মো. জাহিদুল ইসলাম জাহিদ, সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা)
কার্তিকের সোনালি রোদ ঠিকরে পড়ছে।দিগন্তে চোখ পাতলেই দেখা যায় ধানের খেত সোমত্ত হয়ে উঠছে। সবুজ থেকে ধীরে ধীরে হলুদ হচ্ছে ধানগাছের শরীর। ঋতুচক্রে এখন হেমন্ত কাল। কিন্তু উত্তরের হেমন্ত মূলত শীতেরই আগমনী বার্তা দেয়। সকালে এখন শীতের আবেশ। সেই আবেশ ছড়িয়ে পড়েছে ফলগাছা গ্রামসহ পুরো উত্তরে। প্রস্তুতি শুরু হয়েছে শীতের। ফলগাছা গ্রামের সেনপাড়ায় বানানো হচ্ছে ডালের বড়ি। বাড়িতে বাড়িতে বড়ি শুকানো দেখে মনে হবে কেউ যেন ডেকে বলছে, ‘ডালের বড়ি শুকিয়ে রেখেছি…।’
তথ্য হলো, শুধু রসনা তৃপ্তির জন্যই নয়। সেনপাড়ার অধিকাংশ পরিবারই বড়ি বানিয়ে সংসার চালান। এই বড়ি বানানোর কাজ শুরু হয় রাত ৩টার দিকে। সেই কর্মযজ্ঞ দেখতে ভোরবেলা রওনা হই মোটরসাইকেলে। পৌর শহর থেকে মীরগঞ্জ বাজার হয়ে পাকা সড়ক ধরে বামনডাঙা ইউনিয়নের ফলগাছা বাজার। ততক্ষণে আট কিলোমিটার পথ অতিক্রম করেছি। এরপর আঁকাবাঁকা কাঁচা সড়ক ধরে দক্ষিণে ছুটে চলি। প্রায় তিন কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে না করতেই আটকে গেল দুই চোখ। বাড়ির উঠানে বা সড়কের ধারে বসে লোকজন পরিষ্কার করছেন টিন। পুরোনোসেই টিনের ওপর কেউবা দিচ্ছেন নারকেল তেলের প্রলেপ। কেউ ফেটিয়ে যাচ্ছেন মিহি করে বেটে নেওয়া মাষকলাই। আবার কেউ তৈরি করছেন ডালের বড়ি। বাড়ির নারী-পুরুষ-বৃদ্ধ-বৃদ্ধা কিংবা শিশু—সবাই কোনো না কোনোভাবে বড়ি বানানোর কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকছেন। এটাই যে সেই সেনপাড়া, তা আর বুঝতে বাকি রইল না।
সেনপাড়ায় প্রায় ৮০টি পরিবারের বাস। শুরুর দিকে তিনজনের মাধ্যমে বড়ি বানানোর কাজ শুরু হয় এখানে। বাড়ির সবাই মিলে কাজটি করা যায় বলে এখন পাড়াজুড়ে প্রায় সবাই এ পেশায় লেগেছেন। এতে পরিবারে ফিরে এসেছে আর্থিক সচ্ছলতাও।
এই সাতসকালে বড়ি বানানোর কাজে ব্যস্ত ছিলেন প্রায় ৭৫ বছর বয়সী বীরেন চন্দ্র সেন। কাজের ফাঁকে ফাঁকে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। বীরেন বলে যান সেনপাড়া আর তাঁর ডালের বড়ির গল্প। দেশভাগের বেশ কিছু কাল আগে হরিনাথ, পান্না ও লক্ষ্মীকান্ত সেন নামের তিনজন লোক কুড়িগ্রামের উলিপুর থেকে এ পাড়ায় আসেন। মূলত নদীভাঙনের কারণে তাঁরা এখানে এসেছিলেন। তাঁদের পেশা ছিল ডালের বড়ি বানানো। নতুন জায়গায় এসে জীবনযুদ্ধের তাগিদে তাঁরা পুরোনো কাজ শুরু করেন। তাঁদের দেখে পরে এ পাড়ার অনেকেই ডালের বড়ি বানানোর সঙ্গে জড়িয়ে যান।
বড়ি বানানোর উপকরণ
বড়ি বানানোর মূল উপকরণ মাষকলাই। স্থানীয়ভাবে যা ঠাকুর বা ঠাকুরি কালাই নামে পরিচিত। এর সঙ্গে মেশাতে হয় পরিমাণমতো ময়দা। ভাদ্র থেকে মাঘ মাস পর্যন্ত ডালের বড়ি বানানোর সময়। এক কেজি মাষকলাই দিয়ে এক কেজির কিছু কম বড়ি পাওয়া যায়। প্রতি কেজি ছাঁটা কলাইয়ের দাম ১৬২ টাকা।
প্রক্রিয়া
মিহি করে ব্লেন্ড করে নেওয়া মাষকলাই ফেটানোর কাজে ব্যস্ত ছিলেন বীনা রানী (৪০)। কথায় কথায় তিনি জানান, কলাই ভিজিয়ে রাখতে হয় ঘণ্টাখানেক। তারপর ধুয়ে নিতে হয়। এরপর পরিমাণমতো পানি দিয়ে সে কলাই ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে অথবা পাটায় বেটে নিতে হয়। এরপর শুরু হয় ফেটানোর কাজ। এ কাজে বেশ সময় লাগে এবং পরিশ্রমও হয় খুব। এরপর বড়ি বানানোর কাজ। তেল মাখানো টিনের ওপর ব্লেন্ড করে নেওয়া কলাই সারিবদ্ধভাবে গুটি গুটি করে দেওয়া হয়। রোদ প্রখর থাকলে এক দিনে শুকিয়ে যায়।
দরদাম
ভালোভাবে শুকানোর পর বড়িগুলো বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রি করা হয়। প্রতি কেজি বড়ির দাম ৩৫০ টাকা। স্থানীয় হাটবাজার ছাড়াও এ বড়ি রংপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া, লালমনিরহাটসহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় পাইকারি বিক্রি হয়।
যেভাবে বড়ি খাবেন
বিভিন্নভাবে ডালের বড়ি খাওয়া যায়। ভেজে ভর্তা করে, আবার শুধু তেলে ভেজেও খাওয়া যায়। খাওয়া যায় বিভিন্ন মাছের ঝোলে। ঘিয়ে ভেজেও খাওয়া যায় এটি। এ ছাড়া বিভিন্ন তরকারিতে দিয়েও খাওয়া যায়। তবে শীতের দিনে সবচেয়ে মজাদার খাবার হচ্ছে বেগুন বড়ি।
কার্তিকের সোনালি রোদ ঠিকরে পড়ছে।দিগন্তে চোখ পাতলেই দেখা যায় ধানের খেত সোমত্ত হয়ে উঠছে। সবুজ থেকে ধীরে ধীরে হলুদ হচ্ছে ধানগাছের শরীর। ঋতুচক্রে এখন হেমন্ত কাল। কিন্তু উত্তরের হেমন্ত মূলত শীতেরই আগমনী বার্তা দেয়। সকালে এখন শীতের আবেশ। সেই আবেশ ছড়িয়ে পড়েছে ফলগাছা গ্রামসহ পুরো উত্তরে। প্রস্তুতি শুরু হয়েছে শীতের। ফলগাছা গ্রামের সেনপাড়ায় বানানো হচ্ছে ডালের বড়ি। বাড়িতে বাড়িতে বড়ি শুকানো দেখে মনে হবে কেউ যেন ডেকে বলছে, ‘ডালের বড়ি শুকিয়ে রেখেছি…।’
তথ্য হলো, শুধু রসনা তৃপ্তির জন্যই নয়। সেনপাড়ার অধিকাংশ পরিবারই বড়ি বানিয়ে সংসার চালান। এই বড়ি বানানোর কাজ শুরু হয় রাত ৩টার দিকে। সেই কর্মযজ্ঞ দেখতে ভোরবেলা রওনা হই মোটরসাইকেলে। পৌর শহর থেকে মীরগঞ্জ বাজার হয়ে পাকা সড়ক ধরে বামনডাঙা ইউনিয়নের ফলগাছা বাজার। ততক্ষণে আট কিলোমিটার পথ অতিক্রম করেছি। এরপর আঁকাবাঁকা কাঁচা সড়ক ধরে দক্ষিণে ছুটে চলি। প্রায় তিন কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে না করতেই আটকে গেল দুই চোখ। বাড়ির উঠানে বা সড়কের ধারে বসে লোকজন পরিষ্কার করছেন টিন। পুরোনোসেই টিনের ওপর কেউবা দিচ্ছেন নারকেল তেলের প্রলেপ। কেউ ফেটিয়ে যাচ্ছেন মিহি করে বেটে নেওয়া মাষকলাই। আবার কেউ তৈরি করছেন ডালের বড়ি। বাড়ির নারী-পুরুষ-বৃদ্ধ-বৃদ্ধা কিংবা শিশু—সবাই কোনো না কোনোভাবে বড়ি বানানোর কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকছেন। এটাই যে সেই সেনপাড়া, তা আর বুঝতে বাকি রইল না।
সেনপাড়ায় প্রায় ৮০টি পরিবারের বাস। শুরুর দিকে তিনজনের মাধ্যমে বড়ি বানানোর কাজ শুরু হয় এখানে। বাড়ির সবাই মিলে কাজটি করা যায় বলে এখন পাড়াজুড়ে প্রায় সবাই এ পেশায় লেগেছেন। এতে পরিবারে ফিরে এসেছে আর্থিক সচ্ছলতাও।
এই সাতসকালে বড়ি বানানোর কাজে ব্যস্ত ছিলেন প্রায় ৭৫ বছর বয়সী বীরেন চন্দ্র সেন। কাজের ফাঁকে ফাঁকে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। বীরেন বলে যান সেনপাড়া আর তাঁর ডালের বড়ির গল্প। দেশভাগের বেশ কিছু কাল আগে হরিনাথ, পান্না ও লক্ষ্মীকান্ত সেন নামের তিনজন লোক কুড়িগ্রামের উলিপুর থেকে এ পাড়ায় আসেন। মূলত নদীভাঙনের কারণে তাঁরা এখানে এসেছিলেন। তাঁদের পেশা ছিল ডালের বড়ি বানানো। নতুন জায়গায় এসে জীবনযুদ্ধের তাগিদে তাঁরা পুরোনো কাজ শুরু করেন। তাঁদের দেখে পরে এ পাড়ার অনেকেই ডালের বড়ি বানানোর সঙ্গে জড়িয়ে যান।
বড়ি বানানোর উপকরণ
বড়ি বানানোর মূল উপকরণ মাষকলাই। স্থানীয়ভাবে যা ঠাকুর বা ঠাকুরি কালাই নামে পরিচিত। এর সঙ্গে মেশাতে হয় পরিমাণমতো ময়দা। ভাদ্র থেকে মাঘ মাস পর্যন্ত ডালের বড়ি বানানোর সময়। এক কেজি মাষকলাই দিয়ে এক কেজির কিছু কম বড়ি পাওয়া যায়। প্রতি কেজি ছাঁটা কলাইয়ের দাম ১৬২ টাকা।
প্রক্রিয়া
মিহি করে ব্লেন্ড করে নেওয়া মাষকলাই ফেটানোর কাজে ব্যস্ত ছিলেন বীনা রানী (৪০)। কথায় কথায় তিনি জানান, কলাই ভিজিয়ে রাখতে হয় ঘণ্টাখানেক। তারপর ধুয়ে নিতে হয়। এরপর পরিমাণমতো পানি দিয়ে সে কলাই ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে অথবা পাটায় বেটে নিতে হয়। এরপর শুরু হয় ফেটানোর কাজ। এ কাজে বেশ সময় লাগে এবং পরিশ্রমও হয় খুব। এরপর বড়ি বানানোর কাজ। তেল মাখানো টিনের ওপর ব্লেন্ড করে নেওয়া কলাই সারিবদ্ধভাবে গুটি গুটি করে দেওয়া হয়। রোদ প্রখর থাকলে এক দিনে শুকিয়ে যায়।
দরদাম
ভালোভাবে শুকানোর পর বড়িগুলো বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রি করা হয়। প্রতি কেজি বড়ির দাম ৩৫০ টাকা। স্থানীয় হাটবাজার ছাড়াও এ বড়ি রংপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া, লালমনিরহাটসহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় পাইকারি বিক্রি হয়।
যেভাবে বড়ি খাবেন
বিভিন্নভাবে ডালের বড়ি খাওয়া যায়। ভেজে ভর্তা করে, আবার শুধু তেলে ভেজেও খাওয়া যায়। খাওয়া যায় বিভিন্ন মাছের ঝোলে। ঘিয়ে ভেজেও খাওয়া যায় এটি। এ ছাড়া বিভিন্ন তরকারিতে দিয়েও খাওয়া যায়। তবে শীতের দিনে সবচেয়ে মজাদার খাবার হচ্ছে বেগুন বড়ি।
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৩ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৩ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৩ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৩ দিন আগে