মাতালেন সেই গানওয়ালা

নওশাদ জামিল, ঢাকা
Thumbnail image

মৎস্য ভবন থেকে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের দিকে যেতে যেতে রাস্তার বাঁ দিকে চোখে পড়ে তাক লাগানো দৃশ্য! হাজারো মানুষের দীর্ঘ সারি। সুশৃঙ্খলভাবে দাঁড়িয়ে মানুষ। কোথাও তাড়াহুড়ো নেই, বিশৃঙ্খলা নেই। মৎস্য ভবন, হাইকোর্ট হয়ে মানুষের সারি থেমেছে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের গেটে। সারিতে দাঁড়িয়ে সংস্কৃতিজন আসাদুজ্জামান নূর। চোখেমুখে হাসি ছড়িয়ে তাঁর ছোট উত্তর, ‘বাংলা গানের নতুন বাঁকের স্রষ্টা কবীর সুমন। এ জন্যই তাঁর গান শুনতে ছুটে এসেছি।’ শুধু আসাদুজ্জামান নূর নন, গতকাল শনিবার যেন সুমনভক্তদের মিলনমেলা হয়ে উঠেছিল রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তন ও প্রাঙ্গণ। অসংখ্য ভক্ত-শ্রোতাকে নিরাশ করেননি, বরং গানে ও কথায় মাতালেন ‘গানওলা’ কবীর সুমন।

ঠিক সোয়া ৫টায় ধীর পায়ে হেঁটে মঞ্চে উঠলেন বাংলা গানের অন্যতম জনপ্রিয় ফেরিওলা ৭৩ বছরের সুমন। মিলনায়তনপূর্ণ দর্শক–শ্রোতারা দাঁড়িয়ে তাঁকে অভিবাদন জানালেন, তুমুল করতালি দিয়ে জানালেন শুভেচ্ছা-ভালোবাসা। তাঁদের সঙ্গে সংযোগ ঘটিয়ে সুমন বললেন বাংলাদেশ নিয়ে তাঁর স্মৃতির কথা। কথা শেষে শুরু হলো গান, শুরু হলো তাঁর সুরের জাদু। প্রথমেই গাইলেন— ‘একেকটা দিন মসৃণ/ভোর থেকে শুরু করে রাতের শয্যায়...।’

এই সেই সুমন, যিনি একাই ছিলেন দশজন—লিখতেন, গাইতেন, বাজাতেন। কণ্ঠে ঝড় তুলতেন, গিটারে ঝংকার ওঠাতেন। গতকাল গিটার বাজাতে পারেননি। তবে কণ্ঠে ঝড় ঠিকই উঠল, দর্শক–শ্রোতাদের আন্দোলিতও করল। ‘বুড়ো বয়সের’ কণ্ঠেও উঠল নব্বইয়ের দশকের আলোড়ন।

এরপর গাইলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘পুরানো সেই দিনের কথা ভুলবি কি রে হায়।/ও সেই চোখে দেখা, প্রাণের কথা, সে কি ভোলা যায়।’ গানটি যখন তিনি গাইছিলেন, মাঝেমধ্যে কণ্ঠ মেলাচ্ছিলেন শ্রোতারা, তখন কি সুমনের ছোটবেলার কথা মনে পড়ছিল? ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন অবস্থিত রমনায়। একই এলাকায় বেশ কিছুদিন ছিলেন তাঁর বাবা-মা। তখন তাঁর বাবা চাকরি করতেন ঢাকা বেতারে। অবশ্য তখনও পৃথিবীর আলো দেখেননি সুমন, দেশভাগও হয়নি। সবুজ ও সুন্দর রমনার কথা ছোটবেলায় তিনি মা-বাবার মুখে শুনেছেন অনেকবার। গানের ফাঁকে ফাঁকে তিনি নিজের কথা বললেন, উৎফুল্লভাবে বললেন বাংলাদেশ নিয়ে তাঁর একান্ত অনুভবের কথা।

কবি শহীদ কাদরীর বিখ্যাত কবিতাকে গানে রূপান্তর করেছেন সুমন। নিজের মুখে তিনি বললেন গল্পটা। ৭০-এর দশকে দুজনের পরিচয়, একজন কবি আরেকজন গায়ক, শহীদ কাদরী ও কবীর সুমন। জার্মানির কোলন শহরে তাঁদের সাক্ষাৎ। তার পর থেকে তাঁরা বন্ধু। সেই বন্ধুত্ব অটুট থেকেছে আমৃত্যু, এমনকি সুমন গানও বেঁধেছেন শহীদ কাদরীর একাধিক কবিতা নিয়ে। ‘তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা’ কবিতাটিতে সুর দিয়েছিলেন সুমন, অনুষ্ঠানে গেয়ে শোনালেন সেটি। দরাজ কণ্ঠে গাইলেন জননী সাহসিকা সুফিয়া কামালকে নিয়ে তাঁর লেখা গান—’ঐ তো লক্ষ ছেলেমেয়ে নাতিনাতনি দামাল/সবুজ দ্বীপের মত মাঝখানে সুফিয়া কামাল।’ সুফিয়া কামালের ওপর গানটি লিখে তিনি প্রথম গেয়েছিলেন বাংলাদেশেই ১৯৯৮ সালে তাঁর দ্বিতীয় সংগীত সফরে, মিরপুর স্টেডিয়ামে। গতকাল আবার গেয়ে শোনালেন। তারপর টানা দুই ঘণ্টা গাইলেন, শোনালেন তাঁর জনপ্রিয় গানগুলো।

কবীর সুমনের ‘তোমাকে চাই’ অ্যালবামের ত্রিশ বছর উদযাপনের অংশ হিসেবে তিন দিনব্যাপী সংগীতানুষ্ঠানের প্রথম আসর ছিল এটি। ‘সুমনের গান’ শীর্ষক অনুষ্ঠানটির আয়োজক পিপহোল।  ১৮ অক্টোবর একই মিলনায়তনে বাংলা খেয়াল গেয়ে শোনাবেন তিনি। সবশেষ আসরটি হবে ২১ অক্টোবর এখানেই, সেদিন গাইবেন আধুনিক বাংলা গান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত