ব্যবসার আড়ালে ব্যবসা

সম্পাদকীয়
প্রকাশ : ৩১ জানুয়ারি ২০২৪, ০৭: ১৩
আপডেট : ৩১ জানুয়ারি ২০২৪, ০৭: ১৪

কেলভিন ইয়েং, ননসো ইজিমা পেটার ওরফে অস্কার, নুডেল ইবুকা স্ট্যানলি ওরফে পডস্কি—এই নামগুলো পরিচিত না হলেও সাইফুল ইসলাম রনি ও মো. আসাদুজ্জামান আপেল নাম দুটি শুনে থাকতে পারেন। কারণ তাঁরা আমাদের দেশের নাগরিক। কিন্তু কেলভিন ক্যামেরুনের আর বাকি দুজন নাইজেরিয়ার নাগরিক। এই নামগুলো কীভাবে একসঙ্গে হলো? সোমবারের আজকের পত্রিকা হাতে নিয়ে ৬ নম্বর পাতায় গেলেই জানতে পারবেন—এই নামের ব্যক্তিরা গ্রেপ্তার হয়েছেন। ‘বেচারারা’ ব্যবসাই তো করছিলেন—পোশাকশিল্পের বিভিন্ন পণ্যের ব্যবসা। তাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমস্যা কী? আছে। তারা যখন দেখল, পোশাকশিল্পের ব্যবসার আড়ালে একটি চক্র মাদক চোরাচালান করছে, তখন তাদের হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকার কোনো কারণ নেই। গত কয়েক দিনে এই চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।

২৪ জানুয়ারি রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন থেকে মালাউয়ের এক নাগরিককে ৮ কেজি ৩০০ গ্রাম কোকেনসহ গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর তাঁর কাছ থেকেই সন্ধান পাওয়া যায় ওই চক্রের। মাদকের আন্তর্জাতিক এই চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ করে আসছিলেন নাইজেরিয়ার নাগরিক ডন ফ্রাঙ্কি ওরফে জ্যাকব ফ্রাঙ্কি।

ফ্রাঙ্কি দীর্ঘ ৯ বছর ধরে আমাদের দেশে অবস্থান করে আসছিলেন। এখান থেকেই পোশাকশিল্পের আড়ালে আরামসে পরিচালনা করছিলেন মাদকের ব্যবসা। ৯ মাস আগে তিনি নিজ দেশে ফিরে গেছেন। শুধু পোশাকশিল্পের ব্যবসাতেই তাঁর মুখ লুকাননি, তিনি এখানে ছিলেন বাংলাদেশ নাইজেরিয়ান কমিউনিটির প্রেসিডেন্ট। ‘বিগ বস’ নামে পরিচিত ছিলেন কমিউনিটির সদস্যদের কাছে। যাই হোক, তিনি আপাতত ধরাছোঁয়ার বাইরে। তবে তাঁর মাদক চোরাচালান চক্রের কয়েকজন দেশি-বিদেশি সদস্যকে পাকড়াও করার জন্য মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরকে ধন্যবাদ।

আমরা সবাই জানি, মাদকের ভয়াবহতা একটা সমাজ, জাতি বা দেশ ধ্বংস করার আড়ালে সুনিপুণভাবে কাজ করতে পারে। সেই ভয়াবহতার ব্যাখ্যা নতুন করে না দিলেও চলবে। তবে যে কথাটা আমরা বলতে চাই—পত্রিকার খবরে পড়ে কিংবা কোনো নাটক-সিনেমা দেখে মাদক কারবারিতে চোরাচালানের ক্ষেত্রে যে অভিনব কায়দাগুলো জানা হয়ে যায়, সেগুলো অনেকে নিজেদের ফায়দার জন্য বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করেন। মানে, মাদক কারবারিরা মাদকদ্রব্য বিক্রি বা চোরাচালানের ক্ষেত্রে ওই পন্থাগুলো অবলম্বন করে থাকেন। কিন্তু তাঁরা এটা ভুলে যান যে, কোনো নাটক-সিনেমায় দেখানো মাদক সেবন বা ব্যবসার পরিণতি কী হয়। ভুলে যান, পত্রিকার ছাপা খবরে এই তথ্যও থাকে যে, ‘মাদক কারবারিদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে’; নয়তো চোরাকারবারের কৌশল জানা যেত না।

জনপ্রিয় মার্কিন সিরিজ ‘ব্রেকিং ব্যাড’-এর কথা নিশ্চয়ই টিভিপ্রেমীরা ভুলে যাননি। মাদক প্রস্তুত থেকে শুরু করে গ্রাহকের হাত পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার নানা কৌশল এই সিরিজে দেখালেও কারবারিদের পরিণতি কিন্তু ভালো দেখায়নি। সে কথা যেন যেকোনো ব্যবসায়ীই মনে রাখেন।

সবার প্রত্যাশা—মাদকমুক্ত সমাজ গড়ে উঠুক; আর কোনো ফ্রাঙ্কি মাদকসম্রাটে পরিণত না হোক। এ ব্যাপারে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ওপর আস্থা রাখাই যায়।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত