পানি কমায় হাওরে স্বস্তি

মোহনগঞ্জ (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১১ এপ্রিল ২০২২, ০৭: ০৮
আপডেট : ১১ এপ্রিল ২০২২, ১৬: ৫৩

ধনু নদের পানি কমতে শুরু করায় স্বস্তিতে মোহনগঞ্জের ডিঙাপোতা হাওরের কৃষকেরা। ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে ধনু নদের পানি এক সপ্তাহ আগে ক্রমাগত বাড়ছিল। এতে হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ ভাঙনের হুমকিতে পড়ে। দুশ্চিন্তা বাড়ে কৃষকের। ফসল রক্ষা বাঁধের ভাঙন ঠেকাতে তৎপর হয় স্থানীয় প্রশাসন। কিন্তু কয়েক দিন ধরে নদীর পানি কমতে থাকায় ডিঙাপোতা হাওরের কৃষকেরা কিছুটা দুশ্চিন্তামুক্ত হন।

উপজেলা প্রশাসন থেকে বলা হয়েছে, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ফসল রক্ষা বাঁধের বেশ কয়েকটি পয়েন্টে ভাঙনের ঝুঁকি তৈরি হয়েছিল। ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টগুলোর কোনোটাতে বাঁশ দিয়ে দুই স্তরে বস্তা ফেলা হয়, কোনোটাতে পাশে বিকল্প আরও একটি বাঁধ দেওয়া হয়; যেন ভারী বর্ষণ হলেও বাঁধ ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা না থাকে।

উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এবার মোহনগঞ্জ উপজেলার হাওর এলাকায় ৬ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। ইতিমধ্যে ধান কাটা শুরু হয়েছে। আর এক সপ্তাহের মধ্যে হাওরের ধান কাটা শেষ হয়ে যাবে। যদি এই কয়েকটা দিন ভারী বর্ষণ না হয়, আবহাওয়া কিছুটা অনুকূলে থাকে, তাহলে অনায়াসে কৃষকেরা তাঁদের স্বপ্নের ফসল ঘরে তুলতে পারবেন। কয়েক দিন আগে উজানের ঢলে ফসল রক্ষা বাঁধের ভাঙনে আশঙ্কা দেখা দিলে চারদিকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বাঁধ রক্ষায় কৃষক, প্রশাসন ও পাউবো কর্মকর্তারা জোর চেষ্টা চালান। সম্মিলিত চেষ্টা আর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় রক্ষা পেয়েছে বাঁধ। ফসল ঘরে তোলার স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে কৃষকের।

এলাকাবাসী জানান, কয়েক দিন আগে উজান থেকে নেমে আসা ঢলে ধনু নদের পানি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে ডিঙাপোতা হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধে চাপ সৃষ্টি হয়। এতে বাঁধের বেশ কয়েকটি পয়েন্টে ভাঙনের ঝুঁকি তৈরি হয়।

কৃষি কর্মকর্তা মো. শাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘আপাতত বাঁধ ভাঙার শঙ্কা থেকে মুক্ত হওয়া গেল। পাশাপাশি আবহাওয়াও অনুকূলে রয়েছে। আমাদের উপজেলায় বাঁধের বাইরে কোনো ধান নষ্ট হয়নি।

হাওরের বোরো ধান পাকা শুরু হয়েছে আরও কয়েক দিন আগে থেকেই। পরিস্থিতি ঝুঁকিপূর্ণ থাকায় ৮০ ভাগ পেকেছে, এমন ধান কাটার পরামর্শ দিয়েছি। ইতিমধ্যে ৩২০ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়ে গেছে। হাওরে অনেকগুলো মেশিন থাকায় দ্রুতই ধান কাটা হয়ে যাচ্ছে। আর এক সপ্তাহ সময় পেলে হাওরের প্রায় পুরো ধান কাটা হয়ে যাবে। এরপর সামান্য যা কিছু থাকবে, সেগুলো অনেকটা উঁচু জমিতে রয়েছে।’

হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের দায়িত্বে থাকা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপসহকারী প্রকৌশলী সোহাগ ফকির বলেন, ‘এবার মোহনগঞ্জ উপজেলায় ১৮টি পিআইসির (প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি) অধীনে প্রায় সাড়ে ২০ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। কয়েক দিন আগে উজানের ঢলের পানিতে বাঁধের কয়েকটি জায়গায় ভাঙনের ঝুঁকি তৈরি হয়। দ্রুত আমরা বাঁশ ও বস্তা ফেলে বাঁধ মেরামত করেছি। এখন আর ভাঙার শঙ্কা নেই। এরপরও নিয়মিত নজরদারি করছি।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাব্বির আহমেদ আকুঞ্জি বলেন, ‘উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ফসল রক্ষা বাঁধের বেশ কয়েকটি পয়েন্টে ভাঙনের ঝুঁকি তৈরি হয়েছিল। ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টগুলোর কোনোটাতে বাঁশ দিয়ে দুই স্তরে বস্তা ফেলা হয়েছে, আবার কোনোটাতে পাশে বিকল্প আরও একটি বাঁধ দেওয়া হয়েছে; যেন ভারী বর্ষণ হলেও বাঁধ ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা না থাকে। সম্মিলিতভাবে রাত-দিন পরিশ্রমে সেগুলো মেরামত করা হয়েছে। গত কয়েক দিন বৃষ্টিপাত হয়নি। ফলে প্রতিনিয়ত পানি কমছে। আপাতত বাঁধ ঝুঁকিমুক্ত রয়েছে। তারপরও ফসল না তোলা পর্যন্ত সতর্ক দৃষ্টি রাখছি।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত