সরকারি কর্তারাই মানছেন প্রশাসনের গাফিলতি ছিল

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ১৯ অক্টোবর ২০২১, ০৮: ৫২
আপডেট : ১৯ অক্টোবর ২০২১, ১২: ১৩

কুমিল্লার ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতার যেসব ঘটনা ঘটছে, তাতে প্রশাসনের গাফিলতি দেখছেন অনেকে। এসব ঘটনার পর জড়িতদের ধরতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর হলেও সহিংসতা রোধে তাদের তেমন কোনো উদ্যোগ ছিল না।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং মন্ত্রি-পরিষদ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, কুমিল্লার ঘটনার পর পুলিশ ও মাঠ প্রশাসনকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এরপরও উদ্দেশ্যমূলকভাবে কয়েকটি জায়গায় সহিংস ঘটনা ঘটেছে, যার বেশির ভাগই প্রশাসন আঁচ করতে পারেনি।

১৩ অক্টোবর ভোরে কুমিল্লার একটি পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন অবমাননার অভিযোগ ওঠে। এর প্রতিবাদে দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন বিক্ষোভকারীরা। দেশের বিভিন্ন স্থানে মন্দির এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা চালানো হয়। চাঁদপুরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে চারজন এবং নোয়াখালীতে একজন নিহত হন। ফেসবুকে এক তরুণের ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে গত সোমবার রাতে রংপুরের পীরগঞ্জে জেলেপল্লিতে আগুন দিয়ে লুটপাট চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানিয়েছেন, পুলিশ যাওয়ার আগেই দুষ্কৃতকারীরা পীরগঞ্জে ২৫টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছে। ৯০টির বেশি বাড়িঘরে লুটপাট ও ভাঙচুর করেছে। এরপর সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ, এপিবিএন, র‌্যাব ও বিজিবির সদস্যরা গিয়ে সব ধরনের নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়েছেন। আকস্মিকভাবেই দুষ্কৃতকারীরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। জড়িতদের তাৎক্ষণিকভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এলাকাবাসীর সহায়তায় ৪৫ জনকে ধরা হয়েছে এবং আরও কয়েকজনকে ধরার জন্য চেষ্টা চলছে।

সহিংসতার ঘটনাগুলোয় গোয়েন্দা সংস্থার ব্যর্থতা রয়েছে কি না, সেই প্রশ্নের জবাব দেননি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। গতকাল সচিবালয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, পীরগঞ্জের ঘটনাটি উদ্দেশ্যমূলক কি না, সেটা বের করতে আরেকটু সময় দিতে হবে। আমাদের লোক কাজ করছে। সহিংসতাকারীদের মূল উদ্দেশ্য দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা বিনষ্ট করা, সরকারকে বেকায়দায় ফেলা।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে বলেন, কুমিল্লার ঘটনার পর মাঠ প্রশাসনকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এরপর দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতার ঘটনা ঘটলেও এ বিষয়ে মাঠ প্রশাসনকে আর কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। সরকার চাইছে জাতীয় নির্বাচনের আগে বিষয়গুলো প্রশাসনের সঙ্গে রাজনৈতিকভাবেও মোকাবিলা করতে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সচিব আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কোনো ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে দায় প্রশাসনের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়, এটা ঠিক নয়। কারণ, আমাদের মাঠ প্রশাসনের কাঠামো অনুযায়ী প্রত্যন্ত অঞ্চলে তাৎক্ষণিকভাবে অনেক ঘটনায় সাড়া দেওয়া সম্ভব হয় না। কিন্তু সব এলাকায় দলীয় কর্মকাণ্ড চলছে। রাজনৈতিক নেতারা চাইলেই সহিংস ঘটনাগুলো রোধ করতে পারেন। তাঁরা মন থেকে এটা চান কি না, এই প্রশ্ন কিন্তু এখন সামনে আসছে।’

এসব বিষয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, পুলিশ ও মাঠ প্রশাসনকে আগেই সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কুমিল্লার ঘটনার পর সুষ্ঠুভাবে পূজা উৎসব শেষ হয়েছে। যেসব স্থানে সহিংসতা হয়েছে, সেগুলোর তদন্ত চলছে। যে অপরাধ করবে, শাস্তি পেতেই হবে। জাতীয় নির্বাচনের সময় এগিয়ে আসছে। নির্বাচন সামনে রেখে যারা এ ধরনের কর্মকাণ্ড করে, তারাই এখন সহিংসতামূলক কর্মকাণ্ড করছে।

এসব ঘটনায় প্রশাসনের ব্যর্থতা দেখছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান। গতকাল তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অবশ্যই প্রশাসনের ব্যর্থতা আছে। কারণ, কুমিল্লার ঘটনার পর প্রশাসনের আরও তৎপর হওয়া উচিত ছিল। সব পূজামণ্ডপেই বাড়তি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল।’

সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান বলছেন, কুমিল্লায় প্রশাসন পদক্ষেপ নিতে দেরি করেছে। আরও আগে তাদের তৎপর হওয়া উচিত ছিল, সবার চোখে পড়ার মতো তৎপরতা দরকার ছিল। তিনি বলেন, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে বেলা ১১টার দিকে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়ার পর সেখানে পুলিশ সজাগ ছিল না। এ কারণে সেখানে সহিংস ঘটনা ঘটেছে। সাবেক এই সচিব বলেন, ‘আগে সমাজের মানুষই এসব প্রতিরোধ করত। এটা এখন ভেঙে গেছে। প্রশাসনকে তৎপর হতে হবে। জড়িতদের গ্রেপ্তার করে দ্রুত বিচার আইনে বিচার করতে হবে। রামু ও নাসিরনগরের ঘটনার বিচার দেখিনি। ফলে মানুষের কাছে ভুল বার্তা যাচ্ছে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত