ওয়ান সিটি টু টাউনের পথে বন্দরনগরী

সোহেল মারমা, চট্টগ্রাম
Thumbnail image

চীনের সাংহাই শহরের আদলে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম শহরকে ‘ওয়ান সিটি, টু টাউন’ মডেলে গড়ে তুলতে টানেল যুগে প্রবেশ এখন শুধু সময়ের ব্যাপার। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল জনসাধারণের জন্য খুলে দিলে নগরীর পতেঙ্গা থেকে দক্ষিণ আনোয়ারা যাওয়া যাবে নিমেষেই। এতে কমবে শহরমুখী যানবাহনের চাপ। দ্রুত যোগাযোগ ব্যবস্থার ফলে দুই পাড়েই পাওয়া যাবে সমান নাগরিক সুবিধা।

গতকাল শনিবার সকালে চট্টগ্রাম নগরের পতেঙ্গা এলাকায় টানেলের দক্ষিণ টিউবের পূর্ত কাজের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। গণভবন থেকে অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এ ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এই টানেল চালু হলে কর্ণফুলী নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠবে সাংহাইয়ের মতো ওয়ান সিটি টু টাউন। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা কক্সবাজার ও দক্ষিণ চট্টগ্রামগামী গাড়িগুলোকে আর শহরে ঢুকতে হবে না। চট্টগ্রাম শহরের আউটার রিং রোড হয়ে টানেলের মাধ্যমে দ্রুত সময়ের মধ্যে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে। ফলে চট্টগ্রাম নগরে যানবাহনের চাপ কমে যাবে। টানেলকে ঘিরে চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পের আরও বিকাশ ঘটবে।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, এই টানেল নির্মাণের কাজ শেষ হলে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের মধ্যে আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে এবং এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে সংযোগ স্থাপিত হবে। এতে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হবে। কর্ণফুলী নদীর পূর্ব প্রান্তের প্রস্তাবিত শিল্প এলাকার উন্নয়ন হবে এবং পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত চট্টগ্রাম শহর, চট্টগ্রাম বন্দর ও বিমানবন্দরের সঙ্গে উন্নত ও সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে বলে মনে করে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ।

টানেলের প্রবেশ পথ শুরু হয়েছে পতেঙ্গার নেভাল একাডেমির পাশ থেকে। নদীর তলদেশ দিয়ে তা চলে গেছে আনোয়ারার দিকে। নদীর তলের এই মূল পথের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার। এর বাইরে পতেঙ্গা প্রান্তে ৫৫০ মিটার এবং আনোয়ারা প্রান্তে ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার অ্যাপ্রোচ সড়ক করা হয়েছে। সব মিলিয়ে এই পথের দৈর্ঘ্য ৯ দশমিক ৩৯ কিলোমিটার। বর্তমানে যে পথ পেরোতে এক ঘণ্টা সময় লাগে, টানেল হলে লাগবে মাত্র পাঁচ থেকে ছয় মিনিট। টানেল ধরে যাওয়া যাবে পর্যটননগরী কক্সবাজার।

২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং যৌথভাবে কর্ণফুলী টানেলের ভিত্তি স্থাপন করেন।২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি শেখ হাসিনা প্রথম টানেল টিউবের বোরিং কাজের উদ্বোধন করেন। এই টানেল নির্মাণে মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে ৪ হাজার ৪৬১ দশমিক ২৩ কোটি টাকা। বাকি ৫ হাজার ৯১৩ দশমিক ১৯ কোটি টাকা ঋণ সহায়তা হিসেবে দিচ্ছে চীনা এক্সিম ব্যাংক। চীনের কমিউনিকেশন ও কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিসিসিসি) টানেল নির্মাণের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।

টানেল চালু হলে মাত্র পাঁচ থেকে ছয় মিনিটে কর্ণফুলী নদী পাড়ি দেওয়া যাবে। ফলে বেঁচে যাওয়া সময় দেশের অর্থনীতির গতি বাড়াবে।তা ছাড়া টানেলের সড়ক ধরে চট্টগ্রাম থেকে টেকনাফ পর্যন্ত গড়ে উঠবে নতুন শিল্প এলাকা। একই সঙ্গে আছে বিশাল পর্যটনের সম্ভাবনা। পর্যটকদের সুবিধায় টানেলের সার্ভিস এরিয়ায় ৩০টি বাংলো, একটি ভিআইপি বাংলো, মোটেল মেস, কনভেনশন সেন্টার, রিসেপশন বিল্ডিং, মসজিদ, হেলথ সেন্টার, জাদুঘর ও সুইমিং পুল করা হবে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, আগামী বছরের জানুয়ারির শেষ নাগাদ কিংবা ফেব্রুয়ারির শুরুতে টানেলে নির্মাণের কাজ পুরোপুরি শেষ হবে।ধারণা করা হচ্ছে ওই বছর ফেব্রুয়ারি বা মার্চে টানেল খুলে দেওয়া হতে পারে। সার্বিকভাবে টানেলের প্রায় ৯৪ শতাংশের বেশি কাজ শেষ হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের প্রকল্প পরিচালক মো. হারুনুর রশীদ চৌধুরী বলেন, টানেলের মূল কাজ শেষ। টানেলের ভেতরে শেষ মুহূর্তের সিভিল, মেকানিক্যাল ও ইলেকট্রিক ও সাজসজ্জার কিছু কাজ চলছে। তাঁরা আগামী বছর জানুয়ারির মধ্যে টানেলের সব কাজ শেষ করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কাজ শেষ হলে পরে সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী টানেল যেকোনো দিন খুলে দেওয়া হতে পারে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত