুব ইচ্ছা আছিল।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছা. ইসরাত জাহান বলেন, যমুনার পূর্ব পারের ভাঙনের বিষয়ে জেলা পাউবোর সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। ইতিমধ্যে জিও ব্যাগ ফেলার কাজ শুরু হয়েছে। স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।

এ বিষয়ে পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘ভাঙন রোধে উপজেলার বিভিন্ন অংশে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পগুলোর কাজ দ্রুত করার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছি।’ এ ছাড়া ভূঞাপুরের যমুনার পূর্ব পারে শুষ্ক মৌসুমে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হবে বলেও জানান তিনি।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত