Ajker Patrika

এমআইএসটি ভর্তি প্রস্তুতি: ছাড় দেওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে

মুসাররাত আবির
এমআইএসটি ভর্তি প্রস্তুতি: ছাড় দেওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে

ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষা শুরু হচ্ছে মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বা এমআইএসটি দিয়ে। এটি রাজধানী ঢাকার মিরপুর ক্যান্টনমেন্টে অবস্থিত সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। যেহেতু এমআইএসটির পরীক্ষা শুরু হতে আর বেশি দিন বাকি নেই, তাই আজকে আমরা শেষ সময়ে কীভাবে একটা গোছানো প্রস্তুতি নেওয়া যায়, তা নিয়ে আলোচনা করব। শুধু এমআইএসটি নয়, যেকোনো ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রস্তুতির জন্য এ বিষয়গুলো জানা আবশ্যক।

প্রশ্নের মানবণ্টন
উচ্চতর গণিত (৪০), পদার্থবিজ্ঞান (৩০), রসায়ন (২০) ও ইংরেজি (১০)—এ চারটি বিষয়ে মোট ১০০ নম্বরের পরীক্ষা হয়ে থাকে। এর জন্য বরাদ্দ থাকে ২ ঘণ্টা। যারা ‘এ’ এবং ‘বি’ (স্থাপত্য) দুই ইউনিটেই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবেন তাঁদের আরও ২ ঘণ্টা করে সর্বমোট ৪ ঘণ্টা পরীক্ষা দিতে হবে। 

পড়াশোনার খরচ
সরকারি কর্মচারীদের সন্তানের জন্য চার বছরের বিএসসি ডিগ্রির খরচ ৩,১৪৬৫০ টাকা (নারী) ও ৩,১৫১৫০ টাকা (পুরুষ)। আর বেসরকারি কর্মচারীদের সন্তানের জন্য খরচ ৩,৮৬৬৫০ টাকা (নারী) ও ৩,৮৭০৫০ টাকা (পুরুষ)। এ ছাড়া এখানে বৃত্তি ও স্টাইপেন্ডের ব্যবস্থাও রয়েছে। 

প্রস্তুতি হোক গোছানো 
আমি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রস্তুতি এইচএসসির পরপর নেওয়া শুরু করলেও, নিজের পড়াটা কলেজে থাকতেই গুছিয়ে এনেছিলাম। উচ্চমাধ্যমিকের সময় প্রতিটি অধ্যায় পড়া শেষ করে সেই অধ্যায়সম্পর্কিত গাণিতিক প্রশ্নগুলোর সমাধান করতাম। বিশেষ করে যেগুলোর আগে ভর্তি পরীক্ষায় চলে এসেছে, সেগুলো। এর জন্য আমি গাণিতিক পদার্থবিজ্ঞান, গাণিতিক রসায়ন বইগুলোর সাহায্য নিতাম। এ ছাড়া বুয়েট প্রশ্নব্যাংকটাও উল্টেপাল্টে সমাধান করার চেষ্টা করতাম। আর পরীক্ষার প্রস্তুতি পর্যায়ে প্রচুর অনুশীলন করতে হবে, অনুশীলন করতে করতে আয়ত্তে নিয়ে আসতে হবে। 

বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতি
গণিত: গণিতের জন্য কামরুজ্জামান স্যারের বই সমাধান করতে পারো। তবে একসঙ্গে দুজন লেখকের বই সমাধানের চেষ্টা করো না। প্রথমে একটা বইকে মূল বই হিসেবে ধরে সব প্রশ্ন সমাধান করো। আগে উদাহরণ, এরপর অনুশীলন সমাধান। পর্যাপ্ত পরিমাণ সময় পড়াশোনার পেছনে দিয়ে একাধিক বই না ঘেঁটে একটাই ভালোমতো পড়। এরপর সময় থাকলে আরেকটা বই দেখতে পার। দেখা যাবে প্রথম বইয়ের অনেক গাণিতিক সমস্যার সঙ্গেই দ্বিতীয় বইয়ের মিল রয়েছে। সেই অঙ্কগুলো বাদ দাও। নতুন ধরনের কোনো সমস্যা পেলে সেটা নোট খাতায় লিখে রাখ। এই খাতা ভর্তি পরীক্ষা শেষ হওয়া পর্যন্ত সংরক্ষণ করো। এভাবেই দুই-তিনটা বই থেকে অঙ্ক সমাধান করে ফেলতে পারবে। নোট করার গুরুত্ব হচ্ছে, পরীক্ষার আগে নতুন করে অঙ্ক সমাধান করতে হয় না। খাতা খুলে দেখলেই হয়। আর পরীক্ষার সময় তিন-চারটা বই ঘাঁটাও লাগে না। উচ্চমাধ্যমিকে বইয়ের যে অঙ্কগুলো বারবার বোর্ড এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় বিভিন্ন বছর এসেছে, সেই অঙ্কগুলো এমআইএসটি ভর্তি পরীক্ষার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। যেমন—যোগজীকরণ, অন্তরীকরণ, ভেক্টর, বিন্যাস ও সমাবেশ, সরলরেখা, বৃত্ত, কোনিক, দ্বিপদী উপপাদ্য, ত্রিকোণমিতি, স্থিতিবিদ্যা ও গতিবিদ্যা। 

পদার্থবিজ্ঞান: এর জন্য আমি ইসহাক স্যারের পদার্থবিজ্ঞান প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র বই পড়েছিলাম। বইয়ের অনুশীলনের অনেকগুলো ভালোমতো করবে। পদার্থবিজ্ঞানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়গুলো হচ্ছে—ভেক্টর, গতিবিদ্যা, নিউটনীয় বলবিদ্যা, কাজ ক্ষমতা শক্তি, তরঙ্গ, সরল ছন্দিত স্পন্দন, চল তড়িৎ, স্থির তড়িৎ, জ্যামিতিক আলোকবিজ্ঞান, ভৌত আলোকবিজ্ঞান। 

রসায়ন: রসায়নের জন্য আমি মূল বই হিসেবে হাজারী নাগ ও কবির স্যারের বই পড়তাম। রসায়নের জন্য বিভিন্ন অধ্যায়ের গাণিতিক সমস্যাগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ। তা ছাড়া বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিক্রিয়া এবং যৌগের নাম খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণ, রাসায়নিক প্রক্রিয়া ও পরীক্ষায় আসে। সুতরাং বইয়ে যত ধরনের গাণিতিক সমস্যা আছে, সবগুলো সমাধান করো আর গুরুত্বপূর্ণ বিক্রিয়াগুলো একটা খাতায় নোট করো। আমি প্রতিটি বিষয়ের জন্যই আলাদা নোট খাতা তৈরি করেছিলাম। 

ইংরেজি: ইংরেজির জন্য বিগত বছরগুলোর বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্ন বা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় চলে আসা ইংরেজি প্রশ্নগুলো পড়লেই হবে। 

শেষ সময়ের প্রস্তুতি 
পরীক্ষার আগের দিনগুলোতে যেটা পড়তে ভালো লাগত সেটাই পড়তাম। যতটা সম্ভব কম দুশ্চিন্তা করে পড়াগুলো আয়ত্তে রাখার চেষ্টা করতাম। এ সময় মনে হয়, আগের পড়া সব ভুলে যাচ্ছি। তাই একটু একটু করে রিভাইজ দিতাম। পরীক্ষার আগের রাতে পর্যাপ্ত ঘুম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সব বিষয়ের প্রতিটি অধ্যায়ের জন্য প্রয়োজনীয় সূত্রগুলো এক জায়গায় লিখে রাখবে। পরীক্ষার আগে যাতে একবার চোখ বুলিয়ে গেলেই হয়, এমন একটা দখল পড়ার মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। আর পরীক্ষার প্রস্তুতি পর্যায়ে প্রচুর অনুশীলন করতে হবে, অনুশীলন করতে করতে আয়ত্তে নিয়ে আসতে হবে। এখানে চান্স পাওয়ার জন্য ন্যূনতম ৬০-৭০ উত্তর করতেই হবে। পরীক্ষায় ৮০ শতাংশ প্রশ্নের উত্তর একনাগাড়ে দিতে পারবে, যদি প্রস্তুতি ভালো হয় আর বেসিক ক্লিয়ার থাকে। বাকি ২০ শতাংশে একটু প্যাঁচ থাকে। তবে সময় ব্যবস্থাপনা নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না। একটা প্রশ্নের উত্তর না পারলে সেটা নিয়ে সময় নষ্ট করা যাবে না। ছাড়তে পারার মানসিকতা থাকতে হবে। অনেকে ‘আমি কেন এ প্রশ্নটা পারছি না’—এটা চিন্তা করতে গিয়ে পুরো পরীক্ষাটাই খারাপ দিয়ে ফেলে। মাথায় রাখবে, ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পরীক্ষা দিতে গেলে প্রশ্ন ছেড়ে আসার মানসিকতা থাকতে হবে। তাই বলে সব ছেড়ে আসা যাবে না! 

সবশেষে এটাই বলব, এমনভাবে পড়াশোনা করো, যাতে ফলাফল হাতে পাওয়ার পর মনে না হয়, ‘ইশ, আরেকটু পড়লেই চান্স পেয়ে যেতাম!’ 
ওয়েবসাইট: https://mist.ac.bd

শেখ যারীন তাসনিম মীম, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, প্রথম স্থান অধিকারী, শিক্ষাবর্ষ ২০১৯-২০ 

অনুলিখন: মুসাররাত আবির

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতের বিপক্ষে সেমির আগেই ধাক্কা খেল অস্ট্রেলিয়া

পরমাণু শক্তিধর হতে চেয়েছিল তাইওয়ান, সিআইএ এজেন্টের বিশ্বাসঘাতকতায় স্বপ্নভঙ্গ

এলপি গ্যাস, তেল, আটাসহ বেশ কিছু পণ্যে ভ্যাট তুলে দিল এনবিআর

চ্যাম্পিয়নস ট্রফি: রিজার্ভ-ডেতেও সেমিফাইনাল না হলে হৃদয়বিদারক সমীকরণ

অমর্ত্য সেনের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় যা বললেন জামায়াতের আমির

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত