Ajker Patrika

রাজনীতি কেন এত টানে

রহমান মৃধা
রাজনীতি কেন এত টানে

আমি দেশ ছেড়েছি বেশ অল্প বয়সে। তারপরও বাংলাদেশের অনেক রীতিনীতি মেনে চলার অভ্যাসটা ধরে রেখেছি। কারণ হচ্ছে, বাঙালি হলেও বাংলার অনেক কিছুই ইউরোপের চেয়ে ভালো। সে ক্ষেত্রে ভালোকে প্রাধান্য দেওয়া খুবই স্বাভাবিক। 

অবশ্যই অনেক অভ্যাস ছেড়েছি, ইউরোপের অনেক ভালো জিনিস শিখেছি এবং প্রতিনিয়ত শিখছি। তবে একটি বিষয়ে আমি নিজেকে পরিবর্তন করতে পারিনি সেটা হলো, প্রতিবাদ করা। কোথাও কোনো অন্যায় দেখলেই প্রতিবাদমুখর হয়ে পড়ি। কর্মজীবনে যেমন বারবার ঘটেছে, ঘটে চলেছে দৈনন্দিন জীবনেও।

অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদমুখর হওয়া আমার জন্য কখনো সমস্যা নয়; বরং ভালোই লাগে যখন দেখি প্রতিবাদ করলে কাজ হয়। বাংলাদেশেও এমনটা করেছি। চোখের সামনে অন্যায়-অত্যাচার কখনো গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। কিন্তু এখন যদিও দেশে থাকি না, তবুও যতটুকু পারি নানাভাবে নানাজনের পাশে থাকতে চেষ্টা করি, কখনো অর্থনৈতিকভাবে, কখনো লেখালেখির মাধ্যমে।

স্বাধীনতার চেতনায় ছোটবেলা থেকে বড় হয়েছি, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে বড় হয়েছি। মূলত সেটাই কারণ চুপ করে না থাকার পেছনে। তাই এবারের লেখাটা প্রতিবাদের।

যে জিনিসটা আমাকে বেশি ভাবাতে শুরু করেছে সেটা হলো, কবি বা লেখকের ছেলে কি জন্মসূত্রে কবি বা লেখক হয়? ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ারের ছেলেমেয়ে কি জন্মসূত্রে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হয়? না, হয় না। এর জন্য নিজ যোগ্যতার দরকার হয়। পাকিস্তান এবং ভারতে অবশ্য এ প্রথা ছিল। যেমন বেনজির ভুট্টো, ইন্দিরা গান্ধীরা কিন্তু বাবার সূত্র ধরে রাজনীতিতে এসেছিলেন। যেটা বর্তমানে বাংলাদেশে চলমান। কিন্তু এখন তো রাজতন্ত্রের যুগ নয়। এখন গোটা বিশ্ব গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছে, ঠিক তেমন একটি চলমান প্রক্রিয়ার সময় এসব কি মানায়? 

বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে জনগণের রক্তের বিনিময়ে। কোনো রাজপরিবারের রক্তে বা নেতৃত্বে নয়। এটা কি আমরা ভুলতে বসেছি? যে জিনিসটা বেশি লক্ষণীয় সেটা হলো, বাঙালিদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণের তীব্র প্রবণতা। হোক না সেটা গ্রামের মেম্বার, ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, উপজেলার চেয়ারম্যান বা সংসদ সদস্য। কী এমন মধু বা জাদু লুকিয়ে রয়েছে এসব পদের পেছনে? যে সুযোগ-সুবিধা রাষ্ট্র থেকে তারা পায় পৃথিবীর অন্য কোথাও এমনটি দেখিনি। এরপর রয়েছে দুর্নীতি এবং অনীতির কুসংস্কার, যা জাতিকে সম্পূর্ণরূপে অন্ধকারাচ্ছন্ন করে তুলেছে। অতীতে যে প্রবাদ বাক্যটি ব্যবহৃত হতো—শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড; সেটা এখন হয়েছে, দুর্নীতিই জাতির মেরুদণ্ড। কারণ যে দুর্নীতি করে না, সেই অপরাধী অথবা সমাজের সবচেয়ে অকর্মা নাগরিক! শুধু দুর্নীতি করলেই হবে না, সেটা যেন যুগের, মিডিয়ার সবচেয়ে আকর্ষণীয় বড় ধরনের দুর্নীতি হয়, নইলে ভাইরাল হওয়া যাবে না। এ যেন রূপকথার সেই দেশ মগের মুল্লুক, যার শুধু নাম শুনেছি ছোটবেলায়, এখন সেটা বাস্তব।

ভাবতেই গা শিউরে ওঠে! দেশটাকে লুটেপুটে নানা দেশে অর্থ পাচার করে অনেকে দেশের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে।

আমরা দেশ স্বাধীন করেছিলাম সোনার বাংলা করার জন্য, অথচ দেশ হয়ে দাঁড়িয়েছে দুর্নীতির বাংলা। অন্যের কাছে প্রশ্ন না করে নিজেদের কাছে বরং নিজেরাই প্রশ্ন করতে শিখি, দেখবেন আমাদের শিক্ষা উত্তম এবং সৃজনশীল হয়নি। কারণ বই পড়ে কেউ কি ফুটবল খেলা শিখতে পারে? না। তেমন রাজনীতি করলেই কি দেশ এবং দেশের মানুষের সেবা দেওয়া যায়? তা ছাড়া শাসন, শোষণ আর ভাষণ দিয়ে অথবা পুঁথিগত শিক্ষা, খেলাধুলা, স্বাস্থ্য গঠন বা গ্রেড অর্জন করলেই কি সুচরিত্র এবং সুশিক্ষা অর্জন করা যায়? তা যদি সম্ভব হয়, তবে সংযম, সাহস, সৌজন্য, বিচক্ষণতা, ন্যায্যতা, বন্ধুত্ব, উদারতা, ভদ্রতা, সহায়তা, সততা, নম্রতা, দয়া, বাধ্যতা, শৃঙ্খলা, ধৈর্য, অধ্যবসায়, আত্মনিয়ন্ত্রণ, কৌশলতা, প্রজ্ঞা—এই জিনিসগুলো কেন আমাদের মধ্যে বাসা বাঁধেনি?

লেখক: সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এক ছাতায় সব নাগরিক সেবা

‘তল্লাশির’ জন্য উসকানি দিয়েছে গুলশানের ওই বাসার সাবেক কেয়ারটেকার: প্রেস উইং

প্রধান উপদেষ্টার আরও দুই বিশেষ সহকারী নিয়োগ

তানভীর ইমামের বাড়ি ভেবে গুলশানের একটি বাসায় মধ্যরাতে শতাধিক ব্যক্তির অনুপ্রবেশ, তছনছ

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন ক্যালিফোর্নিয়ার পরিবহন বিশেষজ্ঞ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত