গণসমাবেশ ভন্ডুল করতে আওয়ামী রাজনৈতিক অপশক্তি প্রকল্প হাতে নিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। কয়েক দিন ধরে বিভাগের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা ও নগরে আওয়ামী লীগের লোকেরা বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর নগ্নভাবে হামলা চালিয়েছেন।

এই রাজনৈতিক অপশক্তি ইতিমধ্যে বরিশাল জেলা বাস মালিক গ্রুপের নামে ৪ ও ৫ নভেম্বর পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। গতকাল বুধবার দুপুরে বরিশাল প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান। গতকাল পিরোজপুর জেলা বিএনপিও প্রচারে বাধা দেওয়ার অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করে।

এ দিকে গণসমাবেশ সফলে গতকালও দিনভর প্রচার চালিয়েছেন বিএনপির নেতারা। বরিশালে সংবাদ সম্মেলনে আরও দাবি করা হয়, শুধু গণসমাবেশ যোগদানে ইচ্ছুক বিএনপির নেতা-কর্মীরাই হামলার শিকার হচ্ছেন না, চিকিৎসা, শিক্ষাসহ সব সেক্টরের মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে, বরিশালের উজিরপুর, বাকেরগঞ্জ ও বানারীপাড়া উপজেলা বিএনপির প্রস্তুতি সভায় সরকারি দলের সন্ত্রাসীরা এবং পুলিশ হামলা চালিয়েছে। এতে বহু নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। পটুয়াখালী শহরে বিএনপির প্রচার মিছিলে আক্রমণ করা হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে বরগুনার যুবদল নেতা মিরাজুর রহমান সৈয়দকে। বরিশাল বিভাগের সর্বত্র বিএনপির নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি প্রশাসন ও পুলিশ তল্লাশি চালাচ্ছে।

বিএনপির নেত্রী সেলিমা রহমান দাবি করেন, ময়মনসিংহ, খুলনা, রংপুরের বিভাগীয় গণসমাবেশ যেভাবে জনস্রোত থামাতে পারেনি, বরিশালের গণসমাবেশে জনস্রোত থামাতে পারবে না। তিনি জনগণের উদ্দেশে আহ্বান জানান, এই সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করে নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ সরকার সৃষ্টিতে সহযোগিতা করার।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন গণসমাবেশের প্রধান সমন্বয়কারী ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদিন, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলিকস আক্তার জাহান শিরিন প্রমুখ। 
এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আনোয়ার হোসাইন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সমাবেশ ভন্ডুল করার জন্য আমাদের কোনো বাধা, হামলার পরিকল্পনা নেই। করছিও না। তাঁরা অতি সহজে নগরে মিছিল, সমাবেশ করছে।’ তিনি জানতে চান, ‘কোথায় বাধা দিয়েছে আওয়ামী লীগ, তা দেখান। আপনাদের দলটাই (বিএনপি) তো জন্মই নিয়েছে মিথ্যা দিয়ে।’

এদিকে গতকাল দুপুর ১২টায় নগরের নাজিরার পুল থেকে লিফলেট বিতরণ করে বিএনপি। এ জেড এম জাহিদ হোসেনের নেতৃত্বে এ সময় দলের যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ার উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া একই দিন যুবদল নগরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে। এদিকে বুধবার সন্ধ্যায় ছাত্রলীগের আহ্বায়ক রইছ আহমেদ মান্নার নেতৃত্বে নগরের বিভিন্ন সড়কে মোটরসাইকেল মহড়া দেয়। এ সময় নানা ধরনের স্লোগান দেয় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।

বরিশালে বিএনপির গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে পিরোজপুরে বিএনপির নেতা-কর্মীদের হুমকি-ধমকি দেওয়া ও প্রচারে বাধা দেওয়ার প্রতিবাদে এবং প্রশাসনের নিরপেক্ষ দায়িত্ব পালনের দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে পিরোজপুর জেলা বিএনপি। গতকাল বুধবার বেলা ১১টার দিকে জেলা বিএনপির কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যক্ষ আলমগীর হোসেন ও সদস্যসচিব গাজী ওয়াহিদুজ্জামান লাভলু। উপস্থিত ছিলেন যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ রিয়াজ উদ্দিন রানা, সদস্য আবুল কালাম আকন, শেখ শহিদুল্লাহ শহিদ, জেলা মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক রহিমা হাসি প্রমুখ। 
সংবাদ সম্মেলনে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যক্ষ আলমগীর হোসেন বলেন, গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে পিরোজপুরে সব উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে লিফলেট বিতরণ ও প্রচার চালানোর সময় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ বাধা দিচ্ছে। এ ছাড়া ইউনিয়ন পর্যায়ের বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে।

জেলা বিএনপির সদস্যসচিব গাজী ওয়াহিদুজ্জামান লাভলু বলেন, ‘বিভিন্ন জায়গায় আমাদের নেতা-কর্মীদের ওপরে একাধিক হামলার ঘটনা ঘটেছে। তবে সব বাধা উপেক্ষা করে ৫ নভেম্বর গণসমাবেশ সফল করতে আমরা বরিশালে যাব।’