মানিকগঞ্জ শহরসহ জেলার সাতটি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে মোটরসাইকেল চুরি। প্রায় প্রতিদিনই জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে চুরি হচ্ছে মোটরসাইকেল। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, পুলিশের নিষ্ক্রিয়তায় এ চুরি থামছে না। অনেক সময় মামলা করতে গেলেও নিচ্ছে না পুলিশ।

এদিকে চুরি-ডাকাতি ঠেকাতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জেলা শহরের বিভিন্ন স্থানে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়। তবে সেগুলো এখন অকেজো রয়েছে। এ কারণে মোটরসাইকেল চুরি করে খুব সহজেই পার পেয়ে যাচ্ছে চোরেরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ছয় মাসে জেলা শহরসহ সাতটি উপজেলায় শতাধিক মোটরসাইকেল চুরির ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চুরির ঘটনা ঘটে জেলা শহরে।

গত তিন মাসের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ এবং ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে জানা গেছে, ১৩ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ছয়টায় মানিকগঞ্জের বেউথা রোডের নগদ কার্যালয়ে কর্মরত আলাল মিয়া তাঁর ব্যবহৃত সুজুকি জিক্সার মোটরসাইকেলটি তালাবদ্ধ করে রেখে ভেতরে যাচ্ছেন। এর কিছুক্ষণ পর ক্যাপ, ফুলহাতা শার্ট ও ব্লেজার পরা অচেনা এক যুবক সেখানে এসে অবস্থান নেন। কিছুক্ষণ অবস্থান করে পকেট থেকে চাবি বের করে মোটরসাইকেলটির তালার লক খুলে তা নিয়ে দ্রুত চলে যাচ্ছেন।

একই দিন মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকার পৌর সুপার মার্কেটের সামনে থেকে দুটি মোটরসাইকেল চুরি হয়ে যায়। এর দুই দিন আগে মানিকগঞ্জ শহরের পুরোনো বাজারের টিনপট্টি মসজিদের পাশ থেকে থেকে একটি ডিসকভার ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল চুরি হয়। ১০ ফেব্রুয়ারি পৌর এলাকার মোল্লা বাজার থেকে একই ব্র্যান্ডের আরেকটি মোটরসাইকেল চুরি হয়।

মাসখানেক আগে পৌর এলাকার পশ্চিম দাশড়া থেকে সুজুকি জিক্সার ও ডিসকভার এবং গঙ্গাধরপট্টি থেকে দুটি সুজুকি জিক্সার ভুক্তভোগীদের বাড়ির গেটের তালা ভেঙে নিয়ে যায় চোরেরা। এ রকম প্রায় প্রতিদিনই শহরের কোনো না কোনো স্থান থেকে মোটরসাইকেল চুরি হচ্ছে।

গঙ্গাধরপট্টি এলাকার বাসিন্দা মাহিন খান বলেন, ‘অনেক শখ করে ছেলেকে সুজুকি জিক্সার মোটরসাইকেল কিনে দিয়েছি। গত ১৮ ডিসেম্বর রাতে দোতলা বাসার ভেতরে ডাবল তালা দিয়ে রাখা ছিল মোটরসাইকেলটি। ১৯ ডিসেম্বর সকালে ঘুম থেকে উঠে মোটরসাইকেলটি আর পাননি।’

মাহিন খান বলেন, ‘পরে সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখতে পাই, দুজন চোর ভোর সাড়ে চারটার দিকে মোটরসাইকেলটি নিয়ে চলে যাচ্ছেন। পরে আমি থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ জিডি (সাধারণ ডায়েরি) নেয়। এরপর আমাদের মোটরসাইকেলটি আজও উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ।’

পৌরসভার পশ্চিম দাশড়া এলাকার আসিফ ও আকাশ নামের দুজনের দুটি মোটরসাইকেল অক্টোবর মাসে চুরি হয়। চোরের ছবিসহ থানায় মামলা করতে গেলে জিডি নেওয়া হয়। এখনো মোটরসাইকেল উদ্ধার এবং চোরদের আটক করতে পারেনি পুলিশ।

মানিকগঞ্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ গোলাম আজাদ খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মালিকেরা তাঁদের মোটরসাইকেল নির্দিষ্ট স্থানে না রেখে জনসমক্ষে রাখায় মোটরসাইকেল চুরি হচ্ছে। চুরি হওয়া মোটরসাইকেল উদ্ধারে প্রতিদিন জেলা শহরসহ সাতটি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। ভুক্তভোগীদের মামলা নিতে পুলিশের কোনো কর্মকর্তা অনীহা প্রকাশ করলে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।