নৌপথে বাধা ডুবোচর

শিমুল চৌধুরী, ভোলা
প্রকাশ : ৩০ নভেম্বর ২০২১, ০৯: ১৩
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২১, ১৭: ৫৭

শীত শুরু হয়ে গেছে। নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। ভোলার নদ-নদীর বুকে জেগে উঠছে অসংখ্য ডুবোচর। এ কারণে ভোলার অভ্যন্তরীণ নৌপথে চলাচলকারী নৌযান চলাচল ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও যাত্রীরা। দ্রুত খনন (ড্রেজিং) করে ডুবোচরগুলো অপসারণ করার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

ডুবোচরের কারণে নাব্য সংকট দেখা দিলে ভোলা-বরিশাল, ভোলা-ঢাকা, ভোলা-লক্ষ্মীপুর, মনপুরা-ঢাকা-হাতিয়াসহ অন্তত ২০টি নৌপথে শীত মৌসুমে ঝুঁকি নিয়ে নৌযান চলাচল করতে হবে বলে জানিয়েছেন নৌযান কর্তৃপক্ষ। এতে ভোগান্তিতে পড়তে হবে নৌপথে চলাচলকারী হাজারো যাত্রী ও লঞ্চ শ্রমিকদের। তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, নাব্যতা রোধে বিআইডব্লিউটিএর পক্ষ থেকে ড্রেজিং করা হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভোলার সঙ্গে রাজধানীসহ সারা দেশের যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম হচ্ছে নৌপথ। জেলার ২০টি নৌপথে প্রতিদিন রাজধানী ও বরিশালসহ বিভিন্ন পথে অর্ধশতাধিক লঞ্চ চলাচল করছে। এর মধ্যে ভোলা থেকে বরিশাল চলাচল করছে অন্তত ১৬ টি। এ দ্বীপ জেলা থেকে হাজার হাজার যাত্রী লঞ্চে করে দেশের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত করে থাকেন। কিন্তু শীতের শুরুতে নদীর পানি কমে যায়। তখন নদীতে অসংখ্য ডুবোচর জেগে ওঠে। ওই সময় নৌযান চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়। নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যে যেতে পারছে না নৌযানগুলো। ফলে ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে সাধারণ লঞ্চ যাত্রীদের। ভোলার খাল, কালিগঞ্জ, দাড়োগার খাল, দৌলতখান, মনপুরা ও হাতিয়া রুটের বদনার চরসহ বেশ কয়েকটি পয়েন্টে অভ্যন্তরীণ রুটে নদীতে নাব্য সংকটের কারণে হুমকির মুখে পড়েছে এই অঞ্চলের নৌপথ।

ভোলা-বরিশাল লঞ্চে নিয়মিত চলাচলকারী সাধারণ লঞ্চ যাত্রী মিজানুর রহমান, মুজিযা রহমান, অনুসহ কয়েকজন যাত্রী জানান, শীত মৌসুমে ভোলার যাত্রীবাহী লঞ্চগুলো ডুবোচরে আটকে যায়। ফলে প্রায় ৩৮ কিলোমিটার নদী পথ পাড়ি দিতে অনেক সময় ৩ ঘণ্টা থেকে ৪ ঘণ্টা লেগে যায়। অথচ ডুবোচর না থাকলে ভোলা থেকে বরিশাল যেতে সময় লাগে মাত্র ২ ঘণ্টা থেকে আড়াই ঘণ্টা।

এ বিষয়ে ভোলা-বরিশাল নৌপথে চলাচলকারী যাত্রীবাহী লঞ্চ সঞ্চিতার চালক (মাস্টার) সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ভোলা-বরিশাল নৌপথে অসংখ্য ডুবোচর রয়েছে। বিশেষ করে শীত মৌসুমে বরিশাল অংশের টুঙ্গিবাড়িয়া এলাকায় পানি কম থাকে। তখন বরিশাল মুখে অন্য লঞ্চকে সাইড দিতে সমস্যা হয়। আঁকাবাঁকা ট্যাগের (ডুবোচর) কারণে লঞ্চ ঘোরানো যায় না। তাই, পুরোপুরি শীত পড়ার আগেই ভোলা-বরিশাল কিংবা ভোলা-ঢাকা নৌ পথের ডুবোচরগুলো অবিলম্বে কাটা না হলে শীত মৌসুমে লঞ্চ চালানো কঠিন হয়ে পড়বে।’

ভোলা নৌ-বন্দরের সহকারী পরিচালক শহিদুল ইসলাম রোববার দুপুরে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নদীর নাব্য রোধে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যেই খনন কার্যক্রম শুরু করেছে।’ তিনি বলেন, ‘ভোলা সদর উপজেলার ভেদুরিয়া ফেরিঘাটের কাছে খনন কাজ চলছে। তবে একটি এলাকায় খনন করতে গিয়ে স্থানীয়রা বাধার মুখে পড়ে খনন কাজ বন্ধ রয়েছে। আশা করা যায়, খনন কাজ শেষ হলে আর এই সমস্যা থাকবে না। অচিরেই তা স্বাভাবিক হবে।’

বিআরটিএ’র ড্রেজিং বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী সাইদুল শরিফ জানান, একটি ড্রেজার দিয়ে ভেদুরিয়া ফেরিঘাট এলাকায় ড্রেজিং কাজ চলছে। আরেকটি ড্রেজার দিয়ে ভোলা খালের পশ্চিম ইলিশা ইউনিয়নের জাঙ্গালিয়া মুন্সিরহাট এলাকায় খনন শুরু করলে স্থানীয়রা ড্রেজিং কাজে বাধা দেওয়ায় ড্রেজিং কাজ আপাতত বন্ধ রয়েছে। স্থানীয়দের দাবি, সেখানে ড্রেজিং করা হলে নদীর পাড়ের ক্ষতি হবে। নদীর পাড় ভেঙে যাবে।’

তিনি বলেন, ‘বিষয়টি ভোলার জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। সদর ইউএনওর সঙ্গে মিটিংও হয়েছে। তাঁরা পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তাসহ সরেজমিন পরিদর্শন করে পরবতী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে নদীর তলদেশে পলি জমে ডুবচরের সৃষ্টি হচ্ছে। এর বিপরীতে কমবেশি ড্রেজিং করছে বিআইডব্লিউটিএ।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত