আবু সাইম, ঢাকা
টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইলের আরিফুল ইসলামের খামারে ১৫ হাজার লেয়ার মুরগি থাকত। ২০ বছর পর নেমেছে ২ হাজারে। আরিফুল বলেন, উৎপাদন খরচ বাড়ায় লোকসান হচ্ছে। এই চালান শেষ হলে আর তুলবেন কি না, সে বিষয়ে তিনি সন্দিহান। আরিফুলের মতোই অবস্থা দেশের প্রায় ৮৫ হাজার খামারির। একদিকে মুরগির খাবারের দাম চড়া, অপরদিকে ডিম-মুরগির দাম অন্যদের নিয়ন্ত্রণে। জানা যায়, মোট উৎপাদনের ৯০ শতাংশ ক্ষুদ্র খামারিদের হলেও ১০ শতাংশ উৎপাদন নিয়েই বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে ১০টি করপোরেট প্রতিষ্ঠান।
কয়েকজন খামারি জানান, খাদ্য-বাচ্চা থেকে শুরু করে ডিম-মুরগি সবকিছুই করপোরেটদের নিয়ন্ত্রণে। পাইকারদের মাধ্যমে তারা দাম ঠিক করে দেয়।
বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যমতে, ছোট খামারে ডিম থাকে সর্বোচ্চ ১০ হাজার। কিন্তু প্রতিটি করপোরেট প্রতিষ্ঠানের একসঙ্গে কয়েক লাখ ডিম থাকে। ফলে বাজার থাকে তাদের নিয়ন্ত্রণে। নিজস্ব সামগ্রী ব্যবহার করায় তাদের উৎপাদন খরচও অনেক কম। গত এক বছরে প্রায় ৪০ শতাংশ খামার বন্ধ হয়ে গেছে।
অ্যাসোসিয়েশনের অভিযোগ, বাজারে বাচ্চার দাম কমে গেলে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো উৎপাদন কমিয়ে ডিম সংরক্ষণ করে। ফলে সংকট কেটে যায়। আবার বাচ্চার দাম বাড়লে তারা উৎপাদন বাড়িয়ে মুনাফা করে। এক বছরে বাচ্চার দাম বেড়েছে ৫০ শতাংশের বেশি। পোলট্রি ফিড বা মুরগির খাবারের দাম বেড়েছে ৬০ শতাংশের বেশি। অ্যাসোসিয়েশনের মতে, মূল্যবৃদ্ধির জন্য বড় কোম্পানিগুলোই দায়ী।
গত আগস্টে ডিমের দাম বাড়ায় করপোরেট প্রতিষ্ঠানের কারসাজি পেয়েছিল জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। তদারকিতে তারা দেখতে পায়, একটি প্রতিষ্ঠান দুই দিনের ব্যবধানে আড়াই টাকা বেশি দরে ডিম বিক্রি করায় বাজারে দাম বেড়ে যায়।
জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘কয়েক মাস আগে কারসাজির মাধ্যমে যখন ডিমের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছিল, তখন ভোক্তার অভিযানে দাম নেমে আসে। তবে পোলট্রি খাদ্য-উপকরণের মূল্যবৃদ্ধির কারণে এখনো ডিমের বাজার চড়া। কিছু করপোরেট প্রতিষ্ঠান সব খাতেই নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিচ্ছে। এতে ক্রমান্বয়ে ক্ষুদ্র খামারি কমে যাচ্ছে।
ডিমের সিন্ডিকেট ঠেকাতে ও বাজার নিয়ন্ত্রণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রতিযোগিতা কমিশনে ১১টি সুপারিশ করা হয়েছে। বড়দের নতুন হাতিয়ার কয়েকজন খামারি জানান, করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো চুক্তিভিত্তিক অনেক খামার পরিচালনা করে। সেসব খামারকে তারা বাচ্চা, ওষুধ, খাবার সরবরাহ করে। চুক্তিভিত্তিক খামারিরা করপোরেটদের মাধ্যমেই মুরগি ও ডিম বিক্রি করে। ফলে সব সময় বড়দের নিয়ন্ত্রণ থাকে। ১০টি বড় প্রতিষ্ঠানের হাতেই ১০ শতাংশ বাজার। বাকি ৯০ শতাংশ ৮৫ হাজার খামারির।
খামারিরা আরও জানান, ডিমের আড়তে বড় প্রতিষ্ঠানের লোক থাকে। তাদের আর আড়তদারদের যোগসাজশেই ডিমের দাম নির্ধারণ হয়।
গত সোমবার বিকেলে গাজীপুরের খামারিরা স্থানীয় আড়তদারদের কাছে ডিম বিক্রি করেন ৯ টাকা ৩০ পয়সা দরে। ঢাকার আড়তে বিক্রি হয় ৯ টাকা ৭৫ পয়সায়। খামারিরা বলছেন, ডিমপ্রতি উৎপাদন খরচ ১১ টাকার বেশি। ডিমপ্রতি দেড় টাকার বেশি লোকসান হচ্ছে।
ঘাটাইলের আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘খাবারের দাম বাড়ায় ডিমে অনেক লোকসান হচ্ছে। আমরা উৎপাদন করলেও দাম ঠিক করে ঢাকার আড়তদারেরা। তাঁদের কাছ থেকে জেনে স্থানীয় ব্যাপারীরা আমাদের দাম দেয়।’
করপোরেট প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন
বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলের (বিপিআইসিসি) হিসাব মতে, ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে ডিম উৎপাদিত হয়েছে ২ হাজার ৩৩৫ কোটি। দিনে গড়ে উৎপাদন ৬ কোটি ৪০ লাখ ডিম। শীর্ষ ১০টি প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনই দিনে ৬০ লাখ। এর মধ্যে কাজী ফার্মস গ্রুপ প্রতিদিন ১৩-১৪ লাখ, ডায়মন্ড এগ লিমিটেড ১১.৫-১২ লাখ, প্যারাগন পোলট্রি লিমিটেড ৭.৫-৮ লাখ, সিপি বাংলাদেশ ৭-৮ লাখ, নারিশ এ্যাগ্রো ৬-৭ লাখ, নাহার এ্যাগ্রো ৫.৫-৬ লাখ, নর্থ এগ ৪-৫ লাখ, আফিল এ্যাগ্রো ৩-৪ লাখ, ভিআইপি শাহাদত ১.৭৫-২ লাখ ডিম উৎপাদন করে। বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর উৎপাদন চাহিদার প্রায় ১৫ শতাংশ। তবে বাচ্চা উৎপাদনের ডিম বাজারে ছাড়লে তা দ্বিগুণ হয়।
বাচ্চার দামেও নিয়ন্ত্রণ
বিপিআইসিসির হিসাবে, সপ্তাহে ব্রয়লার ও লেয়ার মিলিয়ে প্রায় ১ কোটি ৪৫ লাখ বাচ্চা উৎপাদন হয়। প্রায় ৯৫ শতাংশ বাচ্চাই উৎপাদন করে বাংলাদেশ ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশনভুক্ত ১০০টি কোম্পানি।
খামারিরা বলছেন, করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো মাংস সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাত করে বাজারে ছাড়ায় বাচ্চার দাম কমলে তা চুক্তিভিত্তিক খামারে পাঠানো হয়। একদিকে বাজারে সরাসরি ডিম বিক্রি, অপরদিকে নিজেদের খামারে পালনের কারণে কিছু দিনের মধ্যেই বাচ্চার সংকট দেখা দেয়। ফলে বাচ্চার দাম ৫০ টাকাও ছাড়িয়ে যায়। বাচ্চার দাম বেড়ে গেলে ছোট খামারিরা লোকসানের ভয়ে খামার সাময়িক বন্ধ রাখেন। এতে মাসখানেকের মধ্যেই মুরগির দাম বাড়তে থাকে। তখন বড় প্রতিষ্ঠান একচেটিয়া মুনাফা করে। বাজার পরিস্থিতি দেখে সাধারণ খামারিরা ফিরে এলে তাদের মুরগি বাজারে আসার আগেই দাম আবার কমতে থাকে। কম দামের মুরগি প্রক্রিয়াজাত করে সুপারশপ ও অভিজাত হোটল-রেস্টুরেন্টে বিক্রি করা হয়।
বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, ঢাকার বাজারের ভিত্তিতে আড়তদারেরা বাজারমূল্য নির্ধারণ করে থাকেন, তাঁদের সঙ্গে করপোরেটের যোগাযোগ থাকে। তিনি বলেন, কিছু করপোরেট কোম্পানি বাণিজ্যিক খামারে আসায় বাজার তাদের হাতে চলে গেছে। কারণ, এ খাতের মোট উৎপাদনের প্রায় ৪০ শতাংশ তাদের হাতে। তারাই ডিম ও বাচ্চা উৎপাদন করে, খাবার তৈরি ও বিক্রি করে, ওষুধ বিক্রি করে। ফলে তাদের উৎপাদন খরচ সাধারণ খামারিদের চেয়ে ২০ শতাংশ কম পড়ে।
ডায়মন্ড এগ লিমিটেডের জেনারের ম্যানেজার মো. আসাদুজ্জামান মেজবা বলেন, ‘সিন্ডিকেট কিছু না। তবে বড় কোম্পানিগুলোর বড় পুঁজি। তারা পণ্য কিনেও বেশি পরিমাণে। তারা বহুমুখী উৎপাদন শুরু করেছে। তাই তাদের খরচ সাধারণ খামারির চেয়ে কম। বড় খামারিরাই বিপদে, ছোটদের অবস্থা আরও খারাপ।’
আফতাব বহুমুখী ফার্মস লিমিটেডের সিনিয়র সহকারী মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ শাহেদ কবির বলেন, ‘করপোরেট প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন তো অনেক কম। তারা কীভাবে সিন্ডিকেট করবে? ২৫ টাকার বাচ্চা ১৫ টাকায় বেচতে হয়, তাই বাচ্চা উৎপাদন কমিয়ে দিতে হয়। আফতাব কন্ট্রাক্ট ফার্মিং করে না।’
বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিআইএ) প্রচার সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘করপোরেট খামারিরা কী পরিমাণ ও কী কাজ করতে পারবে, তা নির্দিষ্ট করে দেওয়া উচিত। তারা উৎপাদন লাগাহীন বাড়াতে পারলে ছোটদের খুঁজে পাওয়া যাবে না।’
ভর্তুকি দেওয়ার পরামর্শ
বিপিআইয়ের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মুহাম্মদ মহসিন বলেন, ছোটদের বেশি বিপদ, ছোটদের বাঁচাতে ভর্তুকি দেওয়া উচিত।
ক্যাবের চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেন, ‘অর্থনীতির যে নীতি আমরা অনুসরণ করছি, সে নীতিতে করপোরেটের বড় হওয়াই স্বাভাবিক। তবে জাপানে করপোরেট সিস্টেমে বড় প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের সঙ্গে অসংখ্য ছোট প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত রাখে। এতে সামাজিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকে। ছোট খামারি বা ছোট প্রতিষ্ঠান কীভাবে অর্থনীতিতে অবদান রাখবে, তা সরকারকে ঠিক করতে হবে।’
টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইলের আরিফুল ইসলামের খামারে ১৫ হাজার লেয়ার মুরগি থাকত। ২০ বছর পর নেমেছে ২ হাজারে। আরিফুল বলেন, উৎপাদন খরচ বাড়ায় লোকসান হচ্ছে। এই চালান শেষ হলে আর তুলবেন কি না, সে বিষয়ে তিনি সন্দিহান। আরিফুলের মতোই অবস্থা দেশের প্রায় ৮৫ হাজার খামারির। একদিকে মুরগির খাবারের দাম চড়া, অপরদিকে ডিম-মুরগির দাম অন্যদের নিয়ন্ত্রণে। জানা যায়, মোট উৎপাদনের ৯০ শতাংশ ক্ষুদ্র খামারিদের হলেও ১০ শতাংশ উৎপাদন নিয়েই বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে ১০টি করপোরেট প্রতিষ্ঠান।
কয়েকজন খামারি জানান, খাদ্য-বাচ্চা থেকে শুরু করে ডিম-মুরগি সবকিছুই করপোরেটদের নিয়ন্ত্রণে। পাইকারদের মাধ্যমে তারা দাম ঠিক করে দেয়।
বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যমতে, ছোট খামারে ডিম থাকে সর্বোচ্চ ১০ হাজার। কিন্তু প্রতিটি করপোরেট প্রতিষ্ঠানের একসঙ্গে কয়েক লাখ ডিম থাকে। ফলে বাজার থাকে তাদের নিয়ন্ত্রণে। নিজস্ব সামগ্রী ব্যবহার করায় তাদের উৎপাদন খরচও অনেক কম। গত এক বছরে প্রায় ৪০ শতাংশ খামার বন্ধ হয়ে গেছে।
অ্যাসোসিয়েশনের অভিযোগ, বাজারে বাচ্চার দাম কমে গেলে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো উৎপাদন কমিয়ে ডিম সংরক্ষণ করে। ফলে সংকট কেটে যায়। আবার বাচ্চার দাম বাড়লে তারা উৎপাদন বাড়িয়ে মুনাফা করে। এক বছরে বাচ্চার দাম বেড়েছে ৫০ শতাংশের বেশি। পোলট্রি ফিড বা মুরগির খাবারের দাম বেড়েছে ৬০ শতাংশের বেশি। অ্যাসোসিয়েশনের মতে, মূল্যবৃদ্ধির জন্য বড় কোম্পানিগুলোই দায়ী।
গত আগস্টে ডিমের দাম বাড়ায় করপোরেট প্রতিষ্ঠানের কারসাজি পেয়েছিল জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। তদারকিতে তারা দেখতে পায়, একটি প্রতিষ্ঠান দুই দিনের ব্যবধানে আড়াই টাকা বেশি দরে ডিম বিক্রি করায় বাজারে দাম বেড়ে যায়।
জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘কয়েক মাস আগে কারসাজির মাধ্যমে যখন ডিমের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছিল, তখন ভোক্তার অভিযানে দাম নেমে আসে। তবে পোলট্রি খাদ্য-উপকরণের মূল্যবৃদ্ধির কারণে এখনো ডিমের বাজার চড়া। কিছু করপোরেট প্রতিষ্ঠান সব খাতেই নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিচ্ছে। এতে ক্রমান্বয়ে ক্ষুদ্র খামারি কমে যাচ্ছে।
ডিমের সিন্ডিকেট ঠেকাতে ও বাজার নিয়ন্ত্রণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রতিযোগিতা কমিশনে ১১টি সুপারিশ করা হয়েছে। বড়দের নতুন হাতিয়ার কয়েকজন খামারি জানান, করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো চুক্তিভিত্তিক অনেক খামার পরিচালনা করে। সেসব খামারকে তারা বাচ্চা, ওষুধ, খাবার সরবরাহ করে। চুক্তিভিত্তিক খামারিরা করপোরেটদের মাধ্যমেই মুরগি ও ডিম বিক্রি করে। ফলে সব সময় বড়দের নিয়ন্ত্রণ থাকে। ১০টি বড় প্রতিষ্ঠানের হাতেই ১০ শতাংশ বাজার। বাকি ৯০ শতাংশ ৮৫ হাজার খামারির।
খামারিরা আরও জানান, ডিমের আড়তে বড় প্রতিষ্ঠানের লোক থাকে। তাদের আর আড়তদারদের যোগসাজশেই ডিমের দাম নির্ধারণ হয়।
গত সোমবার বিকেলে গাজীপুরের খামারিরা স্থানীয় আড়তদারদের কাছে ডিম বিক্রি করেন ৯ টাকা ৩০ পয়সা দরে। ঢাকার আড়তে বিক্রি হয় ৯ টাকা ৭৫ পয়সায়। খামারিরা বলছেন, ডিমপ্রতি উৎপাদন খরচ ১১ টাকার বেশি। ডিমপ্রতি দেড় টাকার বেশি লোকসান হচ্ছে।
ঘাটাইলের আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘খাবারের দাম বাড়ায় ডিমে অনেক লোকসান হচ্ছে। আমরা উৎপাদন করলেও দাম ঠিক করে ঢাকার আড়তদারেরা। তাঁদের কাছ থেকে জেনে স্থানীয় ব্যাপারীরা আমাদের দাম দেয়।’
করপোরেট প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন
বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলের (বিপিআইসিসি) হিসাব মতে, ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে ডিম উৎপাদিত হয়েছে ২ হাজার ৩৩৫ কোটি। দিনে গড়ে উৎপাদন ৬ কোটি ৪০ লাখ ডিম। শীর্ষ ১০টি প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনই দিনে ৬০ লাখ। এর মধ্যে কাজী ফার্মস গ্রুপ প্রতিদিন ১৩-১৪ লাখ, ডায়মন্ড এগ লিমিটেড ১১.৫-১২ লাখ, প্যারাগন পোলট্রি লিমিটেড ৭.৫-৮ লাখ, সিপি বাংলাদেশ ৭-৮ লাখ, নারিশ এ্যাগ্রো ৬-৭ লাখ, নাহার এ্যাগ্রো ৫.৫-৬ লাখ, নর্থ এগ ৪-৫ লাখ, আফিল এ্যাগ্রো ৩-৪ লাখ, ভিআইপি শাহাদত ১.৭৫-২ লাখ ডিম উৎপাদন করে। বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর উৎপাদন চাহিদার প্রায় ১৫ শতাংশ। তবে বাচ্চা উৎপাদনের ডিম বাজারে ছাড়লে তা দ্বিগুণ হয়।
বাচ্চার দামেও নিয়ন্ত্রণ
বিপিআইসিসির হিসাবে, সপ্তাহে ব্রয়লার ও লেয়ার মিলিয়ে প্রায় ১ কোটি ৪৫ লাখ বাচ্চা উৎপাদন হয়। প্রায় ৯৫ শতাংশ বাচ্চাই উৎপাদন করে বাংলাদেশ ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশনভুক্ত ১০০টি কোম্পানি।
খামারিরা বলছেন, করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো মাংস সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাত করে বাজারে ছাড়ায় বাচ্চার দাম কমলে তা চুক্তিভিত্তিক খামারে পাঠানো হয়। একদিকে বাজারে সরাসরি ডিম বিক্রি, অপরদিকে নিজেদের খামারে পালনের কারণে কিছু দিনের মধ্যেই বাচ্চার সংকট দেখা দেয়। ফলে বাচ্চার দাম ৫০ টাকাও ছাড়িয়ে যায়। বাচ্চার দাম বেড়ে গেলে ছোট খামারিরা লোকসানের ভয়ে খামার সাময়িক বন্ধ রাখেন। এতে মাসখানেকের মধ্যেই মুরগির দাম বাড়তে থাকে। তখন বড় প্রতিষ্ঠান একচেটিয়া মুনাফা করে। বাজার পরিস্থিতি দেখে সাধারণ খামারিরা ফিরে এলে তাদের মুরগি বাজারে আসার আগেই দাম আবার কমতে থাকে। কম দামের মুরগি প্রক্রিয়াজাত করে সুপারশপ ও অভিজাত হোটল-রেস্টুরেন্টে বিক্রি করা হয়।
বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, ঢাকার বাজারের ভিত্তিতে আড়তদারেরা বাজারমূল্য নির্ধারণ করে থাকেন, তাঁদের সঙ্গে করপোরেটের যোগাযোগ থাকে। তিনি বলেন, কিছু করপোরেট কোম্পানি বাণিজ্যিক খামারে আসায় বাজার তাদের হাতে চলে গেছে। কারণ, এ খাতের মোট উৎপাদনের প্রায় ৪০ শতাংশ তাদের হাতে। তারাই ডিম ও বাচ্চা উৎপাদন করে, খাবার তৈরি ও বিক্রি করে, ওষুধ বিক্রি করে। ফলে তাদের উৎপাদন খরচ সাধারণ খামারিদের চেয়ে ২০ শতাংশ কম পড়ে।
ডায়মন্ড এগ লিমিটেডের জেনারের ম্যানেজার মো. আসাদুজ্জামান মেজবা বলেন, ‘সিন্ডিকেট কিছু না। তবে বড় কোম্পানিগুলোর বড় পুঁজি। তারা পণ্য কিনেও বেশি পরিমাণে। তারা বহুমুখী উৎপাদন শুরু করেছে। তাই তাদের খরচ সাধারণ খামারির চেয়ে কম। বড় খামারিরাই বিপদে, ছোটদের অবস্থা আরও খারাপ।’
আফতাব বহুমুখী ফার্মস লিমিটেডের সিনিয়র সহকারী মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ শাহেদ কবির বলেন, ‘করপোরেট প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন তো অনেক কম। তারা কীভাবে সিন্ডিকেট করবে? ২৫ টাকার বাচ্চা ১৫ টাকায় বেচতে হয়, তাই বাচ্চা উৎপাদন কমিয়ে দিতে হয়। আফতাব কন্ট্রাক্ট ফার্মিং করে না।’
বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিআইএ) প্রচার সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘করপোরেট খামারিরা কী পরিমাণ ও কী কাজ করতে পারবে, তা নির্দিষ্ট করে দেওয়া উচিত। তারা উৎপাদন লাগাহীন বাড়াতে পারলে ছোটদের খুঁজে পাওয়া যাবে না।’
ভর্তুকি দেওয়ার পরামর্শ
বিপিআইয়ের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মুহাম্মদ মহসিন বলেন, ছোটদের বেশি বিপদ, ছোটদের বাঁচাতে ভর্তুকি দেওয়া উচিত।
ক্যাবের চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেন, ‘অর্থনীতির যে নীতি আমরা অনুসরণ করছি, সে নীতিতে করপোরেটের বড় হওয়াই স্বাভাবিক। তবে জাপানে করপোরেট সিস্টেমে বড় প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের সঙ্গে অসংখ্য ছোট প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত রাখে। এতে সামাজিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকে। ছোট খামারি বা ছোট প্রতিষ্ঠান কীভাবে অর্থনীতিতে অবদান রাখবে, তা সরকারকে ঠিক করতে হবে।’
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৩ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৩ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৩ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৩ দিন আগে