কিছুটা অর্জন, অনেকটা হতাশা

খায়রুল বাসার নির্ঝর, ঢাকা
প্রকাশ : ২৮ ডিসেম্বর ২০২১, ০৪: ২২
আপডেট : ২৯ ডিসেম্বর ২০২১, ১২: ২৬

গত এক বছরের ফলাফল টানলে, দেশের নাটকপাড়ায় উল্লেখযোগ্য অর্জন সামান্য। বছরের প্রথম কয়েক মাস করোনার কবলে পড়ে টিভি ইন্ডা‌স্ট্রিকেও ভুগতে হয়েছে। তবে সেটার সামাল দেওয়া গেছে দ্রুতই। পরি‌স্থি‌তি কিছুটা স্বাভা‌বিক হতেই বে‌শির ভাগ শিল্পীরা কাজ শুরু করেন। অপূর্ব, নিশো, মেহজাবীনদের মতো জন‌প্রিয় তারকারা বছরজুড়ে তুলনামূলক কম কাজ করেছেন। তবে সে অভাব পূরণ ক‌রতে উঠে এসেছেন অনেক নতুন মুখ।

নাটক প্রচারমাধ্যমের দিক থেকে টি‌ভি চ্যানেলের বিকল্প হিসেবে ইউটিউব আরও শক্তভাবে দাঁড়িয়ে গেছে গত এক বছরে। ফলে বছর শেষে প‌রি‌স্থি‌তি এমন হয়েছে—আগে যে তারকারা ‘ইউটিউব নাটক’ শুনলে শি‌ডিউল দিতেন না, তাঁরাই এখন টি‌ভির চেয়ে ‘ইউটিউব নাটক’-এ সময় দিচ্ছেন বে‌শি। কারণ, বাজেটের দিক দিয়ে দু‌টি মাধ্যমের মধ্যে ব্যবধান বেড়েছে।

এক বছর আগেও টি‌ভি চ্যানেল থেকে এক‌টি একক নাটকের জন্য যে বাজেট পাওয়া যেত, সেই বাজেটের প‌রিমাণটা এখন আরও কমেছে। উল্টো দিকে প্রোডাক্ট রিপ্লেসমেন্ট, ব্র্যান্ডিং, স্পন্সর ইত্যাদি ব্যবসায়িক কৌশল খা‌টিয়ে নাটকের দাম বা‌ড়িয়েছে ইউটিউব চ্যানেলগুলো। এক ঘণ্টার এক‌টি নাটকের জন্য এ মাধ্যমে ৬-৮ লাখ টাকাও বাজেট হাঁকাচ্ছেন অনেকে। ফলে শিল্পীরা পা‌রিশ্রমিকও পাচ্ছেন বে‌শি। অথচ, টি‌ভি চ্যানেলগুলো সর্বোচ্চ দিতে পারছে দুই-আড়াই লাখ টাকা।

শিল্পী নির্বাচনে টি‌ভি চ্যানেলের উদারতা বেড়েছে গত এক বছরে। আগে যেখানে দেখা হতো ‘নাটকে তারকা কে আছেন’, তুলনায় এখন গল্পটা গুরুত্ব পাচ্ছে বে‌শি। জন‌প্রিয় অভিনয়‌শিল্পী না থাকলেও, গল্প-অভিনয় মি‌লিয়ে নাটকের মান ভালো হলে সে‌টি কিনতে আগ্রহী হচ্ছে টি‌ভি চ্যানেল। এই প্রবণতা নির্মাতাদের কাজকে আরও সহজ করে দিয়েছে। জনপ্রিয় শিল্পীদের শিডিউল পেতে নাটকের সেটে নির্মাতাদের ধরনা দেওয়ার চিত্র বছর শেষে বদলেছে।

নাটকের অনেক অভিনয়‌শিল্পীর বিরুদ্ধে ‘সি‌ন্ডিকেট’-এর যে অভিযোগটা ছিল, সেটা কিছুটা কমেছে। বে‌শির ভাগ অভিনেতাই আগে নিজেদের সুবি‌ধা অনুযায়ী না‌য়িকা নির্বাচন করতেন। নির্মাতাকে বাধ্য করতেন তাঁকে কাস্ট করতে। শুধু না‌য়িকা নন; নাট্যকার, চিত্রগ্রাহক, মেকআপম্যান, প্রোডাকশন ম্যানেজার—সবই নিতে হতো অভিনেতার ম‌র্জি অনুযায়ী। এ প‌রি‌স্থি‌তি এখনো চলছে, তবে আগের মতো অত তীব্র আকারে নয়। ‘‌সি‌ন্ডিকেটবাজ’ তারকারা হয়তো কিছুটা হলেও বুঝতে পেরেছেন, দলবা‌জি করে নয়, টিকে থাকার একমাত্র উপায়—ভালো কাজ।

সারা বছর জন‌প্রিয় শিল্পীদের উপস্থি‌তি মিস করেছে ছোট পর্দা। মোশাররফ ক‌রিম, অপূর্ব, নিশো, নুসরাত ইমরোজ তিশা, মেহজা‌বীনের মতো জন‌প্রিয় তারকারা নানা কারণে নাটকে অভিনয় ক‌মিয়ে দিয়েছেন। কেউ ব্যক্তিগত কার‌ণ দে‌খিয়ে, কেউ ওয়েব প্ল্যাটফর্মের কাজে বে‌শি আগ্রহী হয়ে। ওয়েব প্ল্যাটফর্ম এদেশের টি‌ভি চ্যানেলের জন্য স্পষ্টতই একটা হুম‌কি হিসেবে হা‌জির হয়ে‌ছিল। বছর শেষে সে ভয় কা‌টিয়ে উঠতে পারে‌নি টি‌ভি চ্যানেলগুলো। অনুষ্ঠানের বৈ‌চিত্র্য খুব একটা চোখে পড়ে‌নি। আটকে ছিল একই ঘেরাটোপে। ‘ইত্যাদি’ ছাড়া আর কোনো ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান তেমন আলোচনায় আসেনি।

আর নাটকের মান? কতটা বদলাল টি‌ভিনাটক? এক ঘণ্টার নাটকে অনেক নিরীক্ষাধর্মী কাজ হয়েছে গত এক বছরে। যেমন ‘মরণোত্তম’, ‘শেষটা অন্য রকম ছিল’, ‘আলো’, ‘মায়ের ডাক’, ‘যদি আমি না থাকি’, ‘গরম ভাতের গন্ধ’, ‘২১ বছর পরে’, ‘সাহসিকা’, ‘পুনর্জন্ম’ ইত্যাদি। গতানুগ‌তিক প্রেম থেকে বেরিয়ে নানা ধরনের গল্প বলার চেষ্টা করেছেন অনেকে। পাশাপাশি ‘সস্তা’ কমেডিরও বাড়াবা‌ড়ি ‌ছিল টি‌ভি ও ইউটিউব চ্যানেল—দুই মাধ্যমের নাটকেই। একেবারেই ব্যর্থ ধারাবা‌হিক নাটক। এদেশের টি‌ভি চ্যানেলের ধারাবা‌হিক নাটকের সঙ্গে দর্শকদের সম্পৃক্ততা কয়েক বছর আগেও কম ছিল। চিত্রটা বদলায়‌নি এ বছরও।

দুই ঈদ অনুষ্ঠানে টিভি পর্দায় স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র প্রচার করে আলোচনায় ছিল দীপ্ত টিভি। একঝাঁক নতুন নির্মাতা তাঁদের নির্মাণশৈলী দিয়ে চমক দেখিয়েছেন।

সব‌ মিলে কিছুটা অর্জন, প্রত্যাশা আর অনেকটা হতাশা নিয়ে সারা বছর খুঁড়িয়ে চলেছে দেশীয় টি‌ভিনাটক। এখনই উদ্যোগ না নিলে নাটকের সঙ্গে দর্শকদের যে সংযোগ, সেটা আরও বিচ্ছিন্ন হবে—এ আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

সালতামামির অন্যান্য আয়োজন:

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত