এক হয়ে মাঠে নামতে চায় ধর্মাশ্রয়ী দলগুলো

সাখাওয়াত ফাহাদ, ঢাকা
প্রকাশ : ২৮ এপ্রিল ২০২৩, ১১: ১৪
আপডেট : ২৮ এপ্রিল ২০২৩, ১১: ২৪

জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে মত-দ্বিমত থাকলেও নিজেদের মতো করে প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে দল ও জোটগুলো। ভোটের আগ দিয়ে জোটের হিসাবনিকাশে পরিবর্তনও আসতে পারে। হতে পারে পাশবদল।

দেশে ইসলাম ধর্মের নাম ব্যবহার করে রাজনীতি করা দলগুলোর ভোটের রাজনীতিতে প্রভাব বিবেচনা করে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে তাদের কাছে পেতে চায় বড় দুই দল। এমন অবস্থায় কৌশলী অবস্থান নিয়েছে ধর্মাশ্রয়ী ওই দলগুলো। এ ধরনের কয়েকটি দল জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না নিলেও স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। তবে ধর্মাশ্রয়ী বেশির ভাগ দলই বলছে, তারা সমমনা দলগুলোকে নিয়েই এবার জাতীয় নির্বাচনের মাঠে নামতে চায়।

দেশে নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ইসলাম ধর্মের নাম ব্যবহারকারী দল আছে ১০টি। দলগুলো হলো জাকের পার্টি, তরীকত ফেডারেশন, খেলাফত আন্দোলন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইসলামি ফ্রন্ট ও খেলাফত মজলিস। এ ছাড়া নিবন্ধনহীন ২০টির বেশি ধর্মাশ্রয়ী দল রাজনীতিতে সক্রিয়।

নিবন্ধিত এসব দলের মধ্যে একমাত্র তরীকত ফেডারেশন আছে ক্ষমতাসীন দলের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটে। দলের নেতারা বলছেন, আসন্ন নির্বাচনেও দলটি ১৪ দলেই থাকবে। এরই মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতিও নিতে শুরু করেছে দলটি। তরীকত ফেডারেশনের যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ আলি ফারুকী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘জোটের চিন্তার বাইরে নির্বাচন নিয়ে ভিন্ন কোনো ভাবনা নেই। আমাদের নির্বাচনের প্রস্তুতি রয়েছে। আগামী নির্বাচনে আমরা সংসদে আমাদের আরও বেশি প্রতিনিধি দেখতে চাই।’

জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না নিলেও সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে চরমোনাই পীরের ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। সমমনা দলগুলোকে নিয়ে জোট গড়ার চেষ্টায় কিছুটা ভাটা পড়লেও আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে দলটি। এ বিষয়ে দলের মহাসচিব ইউনুস আহমাদ বলেন, এখনো দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি। অনানুষ্ঠানিক আলোচনা চলছে। জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে আমরা তৃণমূল থেকে আসা সম্ভাব্য প্রার্থীদের প্রস্তাব নিয়ে কাজ করছি।’ বড় দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচনী জোটের সম্ভাবনা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ অথবা বিএনপির সঙ্গে কোনো ধরনের জোট বা যুগপৎ আন্দোলনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ যাবে না।’

খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের জানিয়েছেন, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নিতে রাজি নন তাঁরা। এবারের সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও অংশ নিচ্ছে না দলটি। তিনি বলেন, ‘আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। নির্বাচনের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে আরও কয়েক মাস সময় লাগবে। ইসলামপন্থী দলগুলোর এক হয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার একটা সম্ভাবনা আছে। আমরা চাই, এটা হোক।’

ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের চেয়ারম্যান সৈয়দ বাহাদুর শাহ মোজাদ্দেদী জানান, তাঁর দল আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে। সিটি নির্বাচনেও তাঁদের প্রার্থী থাকবে। সমমনা দলগুলোর সঙ্গে জোট বাঁধার সম্ভাবনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি এখনো প্রাথমিক আলোচনার পর্যায়ে আছে। তবে সমমনা দলগুলো এক হলে সেটা ভালো।’

জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী জানিয়েছেন, নির্বাচনকালে নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবে না তাঁদের দল। তবে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলের সমর্থনপুষ্ট প্রার্থী থাকবে। এ ছাড়া জাতীয় নির্বাচনের প্রার্থী বাছাই, আসন বিন্যাসের মতো প্রস্তুতিও চলমান। ধর্মভিত্তিক দলগুলোর জোট গড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আনুষ্ঠানিকভাবে এমন কোনো আলোচনা এখনো হয়নি। যদি এমন কোনো প্রস্তাব আসে তবে ভেবে দেখব।’

এ দিকে নিবন্ধন না থাকায় আন্দোলনই একমাত্র ভরসা জামায়াতে ইসলামীর। তবে দলটির নেতারা জানান, জামায়াতে ইসলামী আন্দোলন, নির্বাচন প্রস্তুতি, সংগঠন পুনর্গঠন ও জনসংযোগ করছে সমানতালে। সরকারের পদত্যাগ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন জোরদার করাই তাঁদের প্রধান উদ্দেশ্য। ঢাকা মহানগর জামায়াতের এক নেতা বলেন, ‘আমাদের এখন একটাই লক্ষ্য, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার হলে নিবন্ধনের সমস্যারও সমাধান হবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত