Ajker Patrika

শরীর-মনে দগ্ধ রিপন

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
শরীর-মনে দগ্ধ রিপন

আগুনে পুড়ে দুই হাতে গভীর ক্ষত। পায়ের মাংস কেটে লাগানো হয়েছে হাতে। স্ট্যান্ডের সঙ্গে দুই হাত বাঁধা অবস্থাতেই যন্ত্রণায় ছটফট করছেন রিপন হোসেন (২৩)। এক মাস ধরে চিকিৎসাধীন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে। আগুনে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও বাঁচতে পারেননি তাঁর স্ত্রী হালিমা খাতুন (১৯)। হাসপাতালে ভর্তির পরদিনই মারা যান তিনি।

১৪ মাস আগে হালিমাকে ভালোবেসে ঘরে তুলেছিলেন। ভালোই চলছিল তাঁদের সংসার। ২১ অক্টোবর রাতে তাঁদের ভালোবাসার সংসার আগুনে পুড়ে ছাই হয়েছে। ঘুমন্ত অবস্থায় স্বামী-স্ত্রীর শরীরে আগুন লাগে। কে বা কারা আগুন দিয়েছেন বলতে পারছেন না রিপন। এদিকে, হালিমার পরিবারের পক্ষ থেকে রিপনকে দায়ী করে মামলাও করা হয়েছে।

রিপনের বাড়ি নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার ঘোষনগর ইউনিয়নের কমলাবাড়ি গ্রামে আর হালিমার বাড়ি মহাদেবপুর উপজেলার মহিনগর গ্রামে।

গত মঙ্গলবার রাতে হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে যন্ত্রণায় ছটফট করতে দেখা যায় রিপনকে। বড় বোন আমিনা খাতুন পোশাক কারখানার চাকরি ফেলে ঢাকা থেকে ছুটে এসেছেন ভাইয়ের জন্য। পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন রিপনের চাচা কলিম উদ্দিন। তিনি জানালেন, খুবই দরিদ্র পরিবারের ছেলে রিপন। নজিপুরে তিনি একটি কম্পিউটারের দোকানে কাজ করতেন। সেখানে সম্পর্ক হয় পার্শ্ববর্তী গ্রামের হালিমার সঙ্গে। এরপর বিয়ে হয়; কিন্তু রিপনের পরিবার বিয়ে মেনে নিলেও আপত্তি ছিল হালিমার পরিবারের।

পরে তাঁরাও মেনে নেন।

২১ অক্টোবর রাতে কলিম দেখেন, গায়ে আগুন নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে মাঠের দিকে আসছেন হালিমা। তাঁর শরীরের আগুন নিভিয়ে ঘরে গিয়ে দেখেন, রিপনের শরীরও জ্বলছে। এরপর দুজনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখান থেকে দ্রুত পাঠানো হয় রামেক হাসপাতালে। পরদিন বেলা ১১টার দিকে হালিমা মারা যান। এ নিয়ে হালিমার পরিবারের পক্ষ থেকে রিপনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করা হয়েছে।

তবে রিপনের দাবি, সে রাতে তাঁরা দুজনেই শুয়ে পড়েছিলেন। হঠাৎ আগুনের তাপে তাঁর ঘুম ভাঙে। কে আগুন দিয়েছে, তা তিনি জানেন না। কারও সঙ্গে কোনো শত্রুতা না থাকায় কোনো অনুমানও করতে পারছেন না।

রিপন বলেন, ‘আমি আগুন লাগাইনি। তাও আমার নামে নাকি মামলা করা হয়েছে। এখন আমার বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়াই ভালো।’

হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের প্রধান ডা. আফরোজা নাজনীন জানান, আগুনে হালিমার শরীরের ৮০ শতাংশের বেশি পুড়ে গিয়েছিল। তাই তাঁকে বাঁচানো যায়নি আর রিপনের দুই হাত, মুখ ও পেট পুড়ে গিয়েছিল। পোড়ার ধরন দেখে মনে হয়েছে পেট্রোলজাতীয় দাহ্য পদার্থ ঢেলে আগুন লাগানো হয়েছিল। গত মঙ্গলবার রিপনের পায়ের মাংস কেটে হাতে লাগানো হয়েছে। আজ শনিবার ছুটি দেওয়া হবে।

রিপনদের এলাকার ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য আবদুল মান্নান বলেন, রিপন-হালিমা যে ঘরে থাকত সে ঘরে দুটি জানালা ছিল। সেদিক দিয়ে কেউ আগুন লাগাতে পারে। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চান তিনি।

পত্নীতলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেলিম রেজা জানান, কয়েক দিন আগেই তিনি এই থানায় যোগ দিয়েছেন। ঘটনা আগের ওসি থাকার সময়ের। তাই এ ব্যাপারে তিনি কিছু জানেন না। মামলাটি যিনি তদন্ত করছেন তাঁর কাছ থেকে তিনি বিস্তারিত জানার চেষ্টা করবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা হলেই মেয়াদ শেষ নতুন পরিচালনা কমিটির

মুসলিম থেকে খ্রিষ্টান হওয়া ইরানি নারী এখন পানামার জঙ্গলে

ঢাবি ছাত্রীকে যৌন হেনস্তাকারীর পক্ষে নামা ‘তৌহিদী জনতার’ আড়ালে এরা কারা

এনসিপিকে চাঁদা দিচ্ছেন ধনীরা, ক্রাউডফান্ডিং করেও অর্থ সংগ্রহ করা হবে: নাহিদ ইসলাম

ভ্যানিটি ব্যাগ ধরে টান, সন্তানসহ ছিটকে পড়তেই তরুণীর গালে ছুরিকাঘাত

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত