Ajker Patrika

পশুহাটের জন্য স্কুল ছুটি

আরিফুল ইসলাম রিগান, কুড়িগ্রাম
আপডেট : ০৩ জুন ২০২২, ১৪: ২৪
পশুহাটের জন্য স্কুল ছুটি

বিদ্যালয়ের মাঠে বসানো হচ্ছে পশুহাট। হাটবারের জন্য নির্ধারিত সময়ের আগেই শিক্ষার্থীদের ছুটি দেওয়া হয়। এতে নষ্ট হচ্ছে শিক্ষার পরিবেশ। এ ঘটনা ঘটেছে কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার দুর্গাপুর উচ্চবিদ্যালয়ে। এ ছাড়া ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে পশুহাটের অনুমতি দেওয়াসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।

বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকেরা জানান, সপ্তাহে দুই দিন স্কুল মাঠে পশুর হাট বসানো হয়। এর মধ্যে শুক্রবার স্কুল বন্ধ থাকলেও মঙ্গলবার হাটের কারণে আগেভাগেই স্কুল ছুটি দেওয়া হয়। স্বাভাবিকভাবে স্কুল ছুটি হয় বিকেল ৪টায়। কিন্তু প্রতি মঙ্গলবারে চারটি ক্লাস হওয়ার পর শিক্ষার্থী বসিয়ে রেখে বেলা আড়াইটার দিকে ছুটি দেওয়া হয়। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে বসিয়ে রাখা হয়। অনেক সময় ধাপে ধাপে শিক্ষার্থীদের ছেড়ে দেওয়া হয়, যেন বিষয়টি নিয়ে বাইরের লোকের মধ্যে প্রতিক্রিয়া তৈরি না হয়।

কয়েকজন সহকারী শিক্ষক বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক ইজারাদারের কাছে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে স্কুল মাঠে হাটের কার্যক্রম চালাতে দিচ্ছেন। এতে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ক্ষতির পাশাপাশি বিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। পশুর হাটের কারণে সামনে বর্ষা মৌসুমে মাঠের অবস্থা আরও খারাপ হবে।’

কয়েকজন শিক্ষার্থী বলে, ‘প্রতি মঙ্গলবার হাটের কারণে স্কুল আগেভাগেই ছুটি দেওয়া হয়। এদিন ক্লাসও ঠিকমতো হয় না। আমরা মাঠে পশুর হাট চাই না।’

পশুর হাট বসানোর বিষয়ে জানতে ইজারাদার মাসুদ রানাকে একাধিকবার মোবাইল ফোনে কল দিলে তিনি ধরেননি। হাট ইজারার অংশীদার ও দুর্গাপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আবেদ আলী সরদার বলেন, ‘মাঠে ৪০ শতক সরকারি জায়গা আছে। এ জন্য স্কুল মাঠে হাট চালানো হয়। আপনার লেখার দরকার লেখেন।’

এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক উৎপল কান্তি রায় জানান, তিনি এক রকম কোণঠাসা হয়ে মাঠে হাট চালাতে দিতে বাধ্য হয়েছেন। প্রশাসনের কাছে প্রতিকার চেয়ে লিখিত আবেদন করেও কোনো ফল মিলছে না। ইজারাদারের কাছে টাকা নেওয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন তিনি।

প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘মাঠে পশুর হাট বসানোর বিষয়ে ইউএনও স্যারের সঙ্গে কথা বলেন। হাট চালান তাঁরা।’

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শামসুল আলম বলেন, ‘প্রধান শিক্ষকের সম্মতি ছাড়া কোনো কর্তৃপক্ষই স্কুল মাঠে হাট বসাতে পারেন না। তাঁর বিরুদ্ধে ইজারাদারের কাছে টাকা নিয়ে স্কুল মাঠে পশুর হাট বসানোর অভিযোগ রয়েছে। আমরা ইতিমধ্যে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে অধিদপ্তরকে প্রতিবেদন দিয়েছি। সেটি কেন ঝুলে আছে জানি না।’

এ বিষয়ে উলিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিপুল কুমার বলেন, ‘হাটটি সম্ভবত আগে থেকেই এভাবে চলে আসছে। আমাকে কেউ এ নিয়ে লিখিত অভিযোগ করেনি।’ প্রধান শিক্ষককে কোণঠাসা করার অভিযোগের বিষয়ে ইউএনও বলেন, ‘প্রশাসন কাউকে কোণঠাসা করবে কেন? প্রশাসন সবাইকে সহযোগিতা করার জন্য, সবার উন্নয়নের জন্য।’

জানা গেছে, ২০২০ সালের তদন্তে প্রধান শিক্ষক উৎপল কান্তি রায়ের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগের সত্যতা পায় উপজেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি। পরে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার তদন্তেও অভিযোগের সত্যতা মেলে। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক বরাবর প্রতিবেদন পাঠান বর্তমান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম। ২০২০ সালে পাঠানো ওই প্রতিবেদন দুই বছরেও আলোর মুখ দেখেনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা হলেই মেয়াদ শেষ নতুন পরিচালনা কমিটির

মুসলিম থেকে খ্রিষ্টান হওয়া ইরানি নারী এখন পানামার জঙ্গলে

ঢাবি ছাত্রীকে যৌন হেনস্তাকারীর পক্ষে নামা ‘তৌহিদী জনতার’ আড়ালে এরা কারা

এনসিপিকে চাঁদা দিচ্ছেন ধনীরা, ক্রাউডফান্ডিং করেও অর্থ সংগ্রহ করা হবে: নাহিদ ইসলাম

ভ্যানিটি ব্যাগ ধরে টান, সন্তানসহ ছিটকে পড়তেই তরুণীর গালে ছুরিকাঘাত

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত