বিপণি ছেড়ে ফুটপাতে ঝোঁক

অর্চি হক, ঢাকা
Thumbnail image

একদিকে চৈত্রের দাবদাহ, অন্যদিকে পোশাকের চড়া দাম। এবারের ঈদবাজারে এই দুটোর প্রভাব পড়ছে বেশ। দিনভর খরতাপের কারণে বেশির ভাগ ক্রেতা সন্ধ্যার পর কেনাকাটা করতে বের হচ্ছেন। সাধ আর সাধ্যের মধ্যে কেনাকাটা সারতে অনেকে বিপণিবিতান ছেড়ে ঝুঁকছেন ফুটপাতের দিকে। ফুটপাত ও বিপণিবিতান—দুই জায়গার বিক্রেতারাই বলছেন, গরমের কারণে দিনের বেলা ক্রেতাসমাগম কম হচ্ছে। সন্ধ্যার অপেক্ষায় থাকছেন তাঁরা।

গতকাল শনিবার উত্তরার রাজলক্ষ্মী শপিং কমপ্লেক্সের সামনের ফুটপাতে ছেলের জন্য প্যান্ট কিনছিলেন গৃহিণী আকলিমা আক্তার। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘বাসায় পরার জামাকাপড় প্রায়ই ফুটপাত থেকে কিনি। কিন্তু ঈদের কাপড় এবারই প্রথম ফুটপাত থেকে কিনতেছি। মার্কেটের দামের সাথে আর কুলাইতে পারতেছি না।’

বিপণিবিতানের বিক্রেতারাও জানাচ্ছেন, তাঁদের ক্রেতার একটা বড় অংশ ফুটপাতের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। দামের ঊর্ধ্বগতির পাশাপাশি ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়াও এর কারণ বলে মনে করছেন তাঁরা।

রাজলক্ষ্মী কমপ্লেক্সের তনুপ্রিয়া শাড়িজের বিক্রেতা মোহাম্মদ শাকিল বলেন, ‘মার্কেটে তো লোক কম। যত ভিড় ফুটপাতে। ফুটপাতের ওরা তো কম দামে দিতে পারে। কিন্তু আমাদের দোকান ভাড়াসহ আরও অনেক খরচ আছে ৷ আমরা চাইলেই কমে ছাড়তে পারি না।’

এবার ঈদে বেচাবিক্রি কেমন জানতে চাইলে এই বিক্রেতা বলেন, ‘রোজার শুরু থেকে একদমই লোক ছিল না। দুই দিন ধইরা বিক্রি একটু হইতেছে। সবার হাতে বেতন আসছে। তাই লোক একটু বাড়ছে।’

বিপণিবিতানের ক্রেতারা ফুটপাত থেকে পণ্য কিনতে ঝুঁকে পড়ছেন কি না জানতে চাইলে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের পর্যবেক্ষণ হলো, এবার বিপণিবিতানগুলোতে ৩০ শতাংশ ক্রেতা কম। এই ৩০ শতাংশ ক্রেতা হয়তো ফুটপাতে চলে গেছেন। মার্কেটের বদলে ফুটপাত থেকে তাঁরা কেনাকাটা সারছেন।’

ঈদ উপলক্ষে নিউমার্কেট, বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সসহ অনেক বিপণিবিতান রাত ১২টা-১টা পর্যন্ত খোলা থাকছে। কিন্তু উত্তরার মার্কেটগুলো ১১টার মধ্যে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বলে জানান ক্রেতা-বিক্রেতারা। মাসকট প্লাজার পোশাক বিক্রেতা শামীম ইসলাম বলেন, ‘আমরা তো অত কাস্টমার পাইতেছি না। বেচাবিক্রি না থাকায় ১১টার মধ্যেই দোকান বন্ধ কইরা দিচ্ছি।’

বিক্রেতারা জানান, বেচাবিক্রি মূলত জমে ইফতারের পর থেকে। প্রতিবারই এমনটা হয়। তবে এবার দিনের বেলায় একেবারেই ক্রেতা সমাগম হচ্ছে না। বেচাবিক্রির জন্য সন্ধ্যার অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে তাঁদের।

উত্তরা ও গাজীপুর এলাকায় অসংখ্য গার্মেন্টস থাকার কারণে এই এলাকায় কম মূল্যে পোশাক পাওয়া যায়। এ জন্য রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার ক্রেতারা উত্তরায় কেনাকাটা করতে আসেন। তেমনই একজন ক্রেতা খায়রুন আরা। বনানী থেকে এসে উত্তরার মাসকট প্লাজার সামনে ফুটপাতে কেনাকাটা করছিলেন তিনি।

খায়রুন আরা বলেন, ‘গ্রামের বাড়িতে প্রতিবছরই জামাকাপড় পাঠাতে হয়। এখানে একসঙ্গে কিনলে অনেক কম দামে পাওয়া যায়। পোশাকের মানও ভালো। তাই এখান থেকে নিচ্ছি।’

উত্তরায় আড়ং, আর্টিসান, সারা, ইনফিনিটিসহ বড় ব্র্যান্ডের বিতানগুলোতে এখনো ক্রেতা তুলনামূলক কম বলে জানান বিক্রয়কর্মীরা। তবে এসব বিতানে রমজানের শেষের দিকে ক্রেতার চাপ আরও বাড়বে বলে আশা তাঁদের।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত