Ajker Patrika

জীবিকার জন্য জীবনের ঝুঁকি

হুমায়ুন মাসুদ ও মাঈনুদ্দিন খালেদ, নাইক্ষ্যংছড়ি (বান্দরবান) থেকে
জীবিকার জন্য জীবনের ঝুঁকি

মিয়ানমারের অভ্যন্তরে গোলাগুলির ঘটনায় এক মাস ধরে সীমান্তঘেঁষা জমিতে কৃষিকাজ করতে পারেননি কৃষক নুরুল হাকিম। আগাছা জন্মানোর পাশাপাশি পোকা ধরে নষ্ট হওয়ার উপক্রম ধানখেত। দ্রুত কীটনাশক না ছিটালে ফসলের অনেক ক্ষতি হয়ে হবে। তাই বাধ্য হয়ে গতকাল বুধবার জমিতে কাজে নেমেছিলেন এই কৃষক। এক মাস অপেক্ষা করেও সীমান্তে উত্তেজনা না কমায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গতকাল তিনি জমিতে কীটনাশক ছিটিয়েছেন।

নুরুল হাকিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এক মাস ধরেই সীমান্তে উত্তেজনা বিরাজ করছে। জমিতে যাওয়ার সাহসই পাচ্ছিলাম না। অন্যদিকে পোকায় ধরে ধানগাছগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাই গোলাগুলির মাঝেই সাহস করে জমিতে কাজ করতে গিয়েছি। জীবনের কথা চিন্তা করে যদি জীবিকা উপার্জন বন্ধ রাখি, তাহলে খাব কী?’

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু এলাকার ৩৩ নম্বর সীমানাখুঁটির পাশেই কৃষক নুরুল হাকিমের বাড়ি। তাঁর বাড়ি থেকে ১৫০ ফুট দূরেই সীমান্তের কাঁটাতার। এবার ২ বিঘা জমিতে তিনি ধান চাষ করেছেন। বুধবার সকাল থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত তিনি সীমান্তঘেঁষা জমিতে কীটনাশক ছিটিয়েছেন। অথচ সকাল সাড়ে ১০টার দিকেও সেখানে মর্টার শেল বিস্ফোরণের আওয়াজ পেয়েছেন স্থানীয় লোকজন।

শুধু কৃষক নুরুল হাকিম না, গতকাল সকাল ৯টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত তুমব্রু পশ্চিমকুল বিজিবি চেকপোস্ট থেকে ক্যাম্পপাড়া, মাঝেরপাড়া, উত্তরপাড়া হয়ে বাইশফাঁড়ি এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, আতঙ্কের মাঝেই কৃষকেরা সীমান্তের কাঁটাতারঘেঁষা জমিতে কাজ করছেন। আবার কয়েকজনকে সীমান্তে গরু, মহিষ চরাতে দেখা গেছে।

আমতল এলাকায় কোদাল হাতে সীমান্তের কাছে জমিতে কাজ করতে যাচ্ছিলেন বৃদ্ধ কৃষক হোসাইন আহমেদ। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘গোলাগুলির কারণে তো ভয় লাগে।

কিন্তু বসে থাকলে খাব কী? মাসিক চুক্তিতে একজনের বাগানে কাজ করছি। গোলাগুলির কারণে এত দিন যাইনি। সকাল থেকে এদিকে গোলাগুলির আওয়াজ পাওয়া যায়নি। তাই আজ কাজে যাচ্ছি।’

জমিতে কাজ করার পাশাপাশি বুধবার সীমান্তবর্তী এলাকায় লোকজনকে স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে দেখা গেছে। বুধবার দোকানপাটে আগের তুলনায় লোকসমাগম বেশি চোখে পড়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, অন্যান্য দিনের তুলনায় বুধবার গোলাগুলির আওয়াজ কম পেয়েছেন তাঁরা। যে কারণে সীমান্তবর্তী এলাকার লোকজন প্রয়োজনীয় কাজকর্ম সারতে বাসাবাড়ি থেকে বের হয়েছেন। রাস্তাঘাটেও গত দুই দিনের তুলনায় বেশি যানবাহন চলাচল করতে দেখা যায়।

তুমব্রু ক্যাম্পপাড়া এলাকার বাসিন্দা আফসার উদ্দিন রুবেল বলেন, মঙ্গলবার রাতে খুব একটা গোলাগুলির আওয়াজ শোনা যায়নি। তবে বুধবার সকাল পৌনে ৯টার দিকে ৩৪ নম্বর সীমান্ত পিলারের বিপরীতে মিয়ানমারের সীমান্তচৌকি তুমব্রু রাইট ক্যাম্প এলাকা থেকে পরপর দুটি মর্টার শেল নিক্ষেপের আওয়াজ শোনা যায়। এরপর দুপুরের দিকেও দুটি মর্টার শেল নিক্ষেপের আওয়াজ শোনা যায়।’

গোলাগুলির আওয়াজ কম হলেও স্থানীয় লোকজনের মাঝে এখনো আতঙ্ক বিরাজ করছে। বাইশফাঁড়ি এলাকায় দোকানে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন ওই এলাকার বাসিন্দা নুরুল কবির। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘গতকাল রাত থেকে গোলাগুলির আওয়াজ কম শোনা যাচ্ছে। কিন্তু এর আগের দিনও অনেক গোলাগুলি হয়েছে। প্রতিদিনই গোলাগুলি হয়, তবে কখন হবে সেটি নির্ধারিত না। কখনো সারা দিন হয়নি, রাতে অনেক বেশি গোলাগুলি হয়েছে। আবার কখনো দেখা যায় সকালে অনেক বেশি গোলাগুলি হচ্ছে। এটা ঠিক নাই। আমরা এখনো আতঙ্কের মধ্যেই আছি।’

ঘুমধুম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ আজকের পত্রিকাকে বলেন, বুধবার অন্যান্য দিনের তুলনায় গোলাগুলি কম হয়েছে। অন্যান্য দিন কয়েক মিনিট পরপর গোলার আওয়াজ শোনা যেত। কিন্তু বুধবার সকালের পর দুপুর পর্যন্ত আর কোনো গোলাগুলির আওয়াজ শোনা যায়নি। তিনি আরও বলেন, গোলাগুলির আওয়াজ কম হয়েছে, তার মানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে গেছে এমন না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন ক্যালিফোর্নিয়ার পরিবহন বিশেষজ্ঞ

‘তল্লাশির’ জন্য উসকানি দিয়েছে গুলশানের ওই বাসার সাবেক কেয়ারটেকার: প্রেস উইং

প্রধান উপদেষ্টার আরও দুই বিশেষ সহকারী নিয়োগ

খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা মাসুদ আহমেদের সব পদ স্থগিত

টিআইএন নেওয়ার পরে কিন্তু ঘুমাইতে পারবেন না: এনবিআর চেয়ারম্যান

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত