রাশেদ রাব্বি, ঢাকা
সরকারি হাসপাতালে বৈকালিক সেবা পেতে অতিরিক্ত ৩৩ শতাংশ অর্থ গুনতে হবে রোগীদের। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ইউজার ফি বাবদ এই অর্থ নেওয়া হবে। ৭ মে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে এমন প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে। প্রস্তাবে ৪৭০ ধরনের প্রচলিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও সেবামূল্যের ওপর অতিরিক্ত ৩৩ শতাংশ মূল্য ধার্য করা হয়েছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ খাতে আরও বাড়তি অর্থ নেওয়া হলে নিম্ন আয়ের মানুষ অর্থাভাবে সেবা নেওয়া থেকে বিরত থাকবে। সামগ্রিকভাবে সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশীদ-ই-মাহবুব আজকের পত্রিকাকে বলেন, রাষ্ট্র যদি তার নাগরিকদের নির্যাতন করে, তাহলে কী করার আছে! বৈকালিক সেবার নামে যে ব্যবস্থার প্রচলন হচ্ছে, তাতে স্বাস্থ্য খাতে সুশাসন বিঘ্নিত হবে। এতে জনগণ চিকিৎসা-বিভ্রান্তির মধ্যে পড়বে। সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য-ব্যয় আরও বাড়বে। সেবামূল্যের ভারে রোগীরা সেবা নেওয়া থেকে বিরত থাকবে।বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল হাসান খান বলেন, চিকিৎসাসংক্রান্ত পরীক্ষা সরকারি হাসপাতালে বিনা মূল্যে দেওয়া উচিত। অনেক মূল্যবান পরীক্ষা বিনা মূল্যে দেওয়া সম্ভব নয়, সে ক্ষেত্রে কিছু ফি নেওয়া যেতে পারে। তবে সেটির যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রস্তাবে যা আছে
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবের কাছে পাঠানো ‘ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিস হিসেব পরিচালনা পদ্ধতি অনুমোদন প্রসঙ্গে’ শীর্ষক চিঠিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলেছে, চলতি বছরের ৩০ মে থেকে দেশের ৫১টি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে (১২টি জেলা সদর হাসপাতাল এবং ৩৯টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স) এই কর্মসূচি পাইলট আকারে চলমান আছে।এই সেবার আর্থিক প্রস্তাবের একটি খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। খসড়া অনুমোদিত হলে দেশের সব স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এই সেবামূল্য সংযোজিত হবে।
ৎস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. শেখ দাউদ আদনানের সই করা চিঠিতে বিদ্যমান সেবামূল্যের সঙ্গে অতিরিক্ত ৩৩ শতাংশ অর্থ যুক্ত করে সেবামূল্য আদায় করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, এই অর্থ হাসপাতালে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে পদমর্যাদা অনুসারে বণ্টন করা হবে। রোগীদের কাছ থেকে আদায় করা অতিরিক্ত ৩৩ শতাংশ অর্থের ২৪ শতাংশ পাবেন অধ্যাপক বা বিভাগীয় প্রধানেরা। ২০ শতাংশ পাবেন সহযোগী ও সহকারী অধ্যাপকেরা। ১৬ শতাংশ পাবেন মেডিকেল অফিসাররা। নার্স ও টেকনোলজিস্টরা পাবেন ২৮ শতাংশ। চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা পাবেন ১২ শতাংশ। উল্লিখিত পদে কোনো চিকিৎসক, কর্মকর্তা বা কর্মচারী না থাকলে নির্দিষ্ট পদের প্রাপ্য অংশ একই পদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে বণ্টন করা হবে।
চেম্বারের কনসালট্যান্সি বা পরামর্শ সেবার বিপরীতে প্রাপ্য অর্থ পুরোটাই পাবেন বিশেষজ্ঞ বা মেডিকেল অফিসার। কনসালট্যান্সি অথবা সার্জারি বিভাগের সহায়তাকারীরা (২য় ও ৩য় শ্রেণি একত্রে) প্রাপ্য অর্থের ৩৪ শতাংশ পাবেন এবং অবশিষ্ট ৩৪ শতাংশ পাবেন ৪র্থ শ্রেণির কর্মীরা।
এই প্রস্তাবের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক এ বি এম খুরশীদ আলম কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (হাসপাতাল) নাজমুল হক খানকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।
প্রস্তাবে ১৭ ধরনের এক্স-রে ও ইমেজিং পরীক্ষা, দুই ধরনের আলট্রাসনোগ্রাম, ১০ ধরনের সিটি স্ক্যান, দুই ধরনের এমআরআই, ৪৫ ধরনের সিআর ও ডিজিটাল এক্স-রে, ২৬ ধরনের ক্লিনিক্যাল প্যাথলজি; ৪২ ধরনের বায়োকেমিস্ট্রি, ক্লিনিক্যাল কেমিস্ট্রি, এন্ড্রোক্রাইন পরীক্ষা; ৯ ধরনের রেডিওথেরাপি, ১৩ ধরনের রক্ত পরিসঞ্চালন পরীক্ষা, ১২ ধরনের হেমোডায়ালাইসিস, ৯৪ ধরনের মাইক্রোবায়োলজি ও ইমিউনোলজি পরীক্ষা, ১৯ ধরনের হিস্টোপ্যাথলজি পরীক্ষা, ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগের ১৮ ধরনের পরীক্ষা ও থেরাপি, ১৯ ধরনের কার্ডিওলজি ইনভেস্টিগেশন, ক্যানসারবিষয়ক ৫২ ধরনের পরীক্ষাসহ অ্যাম্বুলেন্সের তিন ধরনের ভাড়ার বিদ্যমান মূল্যের ওপর ৩৩ শতাংশ অতিরিক্ত মূল্য প্রস্তাব করা হয়েছে।
নতুন ফি যা দাঁড়াবে
এই প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে উপজেলা পর্যায়ে একটি ১৪×১৪ এক্স-রে করাতে রোগীকে ৭০ টাকার বদলে দিতে হবে ৯৩ টাকা। অনেক ক্ষেত্রে খুচরা না থাকার অজুহাতে ১০০ টাকাই রাখা হবে। একইভাবে ২২০ টাকার আলট্রাসনোগ্রাফি হবে ২৯৩ টাকা; আড়াই হাজার টাকার চেস্ট সিটি স্ক্যানে গুনতে হবে ৩ হাজার ৩২৫ টাকা। এমআরআই করাতে বাড়তি লাগবে ৯৯০ টাকা। সিটি গাইডেড এফএনএসির জন্য ৬৬০ টাকা বেশি লাগবে। সাধারণ ওয়ার্ডের রোগীর রক্তের স্ক্রিনিং, গ্রুপিং ও ক্রস ম্যাচিং পরীক্ষায় দিতে হবে ব্যাগপ্রতি ৩৩৩ টাকা; আগে লাগত ২৫০ টাকা। সিটি এনজিওগ্রামে বাড়তি দিতে হবে ৯৯০ টাকা। এনজিওপ্লাস্টি (হার্টে রিং পরানো) করাতে সার্ভিস চার্জ বেশি লাগবে ৬৬০ টাকা। ওপেন হার্ট সার্জারিতে ১ হাজার ৬৫০ টাকা বাড়তি লাগবে। এ ছাড়া অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া বেশি লাগবে কিলোমিটারপ্রতি ৩ টাকা।
স্বাস্থ্য খাতও বাণিজ্যিকীকরণ
সরকারি হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষা বাবদ ফি আগে কর্তৃপক্ষের কাছে জমা হতো। ১৯৮৪ সালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক স্মারকে জানায়, রোগীদের দেওয়া টাকার ৫০ শতাংশ সংশ্লিষ্ট বিভাগের চিকিৎসক ও কর্মচারীদের মধ্যে পদ অনুযায়ী বণ্টন করতে হবে। তখন কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়, মূল বেতনের চেয়ে ইউজার ফি থেকে পাওয়া অর্থের পরিমাণ বেশি। এক রিট মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ২০১০ সালে বণ্টন স্থগিত হয়ে যায়। পরে আপিল বিভাগের রায়ে কিছু ক্ষেত্রে বণ্টন পুনর্বহাল হয়।নতুন প্রস্তাব অনুমোদন পেলে বৈকালিক সেবায় ৩৩ শতাংশ বাড়তি ইউজার ফির পুরোটাই পাবেন স্বাস্থ্যকর্মীরা।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগে বিনা ভাড়ার শয্যায় ভর্তি হওয়া রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা হতো বিনা মূল্যে। একপর্যায়ে তাদের কাছ থেকেও ইউজার ফি নেওয়া শুরু হয়। বৈকালিক সেবায় বাড়তি ফি নেওয়া হলে নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর বোঝা আরও বাড়বে।
নতুন প্রস্তাব সম্পর্কে জনস্বাস্থ্য সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ডা. ফয়জুল হাকিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি, সরকারি হাসপাতাল বাণিজ্যিকীকরণ করছে সরকার। পরীক্ষার ফি ৩৩ শতাংশ বাড়ানোর অর্থ জনগণের ওপর স্বাস্থ্য-ব্যয়ের বোঝা আরও বাড়ানো। পৃথিবীর কোনো দেশেই চিকিৎসা পেতে দেশের মানুষের ৭০ শতাংশ টাকা পকেট থেকে ব্যয় করতে হয় না। সরকার একসময় বিশ্বব্যাংকের পরামর্শে দেশের সেবা খাত বাণিজ্যিকীকরণ করেছিল; এখন স্বাস্থ্য খাতেও বাণিজ্যিকীকরণ শুরু করেছে।’
অধ্যাপক কামরুল হাসান খান বলেন, যেহেতু সরকারি হাসপাতাল লাভজনক প্রতিষ্ঠান নয়, তাই পরীক্ষার মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে, সেবামূল্য যেন রোগীদের ওপর বোঝা না হয়। বৈকালিক সেবার কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল স্বল্পমূল্যে রোগীদের সেবা দেওয়ার জন্য। অহেতুক ব্যয় বাড়ানো হলে সেই প্রত্যাশা পূরণ হবে না।
সরকারি হাসপাতালে বৈকালিক সেবা পেতে অতিরিক্ত ৩৩ শতাংশ অর্থ গুনতে হবে রোগীদের। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ইউজার ফি বাবদ এই অর্থ নেওয়া হবে। ৭ মে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে এমন প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে। প্রস্তাবে ৪৭০ ধরনের প্রচলিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও সেবামূল্যের ওপর অতিরিক্ত ৩৩ শতাংশ মূল্য ধার্য করা হয়েছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ খাতে আরও বাড়তি অর্থ নেওয়া হলে নিম্ন আয়ের মানুষ অর্থাভাবে সেবা নেওয়া থেকে বিরত থাকবে। সামগ্রিকভাবে সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশীদ-ই-মাহবুব আজকের পত্রিকাকে বলেন, রাষ্ট্র যদি তার নাগরিকদের নির্যাতন করে, তাহলে কী করার আছে! বৈকালিক সেবার নামে যে ব্যবস্থার প্রচলন হচ্ছে, তাতে স্বাস্থ্য খাতে সুশাসন বিঘ্নিত হবে। এতে জনগণ চিকিৎসা-বিভ্রান্তির মধ্যে পড়বে। সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য-ব্যয় আরও বাড়বে। সেবামূল্যের ভারে রোগীরা সেবা নেওয়া থেকে বিরত থাকবে।বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল হাসান খান বলেন, চিকিৎসাসংক্রান্ত পরীক্ষা সরকারি হাসপাতালে বিনা মূল্যে দেওয়া উচিত। অনেক মূল্যবান পরীক্ষা বিনা মূল্যে দেওয়া সম্ভব নয়, সে ক্ষেত্রে কিছু ফি নেওয়া যেতে পারে। তবে সেটির যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রস্তাবে যা আছে
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবের কাছে পাঠানো ‘ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিস হিসেব পরিচালনা পদ্ধতি অনুমোদন প্রসঙ্গে’ শীর্ষক চিঠিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলেছে, চলতি বছরের ৩০ মে থেকে দেশের ৫১টি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে (১২টি জেলা সদর হাসপাতাল এবং ৩৯টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স) এই কর্মসূচি পাইলট আকারে চলমান আছে।এই সেবার আর্থিক প্রস্তাবের একটি খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। খসড়া অনুমোদিত হলে দেশের সব স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এই সেবামূল্য সংযোজিত হবে।
ৎস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. শেখ দাউদ আদনানের সই করা চিঠিতে বিদ্যমান সেবামূল্যের সঙ্গে অতিরিক্ত ৩৩ শতাংশ অর্থ যুক্ত করে সেবামূল্য আদায় করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, এই অর্থ হাসপাতালে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে পদমর্যাদা অনুসারে বণ্টন করা হবে। রোগীদের কাছ থেকে আদায় করা অতিরিক্ত ৩৩ শতাংশ অর্থের ২৪ শতাংশ পাবেন অধ্যাপক বা বিভাগীয় প্রধানেরা। ২০ শতাংশ পাবেন সহযোগী ও সহকারী অধ্যাপকেরা। ১৬ শতাংশ পাবেন মেডিকেল অফিসাররা। নার্স ও টেকনোলজিস্টরা পাবেন ২৮ শতাংশ। চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা পাবেন ১২ শতাংশ। উল্লিখিত পদে কোনো চিকিৎসক, কর্মকর্তা বা কর্মচারী না থাকলে নির্দিষ্ট পদের প্রাপ্য অংশ একই পদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে বণ্টন করা হবে।
চেম্বারের কনসালট্যান্সি বা পরামর্শ সেবার বিপরীতে প্রাপ্য অর্থ পুরোটাই পাবেন বিশেষজ্ঞ বা মেডিকেল অফিসার। কনসালট্যান্সি অথবা সার্জারি বিভাগের সহায়তাকারীরা (২য় ও ৩য় শ্রেণি একত্রে) প্রাপ্য অর্থের ৩৪ শতাংশ পাবেন এবং অবশিষ্ট ৩৪ শতাংশ পাবেন ৪র্থ শ্রেণির কর্মীরা।
এই প্রস্তাবের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক এ বি এম খুরশীদ আলম কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (হাসপাতাল) নাজমুল হক খানকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।
প্রস্তাবে ১৭ ধরনের এক্স-রে ও ইমেজিং পরীক্ষা, দুই ধরনের আলট্রাসনোগ্রাম, ১০ ধরনের সিটি স্ক্যান, দুই ধরনের এমআরআই, ৪৫ ধরনের সিআর ও ডিজিটাল এক্স-রে, ২৬ ধরনের ক্লিনিক্যাল প্যাথলজি; ৪২ ধরনের বায়োকেমিস্ট্রি, ক্লিনিক্যাল কেমিস্ট্রি, এন্ড্রোক্রাইন পরীক্ষা; ৯ ধরনের রেডিওথেরাপি, ১৩ ধরনের রক্ত পরিসঞ্চালন পরীক্ষা, ১২ ধরনের হেমোডায়ালাইসিস, ৯৪ ধরনের মাইক্রোবায়োলজি ও ইমিউনোলজি পরীক্ষা, ১৯ ধরনের হিস্টোপ্যাথলজি পরীক্ষা, ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগের ১৮ ধরনের পরীক্ষা ও থেরাপি, ১৯ ধরনের কার্ডিওলজি ইনভেস্টিগেশন, ক্যানসারবিষয়ক ৫২ ধরনের পরীক্ষাসহ অ্যাম্বুলেন্সের তিন ধরনের ভাড়ার বিদ্যমান মূল্যের ওপর ৩৩ শতাংশ অতিরিক্ত মূল্য প্রস্তাব করা হয়েছে।
নতুন ফি যা দাঁড়াবে
এই প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে উপজেলা পর্যায়ে একটি ১৪×১৪ এক্স-রে করাতে রোগীকে ৭০ টাকার বদলে দিতে হবে ৯৩ টাকা। অনেক ক্ষেত্রে খুচরা না থাকার অজুহাতে ১০০ টাকাই রাখা হবে। একইভাবে ২২০ টাকার আলট্রাসনোগ্রাফি হবে ২৯৩ টাকা; আড়াই হাজার টাকার চেস্ট সিটি স্ক্যানে গুনতে হবে ৩ হাজার ৩২৫ টাকা। এমআরআই করাতে বাড়তি লাগবে ৯৯০ টাকা। সিটি গাইডেড এফএনএসির জন্য ৬৬০ টাকা বেশি লাগবে। সাধারণ ওয়ার্ডের রোগীর রক্তের স্ক্রিনিং, গ্রুপিং ও ক্রস ম্যাচিং পরীক্ষায় দিতে হবে ব্যাগপ্রতি ৩৩৩ টাকা; আগে লাগত ২৫০ টাকা। সিটি এনজিওগ্রামে বাড়তি দিতে হবে ৯৯০ টাকা। এনজিওপ্লাস্টি (হার্টে রিং পরানো) করাতে সার্ভিস চার্জ বেশি লাগবে ৬৬০ টাকা। ওপেন হার্ট সার্জারিতে ১ হাজার ৬৫০ টাকা বাড়তি লাগবে। এ ছাড়া অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া বেশি লাগবে কিলোমিটারপ্রতি ৩ টাকা।
স্বাস্থ্য খাতও বাণিজ্যিকীকরণ
সরকারি হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষা বাবদ ফি আগে কর্তৃপক্ষের কাছে জমা হতো। ১৯৮৪ সালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক স্মারকে জানায়, রোগীদের দেওয়া টাকার ৫০ শতাংশ সংশ্লিষ্ট বিভাগের চিকিৎসক ও কর্মচারীদের মধ্যে পদ অনুযায়ী বণ্টন করতে হবে। তখন কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়, মূল বেতনের চেয়ে ইউজার ফি থেকে পাওয়া অর্থের পরিমাণ বেশি। এক রিট মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ২০১০ সালে বণ্টন স্থগিত হয়ে যায়। পরে আপিল বিভাগের রায়ে কিছু ক্ষেত্রে বণ্টন পুনর্বহাল হয়।নতুন প্রস্তাব অনুমোদন পেলে বৈকালিক সেবায় ৩৩ শতাংশ বাড়তি ইউজার ফির পুরোটাই পাবেন স্বাস্থ্যকর্মীরা।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগে বিনা ভাড়ার শয্যায় ভর্তি হওয়া রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা হতো বিনা মূল্যে। একপর্যায়ে তাদের কাছ থেকেও ইউজার ফি নেওয়া শুরু হয়। বৈকালিক সেবায় বাড়তি ফি নেওয়া হলে নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর বোঝা আরও বাড়বে।
নতুন প্রস্তাব সম্পর্কে জনস্বাস্থ্য সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ডা. ফয়জুল হাকিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি, সরকারি হাসপাতাল বাণিজ্যিকীকরণ করছে সরকার। পরীক্ষার ফি ৩৩ শতাংশ বাড়ানোর অর্থ জনগণের ওপর স্বাস্থ্য-ব্যয়ের বোঝা আরও বাড়ানো। পৃথিবীর কোনো দেশেই চিকিৎসা পেতে দেশের মানুষের ৭০ শতাংশ টাকা পকেট থেকে ব্যয় করতে হয় না। সরকার একসময় বিশ্বব্যাংকের পরামর্শে দেশের সেবা খাত বাণিজ্যিকীকরণ করেছিল; এখন স্বাস্থ্য খাতেও বাণিজ্যিকীকরণ শুরু করেছে।’
অধ্যাপক কামরুল হাসান খান বলেন, যেহেতু সরকারি হাসপাতাল লাভজনক প্রতিষ্ঠান নয়, তাই পরীক্ষার মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে, সেবামূল্য যেন রোগীদের ওপর বোঝা না হয়। বৈকালিক সেবার কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল স্বল্পমূল্যে রোগীদের সেবা দেওয়ার জন্য। অহেতুক ব্যয় বাড়ানো হলে সেই প্রত্যাশা পূরণ হবে না।
বিআরটিসির বাস দিয়ে চালু করা বিশেষায়িত বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) লেনে অনুমতি না নিয়েই চলছে বেসরকারি কোম্পানির কিছু বাস। ঢুকে পড়ছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। উল্টো পথে চলছে মোটরসাইকেল। অন্যদিকে বিআরটিসির মাত্র ১০টি বাস চলাচল করায় সোয়া চার হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প থেকে...
১৫ দিন আগেগাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
২৪ নভেম্বর ২০২৪ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২০ নভেম্বর ২০২৪দেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২০ নভেম্বর ২০২৪