মাদ্রাসাশিক্ষকসহ দুজন খুন

গোয়াইনঘাট প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৬ এপ্রিল ২০২২, ০৭: ০৫
আপডেট : ১৬ এপ্রিল ২০২২, ১৪: ৪১

গোয়াইনঘাটে ১২ ঘণ্টার ব্যবধানে মাদ্রাসাশিক্ষকসহ দুজন খুন হয়েছেন। পুলিশ গত বৃহস্পতিবার বিকেলে ও দিবাগত রাতে দুজনের মরদেহ উদ্ধার করে। নিহতরা হলেন, মাদ্রাসাশিক্ষক কাওসার মিয়া ও মুক্তার হোসেন।

এদিকে কাওসার মিয়ার খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে সামসুল ইসলাম হাসান নামের একজনকে আটক করেছে পুলিশ। এ সময় পুলিশ তাঁর কাছ থেকে একটি খেলনা পিস্তল, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোগো সংবলিত চারটি অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোনসেট, একটি মাস্ক এবং কম্পিউটারের মাদার বোর্ড উদ্ধার করে। সামসুল ইসলামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার দাদনচক মিয়াপাড়ায়।

পুলিশ জানায়, গত বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার জাফলং সীমান্ত এলাকা থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় কাওসার মিয়ার মরদেহ উদ্ধার করে গোয়াইনঘাট থানা-পুলিশ। কাওসার মিয়া সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার কালাম বহরপুর গ্রামের আব্দুল বাছিতের ছেলে। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতেন।

হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে পুলিশের কাছে জবানবন্দি দিয়েছেন সামসুল ইসলাম। বিষয়টি নিয়ে গতকাল শুক্রবার প্রেস ব্রিফিং করেছে পুলিশ। তাঁর জবানবন্দির বরাত দিয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে সিলেট পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন (পিপিএম) জানান, ঘাতক সামসুল ইসলাম বিভিন্ন অপরাধ এবং প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। যার কারণে তিনি পরিবার থেকে দীর্ঘদিন ধরে বিচ্ছিন্ন রয়েছেন। সামসুল ইসলাম সময় সুযোগ বুঝে বিভিন্ন জায়গায় নিজেকে ফ্রিল্যান্সার ও আইটি বিশেষজ্ঞ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিতেন।

পুলিশ সুপার বলেন, ছয়-সাত মাস আগে নিজেকে সামিয়া জাহান পরিচয় দিয়ে ভুয়া ফেসবুক আইডি খুলে মেয়ে সেজে মাদ্রাসাশিক্ষক কাওসার মিয়াকে প্রেমের ফাঁদে ফেলেন সামসুল ইসলাম। এরপর থেকে তাঁদের মধ্যে মেসেঞ্জারে বিভিন্ন সময় কথোপকথন হতো। এরই মধ্যে গত ৯ এপ্রিল সামসুল ইসলাম জাফলংয়ে গিয়ে নিজেকে সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে মামার বাজারে একটি আবাসিক হোটেলে ওঠেন। সেখানে গত বৃহস্পতিবার পয়লা বৈশাখে কাওসার মিয়াকে ফোন করে দেখা করার জন্য জাফলংয়ে আসতে বলেন।

কাওসার মিয়া সন্ধ্যার দিকে জাফলংয়ে যান। হোটেলে গিয়ে দেখতে পান সেখানে সামিয়া জাহান নামে কেউ নেই বা কোনো মেয়ের অস্তিত্ব নেই। হোটেল কক্ষে যিনি রয়েছেন তিনি একজন পুরুষ। কাওসার মিয়া প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে সেখান থেকে চলে যেতে চান। কিন্তু সামসুল ইসলাম তাঁকে এডিট করা বিভিন্ন ছবি দেখিয়ে ব্ল্যাকমেল করেন। এ সময় তিনি সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা কর্মকর্তা পরিচয়ে কাছে থাকা পিস্তল দিয়ে ভয় দেখিয়ে কাওসার মিয়ার কাছে দুই লাখ টাকা দাবি করেন। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে সামসুল ইসলাম রাত সাড়ে দশটার দিকে হোটেল থেকে কাওসার মিয়ার দুই হাত বেঁধে গুচ্ছগ্রামের লালমাটি এলাকায় নিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করেন।

অন্যদিকে একই দিন মুক্তার হোসেন নামে এক যুবককে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশ বৃহস্পতিবার দুপুরে তাঁর গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করে। তিনি উপজেলার ভিতরগুল গ্রামের কুটু মিয়ার ছেলে। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার সাকেরপেকেরখাল গ্রামের খাল থেকে তাঁর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

পুলিশ জানায়, সাকেরপেকেরখাল গ্রামের খালে স্থানীয় বাসিন্দারা মুক্তারের গলা কাটা মরদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেন। খবর পেয়ে গোয়াইনঘাট থানা-পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে।

গোয়াইনঘাট থানার ওসি কে এম নজরুল ইসলাম বলেন, পুলিশ খবর পেয়ে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে পাঠিয়েছে। হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্‌ঘাটনে কাজ করছে পুলিশ। হত্যাকাণ্ডের কারণ জানা গেলেই প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা সহজ হবে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত