Ajker Patrika

‘যুদ্ধকালেও’ বেড়েছে বিস্তার, মাদকসেবী বেড়ে তিন গুণ

শাহরিয়ার হাসান, ঢাকা
আপডেট : ১৭ জুন ২০২৩, ১১: ৩৩
‘যুদ্ধকালেও’ বেড়েছে বিস্তার, মাদকসেবী বেড়ে তিন গুণ

মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার পাঁচ বছর পার হয়েছে। কিন্তু এই সময়েও দেশে মাদকের বিস্তার ও মাদকাসক্তের সংখ্যা বেড়েছে। দেশে ঢুকেছে নতুন নতুন মাদক। পরিস্থিতি নাজুক উল্লেখ করে এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটিও।

মাদক নির্মূলে ২০১৮ সালের ৪ মে সারা দেশে মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান শুরু হয়। অভিযানের স্লোগান ছিল ‘চল যাই যুদ্ধে, মাদকের বিরুদ্ধে’। গত পাঁচ বছরে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ চার শতাধিক মাদক কারবারি নিহত হয়েছে। চিহ্নিত হয়েছে মাদক চোরাচালানের ১০-১২টি রুট। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গ্রেপ্তার করেছে সাড়ে ৩৬ হাজারের বেশি মাদক কারবারিকে। তবু পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি।

মাদকবিরোধী সংগঠন মাদকদ্রব্য নেশা নিরোধ সংস্থার (মানস) তথ্যমতে, দেশে বর্তমানে মাদকাসক্তের সংখ্যা ৮৫ থেকে ৯০ লাখ। ২০২৪ সালের আগেই এই সংখ্যা কোটি ছাড়িয়ে যাবে। সরকারি সংস্থা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের হিসাব বলছে, বর্তমানে মাদকাসক্তের সংখ্যা ৭৫ থেকে ৮০ লাখ। মাদকবিরোধী যুদ্ধ শুরুর সময় এই সংখ্যা ছিল ৩০ থেকে ৩৫ লাখ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাদকাসক্তদের মধ্যে ৯০ শতাংশই কিশোর-তরুণ বয়সী। তাদের ৮৫ ভাগই ইয়াবাসেবী। তাদের অনেকে ইয়াবা বিক্রিও করে। এতে ইয়াবার বিস্তার ঘটার পাশাপাশি সেবীর সংখ্যাও বাড়ছে। ছড়িয়েছে গ্রামেও। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এক প্রতিবেদনে দেশে ২৫ ধরনের মাদক শনাক্ত করার কথা বলা হয়েছে। যার মধ্যে বেশ  কয়েকটি দেশে ঢুকেছে গত তিন বছরে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গত বছর দেশে ৪ কোটি ৫৮ লাখ ৬৮ হাজার ৫৬৯টি ইয়াবা বড়ি উদ্ধার হয়েছে। ইয়াবার মূল উপাদান ম্যাথঅ্যাম্ফিটামিন বা আইস উদ্ধার হয়েছে ১১৩ কেজি ৩৩১ গ্রাম। হেরোইন উদ্ধার হয়েছে ৩৩৮ কেজি। ২০২১ সালে ৫ কোটি ৩০ লাখ ৭৩ হাজার ৬৬৫টি ইয়াবা, ৩৬ কেজি ৭৯৪ গ্রাম আইস এবং ৪৪১ কেজি হেরোইন উদ্ধার হয়। দেশে এর কয়েক গুণ মাদক ঢোকে বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা। জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়নবিষয়ক সংস্থা আঙ্কটাডের ৮ জুনের এক প্রতিবেদন বলছে, মাদকের কারণে প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে ৪৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা প্রায় ৫ হাজার ১৪৭ কোটি টাকা পাচার হয়।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. আজিজুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চলছে। তালিকা ধরে ধরে মাদক কারবারিদের আটক করতে পারলে চাহিদা ও জোগানে টান পড়বে।

কর্মকর্তারা বলছেন, মাদক আইনের মামলায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা জামিনে বেরিয়ে এসে আবার পুরোনো কারবারে জড়াচ্ছেন। আবার এজাহার ও অভিযোগপত্রে ত্রুটি, পর্যাপ্ত তথ্য-প্রমাণ ও সাক্ষীর অভাবে অনেক মাদক মামলার আসামি খালাস পেয়ে যাচ্ছেন। মাদক কারবারিদের কঠোর সাজা হলে তাঁদের মধ্যে ভয় তৈরি হতো।

মাদক বিষয়ে গবেষণা করা নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক এম ইমদাদুল হক বলেন, চাহিদা ও অধিক মুনাফা—প্রধানত এ দুই কারণে মাদক কমছে না। চাহিদা থাকায় অধিক মুনাফার জন্য কারবারিরা মাদক আনতে বেপরোয়া। তাই প্রথমে চাহিদা কমাতে হবে। তরুণদের সচেতন করতে হবে। না হলে অভিযান পরিচালনা করে লাভ হবে না।

আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটির ১৪ জুনের বৈঠকেও মাদক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক মাদক পরিস্থিতি নাজুক উল্লেখ করে বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণাসহ সরকার নানা উদ্যোগ নিলেও মাদকসেবীর সংখ্যা কমেনি, বরং বেড়েছে। বিষয়টি উদ্বেগজনক। মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধকে ব্যর্থ হিসেবে মেনে নিয়ে এর বিরুদ্ধে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশনা দিয়েছেন তাঁরা। তিনি অভিভাবকদের সচেতনতা বাড়ানোর ওপর জোর দেন।

সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেন, সরকার যে পন্থায় মাদক নির্মূল করতে চাইছে, সেটা কোনো কাজে আসছে না। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত