Ajker Patrika

রাজশাহী নগরজুড়ে ছাতিমের সুবাস

রিমন রহমান, রাজশাহী
আপডেট : ২৭ অক্টোবর ২০২৩, ১০: ৫৬
রাজশাহী নগরজুড়ে ছাতিমের সুবাস

ফুলের ‘গন্ধে মহাবিরক্ত’ হয়ে একবার সিটি করপোরেশনে নালিশ জানাতে যান লেখক সমরেশ মজুমদার। তিনি অভিযোগ করেন, ঘরের পাশে থাকা সরকারি গাছটিতে ফুল ফুটলেই ‘তীব্র গন্ধে’ তাঁর নাক জ্বলে। গাছটি খুব কাছাকাছি থাকায় এ সমস্যায় পড়ার কথা জানিয়েছিলেন লেখক। তবে একটু দূর থেকে এই ফুলের ঘ্রাণ বেশ উপভোগ্য বলে জানিয়েছেন অনেকেই।

প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে সেই গাছটি ছাতিম নামেই বেশি পরিচিত। তবে কোথাও ছাতিয়াম কিংবা ছাইতন নামেও ডাকা হয়। শহরে সাধারণত এই গাছ সচরাচর দেখা যায় না। তবে ব্যতিক্রম রাজশাহী নগরী। এ শহরের অনেক পথেই ছাতার মতো দাঁড়িয়ে আছে ছাতিম। আর প্রকৃতির এই মৌসুমে ফুটেছে ছাতিম ফুল, যার পাগল করা ম ম ‘গন্ধে’ (ঘ্রাণে) এখন সুবাসিত রাজশাহী নগরী।

২০১৯ সালে শহরে বিভিন্ন পথের ধারে ফুটপাতে ছাতিমগাছ লাগাতে শুরু করে রাজশাহী সিটি করপোরেশন। রেলগেট-সিটি বাইপাস সড়ক, বিলশিমলা-সিঅ্যান্ডবি মোড় সড়ক, উপশহর, সপুরাসহ বিভিন্ন সড়কে প্রায় ৫০০টি ছাতিমগাছ লাগানো হয়েছে। এর মধ্যে শুধু রেলগেট থেকে সিঅ্যান্ডবি পর্যন্ত রাস্তার দুপাশে ফুটপাতে আছে ৩০০টি ছাতিম।

গ্রীষ্মের কড়া রোদের দিনে ছাতার মতোই মানুষকে ছায়া বিলিয়েছে গাছগুলো। এই হেমন্তে গাছগুলোর শাখা-প্রশাখায় ভর্তি পাতার ফাঁকে উঁকি দিয়েছে থোকায় থোকায় সবুজাভ ছাতিম ফুল। সেখান থেকে বাতাসে ভেসে আসছে ফুলের মাদকতা। প্রতিটি ছাতিমগাছ যেন শিশি উপুড় করে সন্ধ্যার বাতাসে ঢেলে দিচ্ছে মিষ্টি ঘ্রাণ। রাত যত বাড়ে এই ফুলের ঘ্রাণ তত তীব্র আর মাদকতাময় হয়ে ওঠে। নগরবাসী দূর থেকেই বাতাসে পান ছাতিমের ঘ্রাণ। বিমোহিত পথিক বুঝে নেন, আশপাশেই রয়েছে এর উৎস।

শুধু ফুলের সুবাসের কারণেই ছাতিম সবার প্রিয়, এমনটি নয়। এটির ভেষজ ও ঔষধি গুণও রয়েছে। ছাতিমের কষ অনেকে ওষুধ হিসেবে ক্ষতস্থানে লাগিয়ে থাকেন। গ্রামাঞ্চলে এখনো জ্বর, কুষ্ঠ, চর্মরোগ, যকৃতের ব্যথা, কাশি, দাঁত ক্ষয়ে যাওয়া, হাঁপানি, বাতের ব্যথাসহ নানা শারীরিক সমস্যার চিকিৎসায় ছাতিমগাছের বাঁকল, পাতা ও কষ ব্যবহার করা হয়। ছাতিমের কাঠ দিয়ে আসবাবপত্র হয়। পেনসিল ও দেশলাইয়ের কাঠিও হয় এ গাছ থেকে। এর কাঠ দিয়ে কফিনও বানানো হয়।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছাতিমগাছ অত্যন্ত পছন্দ করতেন। তাই শান্তি নিকেতনের সমাবর্তনে ছাতিমের পাতা উপহার দেওয়া হতো। রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, ‘ওই যে ছাতিমগাছের মতোই আছি/সহজ প্রাণের আবেগ নিয়ে মাটির কাছাকাছি।’

শান্তি নিকেতনের শিক্ষার্থী এবং সংগীতশিল্পী সাহানা বাজপেয়ি একটি গানের কথায় লেখেন, ‘তোমার দিকে হেঁটে যাওয়ার রাস্তা জোড়া ছাতিম ফুল।’ তাঁর সেই রাস্তার মতোই এখন রাজশাহীর রেলগেট-সিটি বাইপাস কিংবা বিলশিমলা-সিঅ্যান্ডবি মোড়ের সড়ক!

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত