বৃষ্টিতে কৃষকের সর্বনাশ

মোহাম্মদ উজ্জ্বল, মহম্মদপুর (মাগুরা)
প্রকাশ : ০৭ ডিসেম্বর ২০২১, ০৮: ৪৭
আপডেট : ০৭ ডিসেম্বর ২০২১, ১৬: ৪৬

ঘুর্ণিঝর জাওয়াদের প্রভাবে মাগুরার মহম্মদপুরে গত রোববার থেকে বৃষ্টি হচ্ছে। ভারী এই বৃষ্টিতে উদ্বেগ বাড়ছে ধানচাষিদের মধ্যে। পানিতে ডুবে ধান পুরোপুরি নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন তাঁরা। সেই সঙ্গে শীতের তীব্রতা বেড়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন কৃষকেরা।

উপজেলায় টানা দুই দিনের বৃষ্টিতে প্রায় তিন হাজার হেক্টর জমির পাকা বোরো ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে কৃষকেরা দাবি করছেন। প্রায় প্রতিটি গ্রামের মাঠ গুলোতে বৃষ্টির পানিতে ভিজে খেতের ধান পড়ে আছে মাঠে। ধান ঘরে তোলা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে বলে জানান কৃষকেরা।

তবে উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র বলছে, মাত্র ৮ থেকে ১০ হেক্টর জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এর মধ্যে প্রায় ১২ হাজার ১৯০ হেক্টর জমির কাটা-ধান ঘরে তোলা হয়েছে। মাত্র ১০ হেক্টর জমির কাটা ধান মাঠে থাকায় টানা বৃষ্টিতে ভিজে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

জানা গেছে, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে কৃষক খেতের পাকা ধান কেটে ঘরে তুলতে শুরু করেছেন। তবে অনেক কৃষক ধান কাটার কাজ শেষ করতে না পেরে বিপাকে পড়েছেন। হঠাৎ বৃষ্টিতে কাটা ধান ভিজে নষ্ট হওয়ায় চরম ক্ষতির মুখে পড়েছে কৃষক।

গত রোববার সকালে সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বৃষ্টি-জলাবদ্ধতায় ইতিমধ্যে উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে প্রায় ৩০০০ হেক্টর জমির ধান ঠিকমতো ঘরে তোলা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কৃষক ধান কেটে জমিতে রেখে দিয়েছেন।

এ বছর উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ধান চাষ হয়েছে। মহম্মদপুর উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে উপজেলার ৮ ইউনিয়নে ১২ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ও বোনা আমন জাতের ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। আবাদ হয়েছে ১২ হাজার ২শ ৫০ হেক্টর জমিতে। উপজেলায় গড় খাদ্যের চাহিদা রয়েছে ৪৫ হাজার ৩শ ৫০ মেট্রিক টন। গড় হিসাব অনুযায়ী উপজেলার খাদ্য চাহিদা মিটিয়ে ১৬ হাজার ৫শ ৫০ মেট্রিক টন চাল অতিরিক্ত থাকবে বলে ধারণা ছিল। ওই ধান বিক্রি করে কৃষকের বাড়তি আয়ের আশা করেছিলেন তাঁরা।

উপজেলার বালিদিয়া ইউনিয়নের হরেকৃষ্ণপুর গ্রামের কৃষক নাহিদ হোসেন জানান, ‘জনপ্রতি ৫০০ টাকা করে কিষান। কৃষাণের সঙ্গে পরিবারের সবাই মিলে ধান কেটেছেন। কিন্তু টানা দুই দিনের বৃষ্টির পানিতে পাকা ধান পুরোপুরি ডুবে গেছে।’

হরিনাডাঙ্গা গ্রামের কৃষক হালিম মোল্লা, রিয়াজুল বিশ্বাস, সালাম মোল্লা, উজির মৃধা, মেহেদি হাসান রাব্বি জানান, এ বছর আশা করে কেউ এক বিঘা, কেউ দের বিঘা কেউ তার বেশি জমিতে ধানের চাষ করেছিলাম। সব ধান মাঠে পড়ে আছে। অল্প কিছু ধান ঘরে তুলতে পেরেছি।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রণব কুমার রায় গত রোববার সারা দিন এলাকা পরিদর্শন শেষে বিকেলে দিকে জানান, বৃষ্টি শুরু আগে জরুরিভাবে কৃষকদের সতর্ক করা হয়েছে। পাকা ধান কেটে ঘরে তুলতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। অনেকে সেটা করেননি। তবে টানা দুই দিনের বৃষ্টিতে কৃষক কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রমজানুল আমিন বলেন, চলতি মৌসুমে উপজেলার ৮ ইউনিয়নে ১২ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ও বোনা আমন জাতের ধান চাষাবাদ হলেও সব ধান প্রায় কাটা ও ঘরে তোলা শেষ। মাত্র ৮ থেকে ১০ হেক্টর জমির ধান কেটে বিচালি করে রাখায় সেটা পানিতে ডুবে গেছে। তবে উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরির কাজ চলছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুস সোবহান প্রশিক্ষণে থাকায় তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত