ঢাবির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের ‘নিয়ন্ত্রণহীন’ অনিয়ম

ফারুক ছিদ্দিক, ঢাবি 
প্রকাশ : ০৪ অক্টোবর ২০২২, ১২: ১৯
আপডেট : ০৪ অক্টোবর ২০২২, ১২: ৩৬

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজের পরীক্ষা পরিদর্শনে গিয়ে দফায় দফায় চাঁদা দাবি করার অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. তৈয়ব আলীর বিরুদ্ধে। চাঁদা ও ঘুষ গ্রহণের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে কলেজগুলো।

নিম্নপদস্থ কর্মচারীকে চাকরিতে পদোন্নতির কথা বলে টাকা দাবি, ভুয়া পরিচয় দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে চাঁদা দাবি, অধিভুক্ত কলেজের শিক্ষকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, কোষাধ্যক্ষের গাড়িচালক ও প্রশাসনিক ভবনের নিরাপত্তাপ্রহরীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করার অভিযোগ রয়েছে এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কারণ দর্শানোর নোটিশ দিলেও আমলে নেননি তৈয়ব আলী। সংশ্লিষ্ট বিষয় সব ধরনের কাগজপত্র ও প্রমাণাদি আজকের পত্রিকার হাতে এসেছে।

এসব অভিযোগ এনে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের অফিস থেকে তৈয়ব আলীকে পদসহ সরিয়ে নিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বরাবর চিঠি দিয়েছেন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসের ১৩৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী।

তবে অভিযোগগুলো মিথ্যা ও বানোয়াট বলে দাবি করেছেন তৈয়ব আলী। বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ষড়যন্ত্রকারী গোষ্ঠী চাপ দিয়ে সংশ্লিষ্ট কলেজগুলোকে নোটিশ দিতে বাধ্য করছে বলে জানিয়েছেন তিনি।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবন ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের অফিস থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গত ২৭ জুন পটুয়াখালীর গাজী মুনিবুর রহমান নার্সিং কলেজে পরীক্ষা পরিদর্শনে যান তৈয়ব আলী। পরিদর্শনের পর কলেজের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার কাছ থেকে বিভিন্ন দফায় ৩০ হাজার ঘুষ নেন তিনি। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে ওই কলেজের পরিচালক মো. জাকির হোসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. বাহালুল হক চৌধুরীর কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

মো. জাকির হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে আমরা লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। আমাদের হাতে ঘুষ-চাঁদা নেওয়ার প্রমাণ আছে।’ সূত্র আরও জানায়, বরিশালের ডিডব্লিউএফ নার্সিং কলেজের পরীক্ষাকেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে দফায় দফায় জোর করে ২০ হাজার টাকা নেন তৈয়ব আলী। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বরাবর চিঠি দিয়েছেন ওই কলেজের চেয়ারম্যান মো. জহিরুল ইসলাম।

এ ছাড়া ঢাবির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরের ডেটা এন্ট্রি অপারেটর ফারুক হোসেনকে চাকরি দেওয়ার কথা বলে দামি মোবাইল ফোন কিনতে নগদ টাকা দাবি করেন তৈয়ব আলী। টাকা না দিলে ক্ষতি করার হুমকি দেন তিনি। এ অভিযোগে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বরাবর চিঠি দিয়েছেন ফারুক। রেজিস্ট্রার ভবনের সূত্র আরও জানায়, ২০১৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরির কথা গোপন রেখে ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি ও সলিমুল্লাহ মুসলিম হল শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পরিচয় দিয়ে মা-বাবার অসুস্থতার মানবিক কারণ দেখিয়ে ভাতা পেতে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে ভাতা নেন তৈয়ব আলী। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ছাত্রলীগের বদিউজ্জামান সোহাগ ও সিদ্দিকী নাজমুল আলমের কমিটির ধর্মবিষয়ক উপসম্পাদক থাকলেও সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের কোনো পদে ছিলেন না তৈয়ব।

এ ছাড়া ঢাবির কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদের ব্যক্তিগত গাড়ি রাখার জায়গায় মোটরসাইকেল রাখা, তাঁর (কোষাধ্যক্ষ) চালক ও রেজিস্ট্রার ভবনের নিরাপত্তাপ্রহরীর সঙ্গে দুর্ব্যবহারসহ ওপরের সব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বারবার কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হলে কোনো উত্তর দেননি তৈয়ব আলী। এসব অনিয়মের কথা উল্লেখ করে তৈয়ব আলীর পদসহ অন্যত্র বদলি করার সুপারিশ করে সেপ্টেম্বরের ১২ উপাচার্য আখতারুজ্জামান বরাবর চিঠি দিয়েছেন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসের ১৩৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী। 
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তৈয়ব আলী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সম্প্রতি দুদক অফিস থেকে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বাহালুল হক চৌধুরীকে তলব করা হয়েছে। তিনি (বাহালুল) মনে করেছেন, আমি তথ্য দিয়েছি তাই আমার বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছে। আমি এসব অভিযোগের সঙ্গে জড়িত নই। তাই আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনে আমাকে ফাঁসানোর পাঁয়তারা করা হচ্ছে।’

তবে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বাহালুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে একাধিকবার কারণ দর্শানোর নোটিশ দিলে সে (তৈয়ব আলী) তোয়াক্কা করেনি। অফিসের সব স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী তাঁর অন্যায়, অপকর্মের কারণে অস্বস্তি বোধ করছেন। তাই সবাই মিলে উপাচার্য বরাবর চিঠি দিয়েছে।’

সার্বিক বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বলেন, ‘পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসের একজন কর্মকর্তার আচরণ, কার্যকলাপ ও কর্মপরিবেশ নষ্ট করার অভিযোগ এনে ওই দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাঁর সঙ্গে কাজ করতে বিব্রতবোধ করছেন। এ নিয়ে তারা আমার কাছে একটি চিঠিও দিয়েছে। আমি রেজিস্ট্রারকে এ বিষয়ে একটি নোট তৈরি করতে বলেছি।’

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রবীর কুমার সরকার বলেন, ‘আমরা অভিযোগগুলো যাচাই-বাছাই করে নোট তৈরি করছি ৷ আশা করি দু-এক দিনের মধ্যে উপাচার্যের কাছে নোট পাঠাতে পারব।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চট্টগ্রামে নিহত আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে নিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে গুজব

ববির ট্রেজারার সাবেক সেনা কর্মকর্তাকে যোগদানে বাধা

বিগত সরকারে বঞ্চিত কর্মকর্তাদের ক্ষতিপূরণ দিতেই যাবে শতকোটি টাকা

দুই দিনে ৭ ব্যাংককে ২০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা দিল বাংলাদেশ ব্যাংক

কোনো পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেননি রয়টার্সের প্রতিবেদক: সিএমপি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত