বেঙ্গলে হস্তশিল্প মেলা

নাজমুল হক নাঈম, ঢাকা
প্রকাশ : ১৩ ডিসেম্বর ২০২২, ০১: ৫৬
আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর ২০২২, ০১: ৫৮

ধানমন্ডির পুরোনো ২৭ নম্বর সড়ক। এর মাঝামাঝি বেঙ্গল শিল্পালয়ের সাজানো কম্পাউন্ড খানিকটা অন্য রকম আজ। মধ্য ডিসেম্বরের হালকা শীত এখানে যেন উপভোগের বিষয় হয়ে দেখা দিয়েছে।

গতকাল সোমবার শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী ‘ফেয়ার ট্রেড হ্যান্ডিক্রাফট এক্সিবিশন–২০২২ ’। একতার (ন্যাশনাল নেটওয়ার্ক অব ফেয়ার ট্রেড ফোরাম) উদ্যোগে এবং নরওয়ের সংস্থা নরেক-এর পৃষ্ঠপোষকতায় বেলা ১১টা থেকে এই হস্তশিল্পের প্রদর্শনী শুরু হয়। চলবে ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রদর্শনীটির সহযোগিতায় বেঙ্গল ফাউন্ডেশন।

প্রদর্শনীটিতে দেশের ১৮টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। এর আয়োজকেরা জানান, এই হস্তশিল্প মেলার উদ্দেশ্য ন্যায্য বাণিজ্যের প্রচার, প্রসার ও বিস্তার এবং দেশীয় ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্পের উন্নয়ন।

মেলার আয়োজন বিষয়ে নরেক-এর উপদেষ্টা টর ল্যান্ড বলেন, ‘আমরা সব সময় উন্নয়নশীল দেশগুলোর মানুষের পাশে দাঁড়াতে চাই। আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে আন্তর্জাতিক বাজারে উদ্যোক্তাদের সংযোগ ঘটানো। সবাই যেন তাঁদের শিকড় ধরে রাখতে পারে।’

বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী বলেন, ‘নগরায়ণে আমরা শিকড় থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। এটি অশনিসংকেত। দেশ উন্নয়নের দিকে এগোচ্ছে তা সত্যি, কিন্তু এর পাশাপাশি আমাদের শিকড়ের দিকেও মনোযোগ দিতে হবে। দিন শেষে এটাই আমাদের অস্তিত্ব। এখানে রাষ্ট্রের পাশাপাশি ব্যক্তিগত উদ্যোগও জরুরি।’

হস্তশিল্প প্রদর্শনীটির সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেছেন শিল্পী ও গবেষক শাওন আকন্দ। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে দেশের মানুষের পৃষ্ঠপোষকতায় কাজ করা। একতা এমন একটি প্ল্যাটফর্ম, যারা ব্যবসা করে না, উদ্যোক্তাদের জন্য ন্যায্য বাজার প্রতিষ্ঠার লড়াই করে।’

শিল্পপ্রতিষ্ঠানের পাশে দাঁড়ানোর মতো বহু প্রতিষ্ঠান এ দেশে আছে। কিন্তু আমাদের শিকড়কে বহির্বিশ্বে পরিচিত করার উদ্যোগ খুব একটা নেই। এ জায়গায় পৃষ্ঠপোষকতা দরকার। একতা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান স্বপন কুমার দাস সে আশার কথাই শোনালেন। বললেন, ‘একতা সব সময় উদ্যোক্তাদের পাশে আছে। ন্যায্য মূল্য প্রতিষ্ঠা ও উদ্যোক্তাদের প্রসার আমাদের মূল লক্ষ্য। প্রান্তিক উদ্যোক্তাদের সবারই সংগ্রামের গল্প আছে, তাঁদের লড়াইয়ে একতা পাশে আছে। তাঁদের সঙ্গে ভোক্তাদের দূরত্ব কমানোই প্রধান উদ্দেশ্য। আমাদের মনে রাখতে হবে, প্রতিবছর এই খাত থেকে রপ্তানি আয় প্রায় এক বিলিয়ন ডলার। দিন দিন তা বাড়ছে।’

হস্তশিল্প মেলায় ঘুরতে ঘুরতে কথা হয় মেলায় অংশ নেওয়া কয়েকজন উদ্যোক্তার সঙ্গে। এ পর্যন্ত আসতে তাঁদের অনেক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। মেহেরপুরের মুজিবনগরের বামুনপাড়া থেকে মেলায় এসেছিলেন তৃপ্তি বুটিক হাউসের নির্বাহী পরিচালক তৃপ্তি বিশ্বাস। তিনি জানান, তাঁর কারখানায় প্রায় ৫০০ নারী শ্রমিক কাজ করেন।

জানা গেল, ১৯৯৮ সাল থেকে নারী ও শিশুদের উন্নয়নে তাঁরা কাজ করছেন। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে তাদের নকশিকাঁথা এখন রপ্তানিও হচ্ছে।

এ মেলায় অংশ নিয়েছে ময়মনসিংহের বুটিক প্রতিষ্ঠান ভাষা এন্টারপ্রাইজ। প্রতিষ্ঠানটি পতিতালয়ের নারীদের মানসিক কাউন্সেলিংয়ের পাশাপাশি তাঁদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার কাজ করছে দীর্ঘদিন ধরে। ভাষা এন্টারপ্রাইজের পণ্য উন্নয়ন প্রতিনিধি মম বিশ্বাস জানান, তাঁদের পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। এর প্রধান কারণ তাঁদের পণ্যের গুণগত মান।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত