গুজবে কান দেবেন না

সম্পাদকীয়
Thumbnail image

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশে এক ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে শুরু হওয়া কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরুতে শান্তিপূর্ণ ছিল। পুলিশের পক্ষ থেকেও হয়নি কোনো বাড়াবাড়ি। কিন্তু একপর্যায়ে এসে শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনে রাজনীতি ঢুকে পড়ে এবং শুরু হয় সহিংসতা। কোন পক্ষের ভুল বা বাড়াবাড়ির কারণে পরিস্থিতি সংঘাতময় হয়ে ওঠে, তা নিয়ে বিতর্ক না করে; বরং এটা বলাই ভালো যে এই আন্দোলনে দুই-তিন দিনের মধ্যে যে দুই শতাধিক মানুষের অকালমৃত্যু হলো, এর দায় মূলত সরকারের। কারণ সরকারেরই দায়িত্ব মানুষের জানমাল রক্ষা করা।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী যদি পুলিশের গুলিতে কেউ মারা গিয়ে না থাকে তাহলে এত মানুষ কীভাবে মারা গেল? যদি ‘তৃতীয় পক্ষ’ এ কাজ করে থাকে তাহলে তাদের নিরস্ত্র করতে না পারার দায়ও তো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তথা সরকারের ওপরই বর্তায়। কোনো মৃত্যুই কাম্য নয়, স্বজনহারা মানুষের দুঃখ-বেদনা সহজে দূরও করা যায় না। তাই আমরা আশা করব, আর একটি প্রাণহানির ঘটনাও যেন না ঘটে।

অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করা যাচ্ছে যে আন্দোলনকারীদের মূল দাবি আদায় হওয়ার পরও তাঁরা আন্দোলনের কর্মসূচি জারি রেখেছেন।

আন্দোলনকারীদের নৈতিক বিজয় হওয়া সত্ত্বেও বিজয় উদ্‌যাপন না করে সরকারের সঙ্গে যেভাবে দর-কষাকষি শুরু করা হয়েছে, বিশেষ করে এক দফা দিয়ে অসহযোগ আন্দোলনের যে ডাক দেওয়া হয়েছে, তা থেকে কি এটাই স্পষ্ট হয় না যে আন্দোলনের আর অরাজনৈতিক চরিত্র নেই? যেহেতু এটা এখন রাজনৈতিক আন্দোলনে পরিণত হয়েছে, সেহেতু সরকারও নিশ্চয়ই রাজনৈতিকভাবেই এটা মোকাবিলা করবে। কারফিউ জারি করে, সেনাবাহিনীর সহযোগিতা নিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার যে উদ্যোগ নেওয়া, তাতে সুফল পাওয়া গেলেও উদ্বেগের জায়গাগুলো দূর হয়নি।

নানা ধরনের গুজব ছড়িয়ে, মিথ্যা তথ্য দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সয়লাব করে একধরনের বিভ্রান্তি তৈরি একটা ক্ষতিকর প্রবণতা লক্ষণীয়। সেনাবাহিনী নিয়েও কিছু গুজব ছড়ানোর পর সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান সেনা কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেছেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের জনগণের আস্থার প্রতীক। জনগণের স্বার্থে এবং রাষ্ট্রের যেকোনো প্রয়োজনে সেনাবাহিনী সব সময় জনগণের পাশে আছে এবং থাকবে।

সেনাপ্রধান তাঁর বক্তব্যে সব সেনা কর্মকর্তাকে দেশের চলমান নিরাপত্তা পরিস্থিতির ওপর আলোকপাত করে সেনাবাহিনীর কার্যক্রম সম্পর্কে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেন। তিনি সেখানে উপস্থিত সেনা কর্মকর্তাদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরও দেন। পাশাপাশি যেকোনো পরিস্থিতিতে জনগণের জানমাল ও রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বলেন। 

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলমান বিভিন্ন গুজব সম্পর্কে সচেতন থাকার পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি সততা, সত্যনিষ্ঠা ও ন্যায়পরায়ণতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা দেন। আমরাও আশা করব, দেশের এই সংকটময় মুহূর্তে সবাই দায়িত্বশীল আচরণ করবেন। কেউই গুজব ছড়াবেন না, গুজবে কান দেবেন না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত