খুলবে সম্ভাবনার দ্বার

মো. শফিকুল ইসলাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
প্রকাশ : ০৪ অক্টোবর ২০২২, ১৪: ৪০

ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের সিমনা থেকে বিজয়নগর উপজেলার পত্তন ইউনিয়নের সিমনা পর্যন্ত ‘শেখ হাসিনা সড়ক’-এর নির্মাণকাজ এখন শেষ পর্যায়ে। বর্ষাকালে ভাঙনরোধে সড়কের পাশে বসানো হয়েছে সিসি ব্লক। সড়কের তিনটি সেতুর সব কটিরই নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে।

সেতুর সংযোগ সড়কের কাজ শেষ করে শুরু হবে কার্পেটিংয়ের কাজ। এরপরই খুলে দেওয়া হবে বিজয়নগরবাসীর স্বপ্নের সড়কটি। সাড়ে ৯ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই সড়ক শুধু যে শহরের সঙ্গে দূরত্বই কমাবে তা নয়; ভূমিকা রাখবে স্থানীয় কৃষি, শিক্ষা ও অর্থনীতিতে। সব মিলবে বহু প্রতীক্ষিত এই সড়ক সম্ভাবনার নতুন দ্বার খুলবে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদরের সঙ্গে বিজয়নগর উপজেলার সরাসরি কোনো সংযোগ সড়ক নেই। প্রায় ৩৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে জেলার আখাউড়া অথবা সরাইল হয়ে জেলা সদরে আসতে হয়। এতে সময় লাগে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা পর্যন্ত।

সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয় পত্তন, সিঙ্গারবিল, চম্পকনগর, বিষ্ণুপুর ও পাহাড়পুর ইউনিয়নের বাসিন্দাদের। বর্ষাকালে হাওর পাড়ি দিয়ে জেলা শহরে আসতে তাদের একমাত্র ভরসা নৌকা, আর শুষ্ক মৌসুমে পায়ে হাঁটা ছাড়া বিকল্প নেই। তাই কয়েক দশক ধরেই বিজয়নগরবাসী দাবি জানিয়ে আসছিল হাওরের বুকে সড়ক নির্মাণের। কিন্তু হাওরে সড়ক নির্মাণ অনেকটা চ্যালেঞ্জ ছিল। বছরের অর্ধেক সময় পানিতে টইটম্বুর থাকে বিস্তীর্ণ হাওর এলাকা।

তবে সব বাধা ডিঙিয়ে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের শিরাইলকান্দি থেকে বিজয়নগরের পত্তন ইউনিয়নের সিমনা পর্যন্ত সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু হয়। ভূমি অধিগ্রহণসহ নানা জটিলতার কারণে নির্মাণকাজ বিলম্বিত হলেও এখন কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। সড়কটি নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ১৩৫ কোটি টাকা। ইতিমধ্যে সড়কটির নামকরণ করা হয়েছে শেখ হাসিনা সড়ক।

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, প্রতিবছর বিজয়নগর উপজেলায় প্রায় ৫০ কোটি টাকা মূল্যের আম, লিচু, মাল্টা, কাঁঠালসহ বিভিন্ন মৌসুমি ফল উৎপাদিত হয়। কিন্তু যাতায়াতব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় কৃষকেরা যথাসময়ে এসব ফল জেলা শহরে নিয়ে যেতে পারতেন না। এতে করে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতেন তাঁরা। এখন শেখ হাসিনা সড়ক ব্যবহার করে দ্রুত সময়ের মধ্যে উৎপাদিত ফল শহরে নিয়ে যেতে পারবেন কৃষকেরা।

মনিপুর গ্রামের লোকমান হোসেন জানান, ছেলেরা শহরে গিয়ে পড়তে পারলেও দূরের পথ হওয়ায় নিরাপত্তার কারণে শহরে পড়তে দেওয়া হতো না মেয়েদের। এখন সড়ক চালু হলে মেয়েরাও শহরে গিয়ে ভালো কলেজে পড়তে পারবে।

চম্পকনগর বাজারের ব্যবসায়ী আলী হোসেন জানান, জেলা শহর থেকে মালামাল আনার জন্য আখাউড়া অথবা সরাইল উপজেলা ঘুরে 
যেতে হয়। এতে করে পরিবহন খরচ বেড়ে যায়। আর এর প্রভাব পড়ে পণ্যের মূল্যে। এ ছাড়া নৌপথে মালামাল আনাটা ঝুঁকিপূর্ণ। সড়কটি চালু হলে সহজে এবং কম খরচে পণ্য আনা যাবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী শিরাজুল ইসলাম বলেন, হাওরের বুকে শেখ হাসিনা সড়ক সব ক্ষেত্রেই বিপ্লব ঘটাবে। মূলত সড়কের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ নিয়ে কিছু জটিলতা ছিল। এ জন্য নির্মাণকাজ কিছুটা বিলম্বিত হয়েছে। তবে নির্মাণকাজ এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে। কার্পেটিং কাজও দ্রুত সময়ের মধ্যে শুরু হবে। এরপরই জনসাধারণের চলাচলের জন্য সড়কটি খুলে দেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত