মেহেরপুরে উপেক্ষিত স্বাস্থ্যবিধি

মেহেরপুর সংবাদদাতা
প্রকাশ : ১৬ জানুয়ারি ২০২২, ০৪: ২৩
আপডেট : ১৬ জানুয়ারি ২০২২, ১২: ১৪

হঠাৎ দেশে বাড়ছে করোনা শনাক্তের সংখ্যা। ভাইরাসটির নতুন ধরন ওমিক্রন মোকাবিলায় কঠোর অবস্থানে রয়েছে সরকার। এরপরও অনেকে স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না, পরছেন না মাস্ক। হাটবাজার, গ্রামগঞ্জ, পাড়া-মহল্লা থেকে শুরু করে টিকাদান কেন্দ্রগুলোতেও একই চিত্র। প্রশাসন বা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে নেই কোনো নজরদারি।

মেহেরপুর সরকারি কলেজে ১২ থেকে ১৮ বছরের শিক্ষার্থীদের করোনার টিকা দেওয়া হচ্ছে। লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে শিক্ষার্থীরা টিকা নিচ্ছে। সামাজিক দূরত্ব মানা তো দূরের কথা ৯০ ভাগ ছাত্র-ছাত্রীর মুখে নেই মাস্ক। গাদাগাদি দাঁড়িয়ে থেকেই তারা করোনার টিকা নিচ্ছে। এ চিত্র জেলার প্রতিটি করোনার টিকাকেন্দ্রে। সেখানেও মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি।

জেলার হাটবাজারের চিত্র আরও ভয়াবহ। মানুষের অবাধ চলাফেরা বোঝাই যাচ্ছে না করোনার সংক্রমণ বেড়েছে। আর মাস্ক পরার অভ্যাসতো মানুষ ভুলেই গেছে। ক্রেতা-বিক্রেতা কেউই পরছেন না মাস্ক। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও দেখা যায়নি কোনো পদক্ষেপ।

মেহেরপুর সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ের এক ছাত্র করোনার টিকা নিতে এসেছে মেহেরপুর সরকারি কলেজ কেন্দ্রে। অথচ তার মুখে নেই কোনো মাস্ক। দাঁড়িয়েছে গাদাগাদি করে। কেন মাস্ক না পরে টিকা নিতে এসেছে এমন প্রশ্নে তিনি হেসে দিলেন। বলল, ‘বাড়ি থেকে মাস্ক নিয়ে আসতে মনে নেই। আর এখন খুব একটা মাস্ক পরিও না।’

মেহেরপুর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্রী মাস্কের কথা বলতেই মুখটি লুকিয়ে নেয়।

সদর উপজেলার ষোলমারী গ্রামের ফিরোজ আহম্মেদ এসেছেন শহরে বাজার করতে। মুখে তাঁর মাস্ক নেই। মাস্কের কথা জিজ্ঞাসা করতেই তিনি বলেন, ‘এখন করোনা নেই। তাই আমার মাস্ক পরি না। সবাই মাস্ক পরা শুরু করবে আমিও পরব।’

সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা অলোক কুমার দাস বলেন, প্রতিটি টিকাদান কেন্দ্রে নির্দেশনা দিয়েছি মাস্ক পরার, সঙ্গে সামাজিক দূরত্ব মানার। এরপরও মানুষ সচেতন হচ্ছে না। স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে তাঁদের বোঝানোর চেষ্টা করছি।

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য বলছে, বর্তমানে জেলায় করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৮ জন। আক্রান্তদের মধ্যে সদর উপজেলায় ৬ জন, মুজিবনগর ও গাংনী উপজেলায় ১ জন করে রোগী রয়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত হাসপাতালে কেউ ভর্তি হননি।

সিভিল সার্জন ডা. জাওয়াহেরুল আনাম সিদ্দিকী বলেন, যেহেতু এখানে জিনোম সিকোয়েন্স করার সুযোগ নেই তাই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না আক্রান্তদের মধ্যে ওমিক্রনে কেউ আক্রান্ত আছেন কি না।

সিভিল সার্জন বলেন, জেলার তিন উপজেলায় র‍্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট চলছে। তবে আরটিপিসিআর টেস্ট হচ্ছে না। কারণ জেলা থেকে কুষ্টিয়া মেডিকেলে করোনার নমুনা সংগ্রহের জন্য একটি গাড়ি বরাদ্দ ছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মাধ্যমে। সে গাড়িটি চালু না থাকায় কুষ্টিয়া আরটিপিসিআরে পরীক্ষার জন্য নমুনা পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না।

সরকার গাড়ি বরাদ্দ দিলেই আবারও আরটিপিসিআর টেস্টের জন্য নমুনা পাঠানো সম্ভব হবে। বৃহস্পতিবার তিন উপজেলায় ১৪টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। সব কটিই নেগেটিভ এসেছে।

সিভিল সার্জন আরও বলেন, ‘স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে গ্রামে গ্রামে মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য পরামর্শ দিচ্ছি। এরপরও মানুষ সচেতন হচ্ছে না। আমরা তো আর আইন প্রয়োগ করতে পারি না। আমরা সর্বোচ্চ মানুষকে সচেতন করতে পারি। বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে। তবে শুধু সচেতনতায় নয়, স্বাস্থ্যবিধি মানানোর জন্য আইনের প্রয়োগেরও দরকার রয়েছে।’

জেলা প্রশাসক মুনছুর আলম খান বলেন, ‘আমরা সরকারের বিধিনিষেধ বাস্তবায়নের জন্য চেষ্টা চালাচ্ছি। মানুষকে সচেতন করতে মাইকিং অব্যাহত আছে। তবে আইনের প্রয়োগ ছাড়া সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানতে চান না। কিন্তু হঠাৎ করে কড়াকড়ি আরোপ করা যায় না। মানুষ যাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে, সে জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে যা যা দরকার, সব করা হবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত