Ajker Patrika

দুই হাত ঘুরে পণ্যের দাম বাড়ে তিন গুণ

ইলিয়াস আহমেদ, ময়মনসিংহ
দুই হাত ঘুরে পণ্যের দাম বাড়ে তিন গুণ

কৃষকের হাতবদলেই বাড়ছে সবজিসহ অন্যান্য পণ্যের দাম। এতে কৃষক সামান্য লাভবান হলেও বেশি সুবিধা লুটে নিচ্ছেন মধ্যস্বত্বভোগীরা। বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বেশির ভাগ পণ্য কৃষকের থেকে মাত্র দু-এক হাত ঘুরেই দ্বিগুণ থেকে তিন গুণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। তবে সেই সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে ক্রেতাদের সাধ্যের মধ্যে পণ্যের দাম রাখার কথা জানিয়েছে প্রশাসন। 

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ময়মনসিংহের সবচেয়ে বড় কাঁচাবাজার মেছুয়া বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি বেগুন ৬০, কাঁচা মরিচ ৪০, টমেটো ৩০-৫০ এবং পেঁয়াজ ৬০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। অথচ কৃষকেরা খেত থেকে তুলে আড়ত বা পাইকারদের কাছে প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি করছেন ২০, কাঁচা মরিচ ২০ ও টমেটো ১৮ টাকা করে। স্থানীয় পর্যায়ে বিক্রি করলে দাম আরও কম বলে জানা গেছে। এতে দেখা গেছে, বেশির ভাগ পণ্য কৃষকের থেকে মাত্র দু-এক হাত ঘুরেই দ্বিগুণ থেকে তিন গুণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। 

এদিকে ক্ষণে ক্ষণে বাড়ছে আলুর দাম। প্রতি কেজি ৪০-৪৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২০০, গরুর মাংস ৭৫০ ও দেশি রসুন ১৬০ টাকা। এ ছাড়া প্রতি কেজি নাজিরশাইল চাল ৭০, মসুর ডাল (চিকন) ১৩৫, মসুর ডাল (মোটা) ১২০, ছোলা ১০৫, চিনি ১৩৬ টাকায়। 

মেছুয়া বাজারে কথা হয় সদর উপজেলার পরানগঞ্জ গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানান, এ বছর তিনি ৪০ শতাংশ জমিতে সবজি চাষ করেছেন। খেতে টমেটো, বেগুন এবং মরিচের বাম্পার ফলন হয়েছে। খেত থেকে তোলা মরিচ প্রতি কেজি আজকের বাজারে বিক্রি করেছেন ২০, টমেটো ১৮ এবং বেগুন ২০ টাকায়। স্থানীয় পর্যায়ে বিক্রি করলে দাম আরও কমে যায়। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘যখন শুনি বাজারে বেগুনের দাম ৮০, মরিচ ১২০ এবং টমেটো ৬০-৮০ টাকা, তখন খারাপ লাগে। সব ধরনের সারের মূল্যবৃদ্ধি পেলেও কৃষক পর্যায়ে সবজির দাম না বাড়ায় চাষাবাদে আমরা আগ্রহ হারাচ্ছি। রমজানের শুরুতে সবজির দাম ভালো পেলেও এখন একেবারেই কমে গেছে।’ 

পাইকারি সবজি ব্যবসায়ী হাসেম উদ্দিন বলেন, ‘গ্রাম থেকে সবজি কিনে ময়মনসিংহের বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করি। অনেক সময় সেসব সবজি ঢাকায়ও পাঠাই। তবে কৃষক থেকে আমরা যে দামে ক্রয় করি, প্রতি কেজিতে ৮-১০ টাকা লাভ করে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে দেই। এর মধ্যে আমাদের পরিবহন খরচ রয়েছে এবং একজন শ্রমিকেরও মজুরি দিতে হয়।’ 

মেছুয়া বাজারের মুরগি ব্যবসায়ী রিপন মিয়া বলেন, সরাসরি খামার থেকে তাদের মুরগি কেনা সম্ভব হয় না। তাই তাঁরা ব্যাপারীর কাছ থেকে ১৮০ টাকা কেজি দরে কিনে ২০০ টাকায় বিক্রি করছেন। এতে সরকারনির্ধারিত দামের চেয়ে আমাদের বাধ্য হয়ে কিছুটা বেশি বিক্রি করতে হচ্ছে।’ 

জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ময়মনসিংহ জেলা শাখার সহকারী পরিচালক আব্দুস সালাম বলেন, ‘কৃষক পর্যায় থেকে কেনা সবজির দাম বাজারে যেন খুব বেশি না বাড়ে, সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। তবে আমাদের পক্ষে মধ্যস্বত্বভোগীদের ধরা একটু কঠিন; তারপরও আমরা চেষ্টা করছি সেই সিন্ডিকেট ভাঙার জন্য।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত