Ajker Patrika

কৃষি কল সেন্টার: সেবা দূরে থাক, সাড়া মেলে না ফোনেই

সাইফুল মাসুম, ঢাকা
আপডেট : ২৪ আগস্ট ২০২৩, ১১: ৫১
কৃষি কল সেন্টার: সেবা দূরে থাক, সাড়া মেলে না ফোনেই

কৃষি কল সেন্টারে ফোন করে সাড়া পেয়েছেন মাত্র ২০ শতাংশ কৃষক। বাকি ৮০ শতাংশ সেবাপ্রার্থী ফোন করেও সাড়া পাননি। এর মধ্যে ৬১ শতাংশ কল বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার আগেই। কৃষি কল সেন্টারে পৌনে ৬ বছরের ফোনকলের তথ্য বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, কৃষি কল সেন্টারে ফোন করে সাড়াই পাননি ৮০ শতাংশ কৃষক। আর যেসব ফোনে সাড়া দেওয়া হয়েছে, সেগুলোতেও কাঙ্ক্ষিত তথ্যসেবা দেওয়া সম্ভব হয়নি। এটা নামেই কল সেন্টার।

কল সেন্টার অফিসার মাহাজুবা তাসমিন বলেন, ‘ফসলের মাঠের বিভিন্ন সমস্যা, সরকারি কৃষি উপকরণ পাওয়ার নিয়ম জানতে অনেক কৃষক কল করেন। আবার অনেক কৃষক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের তথ্যও জানতে চান, সেগুলো আমাদের পক্ষে দেওয়া সম্ভব হয় না।’ 

কৃষি তথ্য সার্ভিসের (এআইএস) পরিচালক ড. সুরজিত সাহা রায় আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কল সেন্টারটি পরিচালনায় বাজেট ও জনবলের ঘাটতি আছে। কল সেন্টারে যেসব কর্মী কাজ করেন, তাঁদের কোনো প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই। সপ্তাহে ৭ দিন, দিনে ২৪ ঘণ্টা কৃষকদের তথ্যসেবা দিতে চাই। এ জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব জমা দিয়েছি।’ 

জানা যায়, কৃষকদের কৃষিবিষয়ক প্রয়োজনীয় তথ্যসেবা দিতে ২০১২ সালের জুনে চালু করা হয় কৃষি কল সেন্টার। রাজধানীর খামারবাড়িতে কৃষি তথ্য সার্ভিসের সদর দপ্তর থেকে সেন্টারটি পরিচালিত হচ্ছে। সাধারণ নম্বর দিয়ে চালু হলেও ২০১৪ সাল থেকে ‘১৬১২৩’ নম্বরটি কল সেন্টারের নম্বর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। সরকারি ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টার মধ্যে নম্বরটি থেকে কৃষকদের তথ্যসেবা দেওয়া হয়। যেকোনো অপারেটরের মোবাইল ফোন থেকে কল সেন্টারে কল করলে ভ্যাট ও শুল্ক ছাড়া কলদাতার খরচ হয় প্রতি মিনিটে ২৫ পয়সা।

২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত কল সেন্টারটি পরিচালিত হয় ‘প্র্যাকটিক্যাল অ্যাকশন’ নামের একটি এনজিওর সহযোগিতায়। ২০২২ সাল থেকে এআইএস শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের অধীনে ৬ জন কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয় আউটসোর্সিংয়ে। তাঁরা গত ৩০ জুন পর্যন্ত কাজ করেন। বর্তমানে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ৭ জন কর্মী যুক্ত আছেন।

কৃষি তথ্য সার্ভিসের তথ্যমতে, ২০১৭ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৩ সালের ৩১ জুলাই পর্যন্ত ৫ বছর ১০ মাস ১৭ দিনে কৃষি কল সেন্টারে কল এসেছে ১০ লাখ ৯৯ হাজার ৩৯৮টি। এগুলোর মধ্যে মাত্র ২ লাখ ২২ হাজার ১৬৩টি কলের জবাব দিয়েছেন কর্মীরা। ১ লাখ ৯৫ হাজার ২৪৮টি কল ধরাই হয়নি। এ ছাড়া নির্ধারিত সময় (৩০ সেকেন্ড) শেষ হওয়ার আগেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে ৬ লাখ ৮১ হাজার ৫৭২টি কলের।

কৃষি তথ্য সার্ভিসের একাধিক কর্মকর্তা জানান, কল সেন্টারটি এখনো প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়নি। শুরু থেকে অনেকটা জোড়াতালি দিয়ে চলছে। আর যেসব কল ধরা হয়, সেগুলোতেও যথাযথ তথ্যসেবা পান না কৃষকেরা। 

কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, সারা দেশে কার্ডধারী কৃষক আছেন ২ কোটি ৫ লাখ ৯৯ হাজার ৮৬৯ জন। তবে দেশের অনেক কৃষক এখনো এই কল সেন্টারের খোঁজই জানেন না। 

এ বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রবীন্দ্রশ্রী বড়ুয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দেশে কৃষি কল সেন্টারের অনেক প্রাসঙ্গিকতা রয়েছে। আরও বেশিসংখ্যক কৃষককে কীভাবে তথ্যসেবা দেওয়া যায়, সে জন্য আমরা কাজ করছি। কল সেন্টারে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) ব্যবহারের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।’

সাবেক কৃষিসচিব আনোয়ার ফারুক মনে করেন, কৃষককে জরুরি মুহূর্তে তথ্যসেবা দিতে না পারলে কল সেন্টার রেখে লাভ নেই। তিনি বলেন, ‘জরুরি মুহূর্তে কল করে যেন কৃষক সহযোগিতা পান, সেটি মাথায় রাখতে হবে। মাত্র ২০ শতাংশ কল রিসিভ হয়েছে, কিন্তু তথ্যসেবা দিতে পেরেছে কয়টা কলে? কল সেন্টার যাতে কার্যকর হয়, তার ব্যবস্থা করতে হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গণপিটুনিতে নিহত জামায়াত কর্মী নেজাম ও তাঁর বাহিনী গুলি ছোড়ে, মিলেছে বিদেশি পিস্তল: পুলিশ

রাজধানীতে ছিনতাইকারী সন্দেহে ইরানের দুই নাগরিককে মারধর

বিএনপির দুই পেশাজীবী সংগঠনের কমিটি বিলুপ্ত

ফরিদপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ: ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা, নিষিদ্ধের দাবি শিক্ষার্থীদের

ভারত-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে পন্টিংয়ের আরেকটি রেকর্ড ভাঙলেন কোহলি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত